চরিত্রের লোভে চাকরি ছেড়ে দিই

জাহিদ হোসেন শোভনশুভ্র কান্তি দাস
১৯৭৮ সালে ঢাকা লিটল থিয়েটার দিয়ে অভিনয়ের শুরু। এরপর পদাতিক নাট্য সংসদ ও থিয়েটার মমতাজউদদীনে যুক্ত ছিলেন। চার দশকে মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদ হোসেন শোভন। আজ সন্ধ্যায় ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে দেখানো হবে ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ সিনেমা। এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। কাল থেকে ঢাকায় একাধিক প্রেক্ষাগৃহে ও কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। ছবিটিসহ অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
জাহিদ হোসেন শোভন
শুভ্র কান্তি দাস

প্রশ্ন :

কত বছর পর আপনার সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে?

দশ বছর তো হবে। সর্বশেষ অভিনয় করেছিলাম আবদুল্লাহ আল–মামুনের ‘দরিয়া পাড়ের দৌলতি’ সিনেমায়। এরপর মনের মতো কোনো গল্প পাইনি, তাই অভিনয় করা হয়নি।

‘রূপসা নদীর বাঁকে’ সিনেমা শোভন
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

‘রূপসা নদীর বাঁকে’ ছবিতে অভিনয় করতে নিশ্চয় ভালো লাগা কাজ করছে?

আমি মনে করি, তানভীর মোকাম্মেলের মতো পরিচালকের সিনেমায় অভিনয় করাটা একজন অভিনয়শিল্পীর বড় প্রাপ্তি। তিনি যে আমাকে এমন একটি অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছেন, এটাই বড় পাওয়া। আমি অনেক বেশি আপ্লুত। আমি চিন্তাও করিনি, এই বয়সে এসে তাঁর মতো বিখ্যাত একজন পরিচালকের সিনেমায় প্রধানতম চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাব।

জাহিদ হোসেন শোভন
প্রথম আলো

প্রশ্ন :

‘রূপসা নদীর বাঁকে’ ছবির গল্প প্রসঙ্গে যদি একটু ধারণা দিতেন?

এই সিনেমার পটভূমি বাংলাদেশের বামপন্থী আন্দোলন। আমার চরিত্রের নাম মানব রতন মুখোপাধ্যায়, খুলনা অঞ্চলের ত্যাগী নেতা। স্বদেশী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বামপন্থী নেতাদেরও একটা ত্যাগ, কষ্ট, মমত্ববোধ, ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ ছিল; সেটাই তুলে ধরেছেন পরিচালক।

প্রশ্ন :

কোথায় শুটিং করলেন?

এক মাসের বেশি সময় এই ছবির শুটিং করেছি। খুলনার সুন্দরবনের ঘটিয়া ঘাট, কুমিল্লা, সিরাজগঞ্জে বেশি কাজ হয়েছে। করোনা শুরুর আগে আমরা শুটিং শেষ করি। এই ছবিতে কাজ করতে গিয়ে আমার জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে।

জাহিদ হোসেন শোভন
প্রথম আলো

প্রশ্ন :

ঘটনাটি কী?

ছবিটি নিয়ে যখন আলাপ হয়, তখন আমি বৈশাখী টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগের দায়িত্ব ছিলাম। ছবির শুটিংয়ে যেহেতু দীর্ঘদিন সময় দিতে হবে, তাই অফিসে ছুটি চাইলাম, কিন্তু পেলাম না। এটাও ঠিক, একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এত লম্বা সময় ছুটি পাওয়াটা কঠিনও। কিন্তু চরিত্রের লোভে আমি চাকরিটা ছেড়ে দিই। ভালো সিনেমা ও ভালো চরিত্রের জন্য চাকরি ছাড়ার চ্যালেঞ্জটা নিই। এই ছবির শুটিংয়ের পর কিছুদিন বেকারও ছিলাম। আমার সৌভাগ্য একুশে টেলিভিশন এরপর বড় একটা সুযোগ করে দিয়েছে।

‘রূপসা নদীর বাঁকে’ সিনেমার দৃশ্যে
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

সিনেমার জন্য চাকরি ছাড়ার ব্যাপারে আপনার পরিবারের সমর্থন ছিল কি?

এই চরিত্রের প্রস্তাব পেয়ে আমার স্ত্রীকে (দিলশাদ বেগম নার্গিস) গিয়ে বললাম, অসাধারণ একটা চরিত্র পেয়েছি। জীবনে আর এমন সুযোগ পাব কি না জানি না। কিন্তু অফিসে তো ছুটি পাচ্ছি না। আমার স্ত্রী কোনো কিছু চিন্তা না করে সরাসরি বলেছে, তুমি কোনো কিছু চিন্তা না করে ছবিটাই করো। এটা আমাকে সাহস জোগায়। আমার স্ত্রী এ–ও জানতেন, চাকরি না থাকলে আমার আর্থিক কষ্ট হবে। এরপরও কিছু না ভেবে আমাকে সাহস জুগিয়েছে।

‘রূপসা নদীর বাঁকে’ সিনেমা শোভন
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করছেন। বড় হয়ে চাকরির পাশাপাশি অভিনয় করেছেন। স্বপ্নটা কি দেখেছিলেন?

আমি সব সময় স্বপ্ন দেখেছি অভিনেতা হওয়ার। ছোট পর্দা-বড় পর্দা মিলিয়েই অভিনয় করতে চেয়েছি। কিন্তু যতবারই পেশা হিসেবে নেওয়ার চিন্তা করেছি, প্রতিবারই ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছে। আবার চাকরিতে ফিরে এসেছি। এই পেশাতে আমার পরিচিত অনেকেই ভালো করছেন, কিন্তু কেন জানি আমার কনফিডেন্স কম ছিল। শুধু মনে হতো, যদি সফল হতে না পারি, তাহলে বড় ধরনের অর্থনৈতিক কষ্টে পড়তে হবে। তবে আমার স্বপ্ন ও চেতনায় শুধুই অভিনয়।

প্রশ্ন :

টেলিভিশন নাটকের কাজ কম করছেন মনে হয়?

আমি যেহেতু একুশে টেলিভিশনে অনুষ্ঠানপ্রধান হিসেবে আছি, এ ধরনের পদে থেকে নিয়মিত অভিনয় চালিয়ে যাওয়াটা কষ্টসাধ্য। তবে আশা করি, শিগগিরই টেলিভিশন নাটকে নিয়মিত হয়ে যাব। এর মধ্যে অনেক কিছু গুছিয়ে ফেলতে পারব।

জাহিদ হোসেন শোভন
প্রথম আলো

প্রশ্ন :

আপনি একটি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানপ্রধান, একই সঙ্গে আপনার বড় পরিচয় অভিনয়শিল্পী। জানতে চাই, টেলিভিশন নাটকের অবস্থা কেমন?

টেলিভিশন নাটকের মান খারাপও বলব না, ভালোও বলব না। তবে এটা বলতে পারি, নাটকের অবস্থা আগের মতো নেই। অনেকগুলো কারণ আছে। আগের মতো ডেডিকেশন কারও নেই। আগে ভালো একটা শিল্প তৈরি করতে সবাই নাটক করতাম। এখন বাণিজ্যিকীকরণে চাপা পড়ে গেছে শিল্প। ভালো নাটক যে হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। তবে অনেক কম। অবারিত চ্যানেলের কারণে, ব্যয়বহুল কনটেন্টের কারণে দর্শক এখন সরে গেছে হালকা এবং জৌলুশপূর্ণ কনটেন্টে। আগে আমরা গল্পনির্ভর নাটক খুঁজতাম, এখন সবাই চাকচিক্য খোঁজে।