তাঁদের মন্তব্য পড়ে নিজেরও মন খারাপ হয়

পর্দায় আবারও নিয়মিত হচ্ছেন সুমাইয়া শিমু
১৯৯৯ সালে নাটকে অভিষেক। পরের দুই দশকে উপহার দিয়েছেন একাধিক জনপ্রিয় নাটক। বিয়ের পর বছর তিনেকের বিরতি দিয়ে আবার অভিনয়ে ফিরলেন সুমাইয়া শিমু। দীর্ঘ বিরতি এবং নাটকে ফেরার গল্প শোনালেন ছোট পর্দার এই অভিনেত্রী।

প্রশ্ন :

অনেক দিন পর ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন...

হ্যাঁ, তা প্রায় দুই–তিন বছর তো হবেই। সর্বশেষ নাটকটির কাজের কথা এ মুহূর্তে মনে নেই। করোনার শুরুর দিকে একটি ওয়েব সিরিজে কাজ শুরু করেছিলাম। কয়েক দিন শুটিং করার পর সংক্রমণ বেড়ে গেল। শুটিং বন্ধ হয়ে গেল। এরপর কাজটি আর করিনি। পরে বাদই দিয়েছি।

বিয়ের পর বছর তিনেকের বিরতি দিয়ে আবার অভিনয়ে ফিরলেন সুমাইয়া শিমু

প্রশ্ন :

কী নাটকে কাজ করছেন?

‘লাইফ লাইন’। প্রেমের গল্প। আমার বিপরীতে মুশফিক ফারহান। এটি রচনা ও পরিচালনা করছেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। মঙ্গলবার থেকে উত্তরায় শুটিং শুরু হয়েছে। ঈদুল আজহায় প্রচারিত হবে।

‘লাইফ লাইন’ নাটকের দৃশ্যে

প্রশ্ন :

দীর্ঘ সময় পর অভিনয় করছেন।

অনেক দিন পর কাজ করার কারণে একটু এক্সসাইটেড আছি! অনেক দিন পর চেনা জায়গায় ফিরতে পেরে ভালো লাগছে।

অভিনয়ের পাশাপাশি নিজের কাজগুলো চালিয়ে নিতে চান শিমু। ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

এত দিন কাজ করেননি কেন?

বিশেষ কোনো কারণ নেই। তবে অনেকে ভাবেন আমি বিদেশে থাকি। ঘটনা তা নয়। আমি কোনো দিনই বিদেশে ছিলাম না। বিদেশে থাকি ভেবে অনেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। আমারও যোগাযোগ করা হয়নি। নিজ থেকে যোগাযোগ করাটা আমার কাছে অস্বস্তি লাগে। এসব কারণেই সেভাবে কাজ করা হয়নি।

সুমাইয়া শিমু

প্রশ্ন :

এ প্রজন্মের পরিচালকদের সঙ্গে দূরত্ব আছে নাকি?

এটা সত্য, এ প্রজন্মের অনেক পরিচালকের সঙ্গে আমার দূরত্ব আছে। অনেককেই চিনি না, তাঁদের সম্পর্কে জানি না। তাঁরাও হয়তো আমার অবস্থান সম্পর্কে জানেন না। আমি কি করছি, কোথায় আছি, তাঁদের অজানা। তাঁদের সঙ্গে আমার যোগাযোগও সেভাবে নেই।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘শৈল্পিক ও আর্থসামাজিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের টেলিভিশন অভিনয়ে নারীর ভূমিকা’ বিষয়ে পিএইচডি করেছেন এই অভিনেত্রী। ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

এখন তো অনেক পরিচালকই জানবেন আপনি অভিনয়ে ফিরেছেন। নিয়মিত কাজ করবেন?

ক্যামেরার সামনে থাকতে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এখানে নিয়মিত থাকতে চাই। তবে আগের মতো তো আর সব কাজ করা যাবে না। আগে দশটি চিত্রনাট্য হাতে এলে পছন্দ হলে দশটাই করতাম। এ সময়ে এসে আমাকে ভাবতে হবে, কোন চরিত্রে মানাবে, কোনটাতে মানাবে না। এসব বিবেচনা করেই কাজ করতে হবে। তবে অভিনয়ের ক্ষুধা আমার আছে।

সুমাইয়া শিমু

প্রশ্ন :

দীর্ঘদিন পর্দায় নেই। ভক্তরা অনুযোগ করেন না?

দীর্ঘদিন থেকেই তাঁদের কাছ থেকে মন খারাপের প্রতিক্রিয়া পেয়ে আসছি। শুধু ভক্তরাই নয়, পরিচিতজনেরাও নিয়মিত অভিনয় করার তাগিদ দিয়ে আসছেন। ফেসবুক পেজে ছবি পোস্ট করলে প্রতিদিনই ভক্তদের মন্তব্য আসে। বেশির ভাগ ভক্তই পর্দায় না পেয়ে মন খারাপ করে লেখেন, কেন পর্দায় থাকি না, অভিনয় করি না। তাঁদের মন্তব্য পড়ে নিজেরও মন খারাপ হয়।

সুমাইয়া শিমু

প্রশ্ন :

অনেকে মনে করেন বিয়ের কারণে কাজ কমিয়ে দিয়েছেন

একদমই সত্যি নয়। পরিবার থেকে কাজ কমিয়ে দেওয়া বা কাজ না করার বিষয়ে কোনো চাপই নেই। বরং আমার স্বামী আমাকে আরও বেশি উৎসাহিত করে। আমাকে কাজের তাগিদ দেয়। সবাই আমাকে এত এত ভালোবাসেন, কাজের মাধ্যমে এ অর্জনটা ধরে রাখার জন্য বলেন। সে চায় আমি সব সময় অভিনয়টা করি। এই যে এখন শুটিং করছি, সে খুব খুশি।

প্রশ্ন :

বিরতির সময়টা কীভাবে কাটিয়েছেন?

পরিবারকেই সময় দিয়েছি। এ ছাড়া ‘বেটার ফিউচার ফর ওমেন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। যদিও প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন দিক দেখাশোনা করার জন্য কয়েকটি দল আছে। তারপরও মাঝেমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির কিছু কিছু কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়।

‘ওয়াটার’ নাটকে তারিক আনাম খান ও সুমাইয়া শিমু

প্রশ্ন :

‘বেটার ফিউচার ফর ওমেন’ কী নিয়ে কাজ করে?

অভিনয়ের অভিজ্ঞতা, পরিচিতি, পড়াশোনা ও গবেষণা মিলিয়ে মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়েছি। সে জন্যই এ প্রতিষ্ঠান গড়েছি। এটি পুরোপুরি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এখানে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি শিল্পী পরিচিতির কারণে নারীদের অনেকে আমাকে নিজেদের অনেক সমস্যার কথা অকপটে শেয়ার করেন। আমিও তাঁদের সমস্যা মন দিয়ে শুনি, সমাধানের চেষ্টা করি। নারীদের জন্য কর্মসংস্থান এবং নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য দক্ষতা তৈরি করা, নারীদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি, ই–লার্নিং কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সর্বোপরি নারীদের জন্য একটা উন্নত ভবিষ্যৎ তৈরি করাই বেটার ফিউচার ফর ওমেনের মূল কাজ।

ডলবি থিয়েটারের মঞ্চে সুমাইয়া শিমু