‘তিনি কি আমাকে স্বপ্নে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে অর্ডার দিয়েছেন’

‘ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির এক গ্রাহকের করা প্রতারণার মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন অভিনয়শিল্পী তাহসান রহমান খান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ও শবনম ফারিয়া।’ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাহসান ও ঢাকা থেকে মিথিলা প্রথম আলোকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানালেও শবনম ফারিয়ার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হচ্ছিল না। তাঁর ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি বন্ধ ছিল, ফেসবুক ছিল ডিঅ্যাক্টিভেট। রাত পর্যন্ত মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে কোনো সাড়াশব্দ মেলেনি। অবশেষে এই ইস্যুতে শবনম ফারিয়ার সঙ্গে মেসেঞ্জারে যখন প্রথম কথা হয়, তখন ঘড়ির কাঁটায় শুক্রবার রাতে সাড়ে ১১টা। কয়েক দফা তিনি জানান, ইভ্যালি ইস্যুতে মামলা ও তাঁর অবস্থান নিয়ে।

শবনম ফারিয়া
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ। এমনকি মেসেঞ্জার আর হোয়াটসঅ্যাপেও।

সারা দিন ঘুমিয়েছি। দুপুরের পর উঠেছি। ঘুম থেকে উঠেই খবরে দেখলাম মামলা কাহিনি। বিষয়টা ছিল আকাশ থেকে পড়ার মতো। কোনো কিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ত না, হয়ে গেল মামলা। বাসার সবাইও হতভম্ব। তাই কথাবার্তা না বলতেই চুপচাপ ছিলাম। পরে মনে হলো, না, নিজের অবস্থান তো পরিষ্কার করতে হবে। তাই কথা বলছি।

প্রশ্ন :

মামলা নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?

আমি ইভ্যালিতে যুক্ত হয়েছি গত ৫ জুন। যিনি মামলা করেছেন, তিনি উল্লেখ করেছেন, তিনি পণ্য কিনেছেন মে মাসের শুরুতে। তিনি কি আমাকে স্বপ্নে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে অর্ডার দিয়ে দিয়েছেন? তাঁর যে অভিযোগ, সেটাই তো ভিত্তিহীন। কারণ, আমি তখন ওখানে কাজই করতাম না। তিনি আমাকে দেখে কোনোভাবেই উদ্বুদ্ধ হয়ে আসতে পারেন না। দ্বিতীয়ত, আমি ইভ্যালিতে যোগ দেওয়ার পরও কোনোভাবে প্রকাশ্যে এই কোম্পানিকে প্রোমোট করিনি। আমি যুক্ত হওয়ার সময়ই বলেছিলাম, তাদের পণ্য প্রোমোট করতে পারব না। কারণ, পণ্যের প্রোমোশন করে আমি অনেক টাকা পাই। যেমন ইভ্যালি প্রোমোশন করার কথা তাহসান ভাই ও মিথিলা আপুর—তাঁরা এসবের জন্য টাকা পান। তো আমাকে এসব পণ্যের প্রোমোশন করার জন্য টাকা না দিলে কেন করব? তখন তারা আমার শর্তে রাজি হয়। তাই আমি জয়েন করার পরও কিছুই করিনি। আমি ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যখন যমুনা গ্রুপ এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল। পোস্টটা শুধু আমি একা নই, বাংলাদেশের মনে হয় আট কোটি মানুষ শেয়ার করেছিল সেদিন।

প্রশ্ন :

ইভ্যালিতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কী ভেবেছিলেন?

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রথম তিন সুপারস্টারের একজন তাহসান খান, তিনি ইভ্যালির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। এই ইভ্যালি বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের স্পনসর, র‌্যাবের সিনেমার স্পনসর, সরকারের কী একটা অনুষ্ঠানের ৫০০ কোটি টাকা স্পনসর—একটা কোম্পানির ভিত্তি যদি শক্ত না হয়, তাহলে এত এত কিছু কীভাবে করতে পারে! তা ছাড়া আমি যেহেতু তখন মাস্টার্স শুরু করেছিলাম, বিষয় ছিল মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন, এটাও যেহেতু মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনের কাজ, ভাবলাম যদি এখানে জয়েন করি, আমার একটা অভিজ্ঞতা হবে। এটাও বলতে পারেন, পুরো দেশের মানুষ ইভ্যালিকে বিশ্বাস করে যেমন পণ্য অর্ডার করেছে, আমিও তেমনই গেলাম। আমি তো অন্য দেশের বা অন্য গ্রহের মানুষ নই। তবে এটাও ঠিক, আমি প্রকাশ্যে ইভ্যালিকে কখনোই প্রোমোট করিনি। আমি কিন্তু ইভ্যালি থেকে এক পয়সাও বেতন পাইনি।

তাহসান,মিথিলা ও শবনম ফারিয়া
ফাইল ছবি

প্রশ্ন :

কেন?

আমি যোগ দেওয়ার পরই তাদের টাকাপয়সা নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়ে গেল। ওরা আমাকেও টাকা দিতে পারেনি। তাই আমি চাকরিও ছেড়ে দিই। অনেকে জানতে চেয়েছিল, চাকরি ছেড়েছি কী কারণে।

প্রশ্ন :

কী কারণে চাকরি ছেড়েছিলেন?

আমাদের মিডিয়াগুলো জানত যে আমি ওখানে কাজ শুরু করেছি। তখন মিডিয়াগুলো ফোন দিত, ‘আপু আপনার ওখানে কিন্তু আমাদের এত টাকা বকেয়া।’ তখন দেখলাম যে আমি শুধু শুধু এসব চাপ নিচ্ছি। এটা তো আমার নেওয়ার কথাও না। আমার তখন মনে হচ্ছিল, এসবের কারণে আমার অভিনয় ক্যারিয়ারেও প্রভাব পড়ছে, যেটা আমার মূল কাজ। আমি তখন আমার মার্কেটিং বিভাগের আরিফ আর রহমানকে বলে চাকরি ছেড়ে দিই। সব মিলিয়ে আড়াই মাসে কোনো টাকাপয়সা না নিয়েই চাকরি ছেড়ে দিই।

প্রশ্ন :

চাকরি করলেন, বেতন পেলেন না, তারপরও মামলা হলো...

পুরো ব্যাপারটাই তো হয়রানিমূলক। কারণ, তিনি বলছেন, তিনি জিনিস কিনেছেন মে মাসের দুই তারিখে। আমি যোগ দিয়েছি জুন মাসের ৫ তারিখে। আমাকে দেখে তো উদ্বুদ্ধ হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। আমার তো তখন ইভ্যালিকেও প্রোমোট করার কোনো সুযোগ নেই। আর আমি যদি চাকরিও করে থাকি, আমি তো সেই কোম্পানির মালিক নই। একটা কোম্পানির মধ্যে সমস্যা থাকলে, তা তো আমার জানারও সুযোগ নেই। আমি তো ঢোকার পরই ইভ্যালিতে ঝামেলা শুরু হয়। এখন আমাকে শুধুই হেনস্তা করা হচ্ছে, এর বাইরে আর কিছুই নয়। শুধু যে সামাজিকভাবে হেনস্তা হচ্ছি, তা তো নয়, আমি পারিবারিকভাবেও তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বাসার একটা মেয়েকে নিয়ে মামলা হয়েছে, বোঝেন সবার কী অবস্থা হবে! আমার একটা প্রশ্নও আছে।

শবনম ফারিয়া।
ছবি: কোলাজ

প্রশ্ন :

কী সেই প্রশ্ন?

এই মামলা নাকি হয়েছে ৩ অথবা ৪ ডিসেম্বরে। এত দিন তাহলে কেন এটা প্রকাশ্যে এল না? হঠাৎ করে আজ (শুক্রবার) কেন খবরটা প্রকাশ্যে আনা হলো? আরেকটা কথা, আমার কাছে কিন্তু অফিশিয়ালি কেউ কোনো মামলার বিষয় জানায়নি। আমি কিন্তু নিউজ দেখে জানতে পেরেছি।

প্রশ্ন :

আপনার কথামতো, আপনাকে হেনস্তা করা হচ্ছে। যে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কারণে এমনটা ঘটছে, তাদের বিরুদ্ধে এর প্রতিকারে আপনি কিছু করবেন?

আমি ব্যাপারটা জেনেছি দুপুরের পর। খবরটা জানার পর পরিবারও সময় নিচ্ছে, কী করবে ভাবছে। সবাই মিলে আমরা দেখলাম, পুরো ব্যাপারটাই হেনস্তাকর। যেহেতু এই মামলায় তিনি যে অভিযোগ তুলেছেন, সেটার সঙ্গে আমি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই, সে হিসেবে শুরুতেই এটা ইনভ্যালিড অ্যালিগেশন। যেহেতু ইনভ্যালিড অ্যালিগেশন, সেহেতু কী করব, সেটাও ভাবছি।

শবনম ফারিয়া
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনার সম্মানহানির কথা বলছিলেন, তাই বললাম কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না...

আমার করার থাকতে পারে, ওই লোককে স্যু করতে পারি। সামাজিক ও পারিবারিক সম্মানহানি করার কারণে। মামলার খবরে আমার মা তো হঠাৎ করেই নার্ভাস হয়ে গেছেন। কী, কেস হইছে মানে কী! আমরা তো কেস, মামলা এসব শব্দের সঙ্গে পরিচিত নই। আমরা তো গতানুগতিক মধ্যবিত্ত পরিবার। কেস, মামলা মানে তো বিশাল ব্যাপার। তাই সবাই খুব চিন্তিত। এটা অনেক সিরিয়াস একটা ব্যাপার। হালকা কিছু হলে আমিই সামলাতে পারতাম। যখন এটা গুরুতর বিষয়, তখন এটা আমার মা ও পরিবারের অন্যরা মিলে ভাবছেন। তাঁরা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তাই-ই হবে আরকি।