দেশের মধ্যে ‘মিনি হানিমুন’ সেরে নেব

অপর্ণা ঘোষফেসবুক থেকে
সংসারজীবন শুরু করলেন টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী অপর্ণা ঘোষ। এই মুহূর্তে তিনি আছেন চট্টগ্রামে শ্বশুরবাড়িতে। সেখান থেকে শনিবার দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হলো তাঁর। জানালেন মধুচন্দ্রিমার পরিকল্পনা ও নতুন কাজ শুরু নিয়ে

প্রশ্ন :

মাত্রই তো বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো। এখন আছেন শ্বশুরবাড়িতে। নতুন কোনো উপলব্ধি হচ্ছে কি?

আমি তো বাবা-মায়ের সঙ্গে ছিলাম। একটা সময় অভিনয়ের টানে তাঁদের ছেড়ে ঢাকা শহরে একা থেকেছি। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে ছেড়ে যেদিন চলে আসছিলাম, অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, কিছু একটা ফেলে চলে আসছি। একটু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে আরকি।

অপর্ণা ঘোষ ও সত্রাজিৎ দত্ত
চিত্রগল্প’র ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত

প্রশ্ন :

শ্বশুরবাড়ির সবাই আপনাকে কীভাবে গ্রহণ করেছেন?

আমার শ্বশুরবাড়ির সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, সবাই খুবই খোলামনের আধুনিক চিন্তার মানুষ। আমি যেমনটা চাই, ঠিক সেভাবেই গ্রহণ করছে। এটা আমার জন্য অনেক বড় সাপোর্ট। আমার শ্বশুর আমাকে নিয়ে এতটা গর্বিত, একটু পরপর যখনই কেউ ফোন করেন, তিনি আমারই প্রশংসা করেন। সবাই যখন বলছিল, এই অপর্ণা কি অভিনয় করে সেই অপর্ণা? আমার শ্বশুর তখন আরও বেশ উচ্ছ্বাস নিয়ে বলছিলেন। আমার কাছেও ব্যাপারগুলো খুব ইন্টারেস্টিং লাগছিল।

প্রশ্ন :

আপনার বিয়েটা খুব তাড়াহুড়ার মধ্যে হয়ে গেল কি?

আমার বর তো জাপানে চাকরি করত। ছুটি মিলছিল না, করোনার কারণে বাংলাদেশে আসাটাও কঠিন ছিল। বাগদানের আগের দিন দেশে আসে। ২১ ডিসেম্বর আবার তাকে চলে যেতে হবে।

অপর্ণা ঘোষ
ফেসবুক

প্রশ্ন :

করোনার মধ্যেও কেউ কেউ মধুচন্দ্রিমায় যাচ্ছেন। আপনার কি তেমন পরিকল্পনা আছে?

আমাদেরও পরিকল্পনা ছিল। মালদ্বীপে হানিমুনে যাব ভাবছিলাম। কিন্তু করোনা টেস্ট করো, ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকো, এত সব করে আর যেতে চাইনি। দেশের মধ্যে মিনি হানিমুন সেরে নেব। ১৫ ডিসেম্বর ৫ দিনের জন্য যাচ্ছি। পৃথিবী স্বাভাবিক হলে এবং বরের ছুটি ম্যানেজ হলে তখন মালদ্বীপে যাব।

প্রশ্ন :

দুজনের প্রথম কথা কবে হয়?

এ বছরের ২০ মার্চ প্রথম কথা হয়। আমরা বন্ধুরা মিলে গ্রুপে কথা বলছিলাম, তখন সত্রাজিৎ ভিডিও কলে ঢুকে পড়ে।

প্রশ্ন :

সত্রাজিৎ দত্তের কোন বিষয়টা আপনাকে মুগ্ধ করেছে? বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন ভাবনা কাজ করেছে?

আমি ডিটারমাইন্ড ছিলাম, এ বছরেই বিয়ে করব। করোনার মধ্যে উপলব্ধি হয়, আই নিড আ পার্টনার। বন্ধুরা যখন সত্রাজিতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়, একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, “বিয়ে করবা কবে?” আমি বলেছি, ও রকম করে কোনো ছেলেকে পছন্দ হয়নি। কথা বলতে বলতে একসময় বুঝতে পারলাম, ওরও মাইন্ডসেট এ রকম ছিল, হি ইজ অলসো ফাইন্ডিং আ পার্টনার। তার প্রতি মুগ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল, খুবই বিনয়ী। সত্রাজিৎ খুবই অকপটে বলে, ‘আমি আসলে খুব কষ্ট করে বড় হওয়া মানুষ।’ বড় হওয়ার পর এটা অনেকে ভুলে যায়। শিকড়ের কথা মনে রাখতে চায় না। ওর কাছ থেকে আরও ভালোভাবে শিখছি, সব সময় বাবা-মাকে প্রাধান্য দেওয়া। সে বলেছিল, সম্পর্কে কত ঝুটঝামেলা থাকে। এত ঝুটঝামেলার পরও বাবা-মায়েরা তো সম্পর্ক ছেড়ে পালিয়ে যান না। দুই পক্ষ কম্প্রোমাইজ করে জীবনটাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ঝামেলা থাকবে, সমাধানের চেষ্টা না করে ভাঙন, এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। সে-ই বলেছে, পৃথিবীর সব সম্পর্কেই জটিলতা থাকে। এই কথা শোনার পর মনে হয়েছে, হি ইজ আ রিয়েল পারসন। যে ধরনের মানুষ আমি মনে মনে খুঁজছিলাম। একপর্যায়ে বলা হলো, চলো বিয়ে করে ফেলি।

অপর্ণা ঘোষ
ফেসবুক

প্রশ্ন :

চলো বিয়ে করি কথাটা কে কাকে প্রথম বলেছিলেন?

ও-ই বলেছিল, ‘আর কোনো কথা নয়, আমরা বিয়েই করব। বিয়ের পরই নিজেদের ভালোভাবে জানার চেষ্টা করব।’

প্রশ্ন :

বরের সঙ্গে কোন বিষয়টাতে আপনার অমিল?

ও ঘুমায় ঠিকমতো, আমি ঘুমাই বেশি। ও একটু তাড়াতাড়ি ঘুমায়, তাড়াতাড়ি ওঠে। আর আমি দেরিতে ঘুমাই, দেরিতে উঠি। ওর সবকিছুই নিয়মমাফিক। খাওয়াদাওয়া নিয়েও খুব সচেতন। আর আমি তো যা পাই সব খাই। ও ভোর পাঁচটায় ওঠে ব্যায়াম করে, এরপর সময়মতো অফিসে যায়। আমি ১০টায় ওঠে ভাবি, ইশ্‌ আজ যদি শুটিং না যাওয়া লাগত। যদি প্যাকআপ হতো! (হাসি)

প্রশ্ন :

শুটিংয়ে ফিরবেন কবে?

২১ তারিখে সত্রাজিৎ জাপানে চলে যাবে। পরদিন ২২ ডিসেম্বর কাজে ফিরব। কক্সবাজারে শুটিং নাটকের। টানা কাজ চলবে। তবে এখন আর মাসের বেশির ভাগ সময় কাজ করা হবে না। দেখে–শুনে–বুঝে করব। সবার সব কাজ করতে আমার ভালোও লাগত না।

অপর্ণা ঘোষ
চিত্রগল্প’র ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত

প্রশ্ন :

‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’ ছবির কাজ করছিলেন। অগ্রগতি কত দূর এবং নতুন ছবির ব্যাপারে আলাপ হয়েছে কী?

ছবিটির আর শুধু এক লটের কাজ বাকি। জানুয়ারিতে শেষ করব। কারও সঙ্গে নতুন ছবি নিয়ে কথা হয়নি। এই বছর আমি আসলে প্রেম নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। জীবনের এই পাট চুকিয়ে ফেললাম তো। আমি আসলে করোনার সময়টা প্রেমে কাজে লাগিয়েছি।

প্রশ্ন :

কাজের ক্ষেত্রে আপনার প্রাধান্য কিসে থাকে?

আমার কাছে বরাবরই পরিচালক মেটার করে। এরপর গল্প।

অপর্ণা ঘোষ
ফেসবুক
আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

অনেকে তো আবার সহশিল্পী নিয়ে ভাবেন।

সহশিল্পীও মেটার করে, তবে ওই দুটির চেয়ে মোটেও বেশি প্রাধান্য না। প্রকৃত শিল্পী হলেই হয়।

প্রশ্ন :

কোন কোন পরিচালকে আপনার আস্থা সবচেয়ে বেশি?

চোখ বন্ধ করে আমি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ইফতেখার ফাহ্‌মী, শাফায়েত মানসুর, আশফাক নিপুণ, তানিম নুর ও আশিকুর রহমানের ওপর আস্থা রাখতে পারি। তাঁদের সঙ্গে আমার অনেক কাজ করা হয়েছে। কোনো কাজ শুটিং শেষে অসন্তুষ্টি নিয়ে বাসায় ফিরেছি বলে মনে হয় না। এর বাইরে কারও সঙ্গে কাজ করতে গেলে আমি আগে গল্প শুনতে চাই।

‘সুতপার ঠিকানা’ ছবিতে অপর্ণা ঘোষ