নতুন গান বাঁধার মজাটা ঢাকা থেকেই পেয়েছি

গায়ক ও সংগীত পরিচালক অর্ণবের কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত শুনেছেন অনেকেই। ভিন্ন রকম উপস্থাপনে সেই গানগুলো পেয়েছিল শ্রোতাপ্রিয়তা। কবিগুরুর ১৬০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বন্ধুরা মিলে নতুন করে ‘আমি মারের সাগর পাড়ি দেব’ গানটি করেছেন। আজ প্রকাশিত হবে এ গান। সেই গান, সংগীতজীবন ও পারিবারিক জীবন নিয়ে কথা হলো অর্ণব-এর সঙ্গে।
অর্ণব

প্রশ্ন :

আমাদের দেশে রবীন্দ্রসংগীতচর্চায় নিয়মের বাধ্যবাধকতা আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে আপনি অনেক সাহস করেছিলেন। কীভাবে?

শান্তিনিকেতনের পরিবেশটাই আমাকে রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে অন্যভাবে ভাবতে সাহায্য করেছে। শান্তিনিকেতন থেকে ঢাকায় এলে দেখতাম, আমার বন্ধুরা গিটার বাজিয়ে গান গাইছে। তাদের সঙ্গে আমার গান শেখাটা কীভাবে রিলেট করব? তখন থেকেই শুরু হয়েছে। এভাবে গিটার ও কিবোর্ড বাজিয়ে গান করলে হয়তো তারা রিলেট করতে পারবে। ঢাকার বন্ধুদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে গিয়েই ইচ্ছেশক্তিটা এসেছিল।

প্রশ্ন :

অন্য রকম মিউজিকে রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন?

আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, এখন পর্যন্ত কেউ কিছু বলেনি। শান্তিনিকেতনে যাঁরাই পড়াশোনা করেন, তাঁদের একটা মাত্রাজ্ঞান তো তৈরি হয়। সেই জ্ঞান থেকে যতই আধুনিক মিউজিক করি না কেন, কথা ও সুর ঠিকঠাক থাকে। সবার মধ্যে এই ভাবনাও থাকে, এই গান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা, সুর করা—তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমাদের মতো গাইতে পারি।

গাইছেন অর্ণব
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে তো আরও কাজ করতে পারতেন?

(হাসি) আমি পুরা বিষয় নিয়েই কনফিউশনে আছি তো। সংগীতাঙ্গনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন একটা করে গান প্রকাশিত হচ্ছে। আগে এক ভলিউমে অনেকগুলো গান প্রকাশ করতাম। তবে নতুন সংগীতায়োজনে রবীন্দ্রসংগীত এখনো করছি। আমি তো দেখছি, আমার থেকে রবীন্দ্রসংগীত ভালো গায় সুনিধি (অর্ণবের স্ত্রী সুনিধি নায়েক)।

প্রশ্ন :

তাঁর জন্য নতুন গান করছেন?

টুকটুক করে করছি। বছরের শেষ দিকে হয়তো সুনিধির অ্যালবাম প্রকাশ করব। আমরা তো একটা একটা করে গান করে ইউটিউবে দিয়ে দিই, তাই অ্যালবামের জন্য গান জমানো হচ্ছিল না।

গান, আড্ডা আর খুনসুটিতে চলছে অর্ণব–সুনিধির সংসার
ছবি : প্রথম আলো

প্রশ্ন :

নতুন গান যে প্রকাশ করছেন, সেসব নিয়ে কিছু বলুন।

শান্তিনিকেতনের একজন শিক্ষক আছেন, অভীক ঘোষ। তাঁর ফেসবুক পেজে ‘আমি মারের সাগর পাড়ি দেব’ গানটি প্রকাশিত হবে। তিনি আমাকে গানটা গেয়ে পাঠাতে বললেন। বললেন, সবাই তো লকডাউনে বসে আছি, চল সবাই মিলে গান করি। ওটার মধ্যে আমি একটু মিউজিক করে দিয়েছি, গেয়েছিও। শান্তিনিকেতনের সাবেক অনেক শিক্ষার্থীও গানটা গেয়েছেন।

প্রশ্ন :

শান্তিনিকেতনে তরুণদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের প্রভাবটা কেমন দেখেছিলেন?

রবীন্দ্রনাথের গান নিয়েই আমরা বড় হয়েছি। আমরা হিন্দি শুনিনি, ইংরেজিও শুনিনি। কর্তৃপক্ষ আমাদের অ্যালাউ করেনি। হয় ক্ল্যাসিক্যাল, লোকগান, নয়তো রবীন্দ্রসংগীত শোনো—এ ছাড়া আমাদের কোনো উপায়ই ছিল না। বাই ডিফল্ট, রবীন্দ্রনাথের গান আমাদের জীবনের অংশ হয়ে যায়। আমাদের পড়াশোনা, জীবনযাপন, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটির মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আমি এখনো যখন যাই, দেখি তরুণেরাও রবীন্দ্রনাথের গান গাইছে, জীবন যাপন করছে, পরিবেশটাই আসলে এমন। ইন্টারনেটের সুযোগ–সুবিধা না থাকায় বাইরের দেশের মিউজিক শোনার সুযোগ কম পেয়েছি। এখনকার তরুণদের নানা রকম অপশন আছে। তবে আমি মনে করি, সারা পৃথিবীতে কী হচ্ছে না হচ্ছে, সেসবও জানা দরকার। এতে নিজেকে আরও ভালো করে বোঝা যায়।

শায়ান চৌধুরী অর্ণব
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

প্রশ্ন :

চিত্রকলা নিয়ে পড়তে গিয়ে কণ্ঠশিল্পী হয়ে গেলেন। কার অনুপ্রেরণা ছিল?

বাবা–মা দুজনেই তো ছবি আঁকতেন। শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় পেইন্টিংয়ের পাশাপাশি গান ও নাচের পরীক্ষায়ও আমাদের পাস করতে হতো। ট্রেনিং একটা তো ছিল। পেইন্টিং নিয়ে কাজের ফাঁকে ফাঁকে আসলে মিউজিকটা আমাকে টানত। মাঝেমধ্যে যখন থেকে ঢাকায় আসতাম, দেখতাম সিদ্ধেশ্বরীর বাসার পাশে সোলসের প্র্যাকটিস চলত। আইয়ুব বাচ্চু ভাই বাজাতেন। এই ব্যাপারগুলো আমাকে খুব টানত। শান্তিনিকেতনে এই সুযোগগুলো ছিল না। নতুন গান বাঁধার মজাটা ঢাকা থেকেই পেয়েছি। আমার ঢাকার বন্ধুবান্ধব নতুন গান লিখছে, সুর করছে, তাদের দেখাদেখি আমিও শুরু করি। তবে সে সময় শান্তিনিকেতনের কাউকে এসব ভয়ে দেখাতাম না।

গান ও গানের বাইরে অর্ণব কেমন, তা-ই উঠে আসবে অর্ণব: আধখানা ভালো ছেলে আধা মস্তান–এ
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

সোলস ও এলআরবি ছাড়া আর কেউ অনুপ্রেরণা দিয়েছে কি?

শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় কবীর সুমনের ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। তার আগে অবশ্য মহীনের ঘোড়াগুলি, ঢাকায় আজম খান, মাইলস, জেমস, এলআরবির গান শুনে মনে হয়েছে, নতুন একটা সাউন্ড। তখনই মনে হয়েছে, আমিও আমার মতো করে নতুন কিছু তৈরি করি। ঢাকায় আসার পরও কখনো ভাবিনি, মিউজিক করব। একটা বিজ্ঞাপন সংস্থায় ভিজ্যুয়ালাইজার হিসেবে চাকরি শুরু করলাম। এরপর আরেকটা এজেন্সিতে ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর। মিউজিকও পাশাপাশি চালিয়ে নিচ্ছিলাম। তারপর মনে হলো, মিউজিকই বেশি মজা।

অর্ণব–সুনিধি
ছবি : প্রথম আলো

প্রশ্ন :

সংসার কেমন চলছে?

দারুণ। লকডাউনের কারণে শ্বশুরবাড়ি যেতে পারলাম না। সংসার আর গান নিয়েই কাটছে।