'নায়িকাদের ভালো বন্ধু হতে চেয়েছি'

ফেরদৌস। ছবি: সংগৃহীত
ফেরদৌস। ছবি: সংগৃহীত
>

জন্মদিনে বরাবরই শুভেচ্ছায় সিক্ত হন। টেলিভিশন চ্যানেলের সরাসরি আয়োজনেও অংশ নেন। এবার কিছুই ছিল না। ইচ্ছে ছিল এবার সবাইকে নিয়ে একটা পার্টি দেবেন। করোনায় তা হয়নি। রোববার দুপুরে জন্মদিন উপলক্ষে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় 'হঠাৎ বৃষ্টি'খ্যাত নায়ক ফেরদৌসের সঙ্গে।

শুভ জন্মদিন। কীভাবে শুরু হলো এবারের জন্মদিন?
ধন্যবাদ। লকডাউনে লম্বা সময় ধরে বাসায় আছি। এই সুযোগ দেখলাম, বাবার জন্মদিন নিয়ে মেয়েদের ব্যস্ততা। রাতেই বড় মেয়ে নুজহাত একটা কেক বানাল। শাশুড়ি পায়েস বানিয়ে পাঠিয়েছেন। দিনের বেলায় বড় মেয়ে আবার ব্রাউনি, পিৎজা বানানো নিয়ে ব্যস্ত। এসব দেখে আমি আর আমার স্ত্রী তানিয়া বলাবলি করছিলাম, নুজাহাত কি তাহলে বড় হয়ে গেল।

মেয়ে বড় হচ্ছে, আপনার বয়সও তো বাড়ছে।
না না, আমার তো বয়স বাড়বে না। আমার ছোট মেয়ে নামিরা কিছুদিন আগে আমাকে বলেছে, বাবার বয়স ৩২। আমার আম্মা বলে ৩০। আমিও তেমনই বলি। তবে মনের দিক থেকে আরও কম।(হাসি)

এবারের জন্মদিন নিয়ে বিশেষ আয়োজনের কথা বলেছিলেন। কেন?
বহুদিন সবাইকে একসঙ্গে করে কোনো পার্টি দেওয়া হয় না। আলমগীর ভাই (বরেণ্য অভিনয়শিল্পী) প্রায়ই দুষ্টুমি করে বলেন, কী ফেরদৌস, অনেক দিন কোনো পার্টি দাও না। ভাবলাম, সবাইকে নিয়ে এবারের জন্মদিন পালন করব। সত্যি কথা বলতে, পুরো পৃথিবীর পরিস্থিতি এমন, আমার অঙ্গনের অনেকেও ভালো নেই। বাধ্য হয়ে বাদ দিয়েছি। জন্মদিন উদযাপন না করে টাকা আমার অঙ্গনের কিছু অসচ্ছল ও অসহায় মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়াই উত্তম মনে করেছি।

দুই মেয়ে নুজহাত ও নামিরার সঙ্গে বাবা ফেরদৌস। ছবি: সংগৃহীত
দুই মেয়ে নুজহাত ও নামিরার সঙ্গে বাবা ফেরদৌস। ছবি: সংগৃহীত

জন্মদিনে নাহয় অসহায়দের পাশে থাকলেন। করোনার এই দীর্ঘ সংকটেও কী তাদের পাশে থাকার সুযোগ হয়েছে?
আমার সামর্থ্য যা ছিল, তা নিয়ে আমার অঙ্গনের কিছু মানুষের পাশে ছিলাম, এখনো আছি, আগামী দিনেও থাকব। পরিচিত অনেককে বলেও সাহায্য এনে দিয়েছি। শুনেছি সরকারিভাবেও একটা বড় সহযোগিতা চলচ্চিত্রের অসহায় ও অসচ্ছল মানুষের জন্য আসছে। সুন্দরভাবে যদি বণ্টন করতে পারি, তাহলেই ভালো লাগবে। কারও একক প্রচেষ্টায় নয়, চলচ্চিত্রের সবাই মিলে এই উদ্যোগ নিয়েছে।

আপনি কীভাবে এই সহযোগিতা করার কথা বলতে চান?
প্রথমত, আমি এই দুস্থ শব্দটার ঘোর বিরোধী। আমরা বলতে পারি, শিল্পী-কলাকুশলীদের সাময়িক অসুবিধায় পাশে থাকা। চলচ্চিত্রের সংগঠনগুলোর অসহায় ও অসচ্ছল সবার বাসার ঠিকানা জানেন। সবার বাসায় নীরবে সহযোগিতা বা উপহার পাঠিয়ে দিলেই হয়। যে মানুষটাকে সহায়তা করছি, তার ছবিসহ ফেসবুকে কিংবা সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারটা খুব বাজে বিষয়। এটা তাঁকে অপমান করাও।

এতে তো অন্যরা উৎসাহীও হতে পারেন?
এটা খোঁড়া অজুহাত। আমাদের প্রত্যেকেরই একটা বলয় আছে। আমার একার পক্ষে তো চলচ্চিত্র জগতের এক হাজার মানুষের পাশে থাকা সম্ভব নয়। আমার দায়িত্ব হচ্ছে পাশের মানুষকে ভালো রাখা। আমরা ৫০ অথবা ৩০ জন শিল্পী যদি তাঁর বলয়ের লোকজনের পাশে থাকি, তাহলে সমস্যা থাকবে না। আমাকে অনেকে বলেছে, সহযোগিতা করার বিষয়টি ফেসবুকে দেব? আমি সরাসরি বলেছি 'না'।

ফেরদৌসের এবারের জন্মদিনে সবার আগে ফোন করে পূর্ণিমা বলেন, `আমি জানি এরপর ফোন করে তোমাকে পাব না।` ছবি: সংগৃহীত
ফেরদৌসের এবারের জন্মদিনে সবার আগে ফোন করে পূর্ণিমা বলেন, `আমি জানি এরপর ফোন করে তোমাকে পাব না।` ছবি: সংগৃহীত

জন্মদিনে জানতে চাই, কী হতে চেয়েছিলেন?
বাবা-মায়ের কাছে সুসন্তান, বিয়ের পর স্ত্রীর কাছে ভালো স্বামী আর মেয়েদের কাছে ভালো বাবা।

নায়িকাদের কাছে কি হতে চেয়েছিলেন?
নায়িকাদের ভালো বন্ধু হতে চেয়েছি, পেরেছিও।

অনেকের সঙ্গে তো অভিনয় করেছেন। কত নায়িকা আপনার ভালো বন্ধু?
৬০-৭০ জন নায়িকা যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, সবাই আমার ভালো বন্ধু। কাজের বাইরেও তাঁদের সঙ্গে আমার সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

এত নায়িকার সঙ্গে বন্ধুত্ব রক্ষা করেছেন কীভাবে?
বন্ধুত্ব রক্ষার জন্য সুন্দর মনের দরকার হয়, মমতার হাত দরকার হয়, পাশে থাকার মানসিকতা থাকতে হয়। পাশে থেকে বন্ধুটাকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস ও অনুপ্রেরণা দিতে হয়—এভাবেই বন্ধুত্ব তৈরি হয়। নায়িকাদের ক্ষেত্রেও এসব মেনে চলেছি।

আপনার স্ত্রী নায়িকাদের সঙ্গে আপনার বন্ধুত্বকে কীভাবে দেখেন?
আমরা দুজন দুজনের কাছে সব সময় ট্রান্সপারেন্ট থেকেছি। দুজনের পেশাগত জায়গায় একদম পরিষ্কার। দুজনের বিয়ের মূলমন্ত্রই ছিল, দুজনের কাছ থেকে দুজনে কোনো কিছু লুকাব না। জন্মদিনের শুরুতে রাত ১১টায় পূর্ণিমা ফোন করেছে। বলল, আমি জানি এরপর ফোন করে তোমাকে পাব না। আমার বউ পাশে ছিল, হাসছিল। ও বলছিল, বাহবা, পূর্ণিমার কি বুদ্ধি! এটা বললাম এই কারণে, আমার স্ত্রীও আমার কলিগ ও বন্ধুদের সম্পর্কে ভালো জানেন। মৌসুমি-সানি ভাই বলেছে কী খাবার পাঠাব? পপি প্রায়ই বলে, আমি তোমার মতো একটা হাজবেন্ড চাই। আমার বউকেও এই কথা বলে। শাবনূরের সঙ্গেও আমার চমৎকার বন্ধুত্ব। এসব নিয়ে আমরা আসলে কখনোই ভাবি না। বন্ধুত্বের জায়গায় বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বটাকে এত সুন্দরভাবে মেনটেইন করেছি, কোনো নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা কখনোই মাথায় আসেনি।

মৌসুমী, শাবনূর, পপি ও পূর্ণিমা—এই চারজনের সঙ্গেই রয়েছে ফেরদৌসের চমৎকার বন্ধুত্ব ও পারিবারিক সম্পর্ক। ছবি: সংগৃহীত
মৌসুমী, শাবনূর, পপি ও পূর্ণিমা—এই চারজনের সঙ্গেই রয়েছে ফেরদৌসের চমৎকার বন্ধুত্ব ও পারিবারিক সম্পর্ক। ছবি: সংগৃহীত

কখনোই কি নায়িকাদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক নিয়ে মনোমলিন্য হয়নি?
মনোমালিন্য হয় অন্য অনেক কিছু নিয়ে, তবে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে নয়। বন্ধুত্ব ও প্রেম দুটি একদমই আলাদা জিনিস। এই বিষয়গুলো আমার বউ খুব ভালো জানে।

অনেক নায়িকার সঙ্গে বন্ধুত্ব কথা বলছিলেন। নায়কদের সঙ্গে তেমন বন্ধুত্ব হয়নি?
রিয়াজের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বটা এমনই, একে অপরকে 'মামা' বলে ডাকি। রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গেও আমার দারুণ বন্ধুত্ব ছিল। আলমগীর ভাই, ফারুক ভাই থেকে শুরু করে আমিন খান, ওমর সানি, শাকিব খান, ইমন, নীরব—এমনকি এখনকার সিয়ামও আমার ভালো বন্ধু। দেশের বাইরে প্রসেনজিৎ, ঋতুপর্ণা, জিৎ ও দেবের সঙ্গে আমার চমৎকার বন্ধুত্ব।

আপনি বন্ধুত্বের সম্পর্কটাকে কীভাবে ব্যাখা করেন?
বন্ধু এমন, যাঁর সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই, নেই রক্তের সম্পর্ক। কিন্তু অদ্ভুত একটা আত্মার সম্পর্ক আছে, দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না শুধু অনুভব করা যায়—এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। আমার জীবনে বন্ধু ভাগ্যটাও সবচেয়ে ভালো।