নিজেকে নিজে দেখা তো অনেক পেইনফুল

আজ চরকিতে মুক্তি পাচ্ছে আবরার আতহারের মিউজিক্যাল অরিজিনাল ‘আধখানা ভালো ছেলে, আধা মস্তান’। এ চলচ্চিত্রের বিষয় গায়ক ও সংগীত পরিচালক অর্ণব। ছবিতে থাকবে অর্ণবের গাওয়া জনপ্রিয় ১২টি গানের নতুন সংগীতায়োজন। সেই সঙ্গে জানা যাবে অর্ণবের জীবনের কিছু অজানা গল্প, যা শোনাবেন খোদ অর্ণব ও তাঁর কাছের মানুষেরা। আধখানা ভালো ছেলে আধা মস্তান সূত্রে কথা হলো অর্ণবের সঙ্গে।

গায়ক ও সংগীত পরিচালক অর্ণব

প্রশ্ন :

ঢাকায় কবে ফিরবেন?

আমি তো ঢাকায়। চার দিন হয় এসেছি। সোমবার করোনার টিকা নিলাম। টিকা নেওয়ার পর তো আমার কাহিল অবস্থা। জ্বর-ঠান্ডা।

অর্ণব

প্রশ্ন :

ভারতে ঘুরতে গিয়েছিলেন?

আমরা সড়কপথে কলকাতায় গিয়েছিলাম। সুনিধির (অর্ণবের স্ত্রী) মায়ের মৃত্যুর এক বছর হয়েছিল, তাই যাওয়া। তারপর লকডাউনে আটকে যাই। এদিকে ফ্লাইট তো বন্ধ। লকডাউনে আসতে হলে ১৪ দিন হোটেলে কোয়ারেন্টিন করতে হয়। কোন হোটেলে রাখবে, আবার কী হবে—এসব ভেবে তাই আর এলাম না। ফ্লাইট চালুর পর এসেছি।

সুনিধি ও অর্ণব
ছবি : প্রথম আলো

প্রশ্ন :

ঘোরাঘুরি করেছেন দেখলাম।

দার্জিলিং, লামাহাট্টাতে গেলাম। আগেও সুনিধি, বন্ধুবান্ধব, কাজিনরাসহ গিয়েছিলাম। এবার শুধু আমরা দুজন ঘুরতে গেছি। করোনার এই সময়ে ভারত কিন্তু ঘোরাঘুরি অনেক সিস্টেমেটিক করে ফেলেছে।

প্রশ্ন :

অবশেষে আপনাকে চলচ্চিত্রে দেখা যাবে, কেমন লাগছে?

সিনেমা রিলিজের খবর শুনে আমি অনেক টেনশনে আছি।

প্রশ্ন :

টেনশন কেন?

নিজেকে নিজে দেখা তো অনেক পেইনফুল। তবে দর্শক ও ভক্তদের কিন্তু মজার লাগবে। প্রথমে ভাবছিলাম, স্ক্রিপ্টেড কিছু করব, মুখস্থ করে নেব; এরপর যা বলার বলব। পরে ভাবলাম, এতে ন্যাচারাল ফ্লো আর থাকবে না। তবে আমাদের টপিক ছিল, কী কী নিয়ে কথা বলব। যতটা সাবলীল থাকা যায় আরকি। এই চলচ্চিত্রে আমাকে খুঁজে পাবেন সবাই।

প্রশ্ন :

নিজের চরিত্রে অভিনয় করতে কেমন লাগল?

অভিনয় তো করিনি। আমি যা, তাই-ই ছিলাম। অভিনয় তো তখনই হতো, যদি ঠিকঠাক হয়ে স্ক্রিপ্ট দেখে ডায়ালগ বলতাম (হাসি)। আর ওটা যদি করতে পারতাম, আমি তো আর গানই গাইতাম না।

প্রশ্ন :

অভিনয় কি কখনোই করেননি?

স্কুলে ক্লাস টেনে থাকতে একবার বিসর্জন নাটকে অভিনয় করেছিলাম। জয়সিংহ হয়েছিলাম। এরপর আমি আর নেই।

প্রশ্ন :

আর অভিনয়ের প্রস্তাব পাননি?

অনেক আসছে, করিনি। সিনেমা যদি কেউ করতে বলে, আমার যদি মনে হয় করার মতো, তাহলে অবশ্যই প্রস্তুতির দরকার আছে। এক–দুই দিনে সবাই যেভাবে মুখস্থ করে ফেলে, সেভাবে আমি করতে পারব না। আমাকে যখন প্লেব্যাক করার জন্য ডাকে, তখনো সময় নিই। আগে আমাকে গান পাঠায়, এরপর নিজের মধ্যে তুলি। পরে পারফর্ম করতে সহজ হয়। গানটা নিজের করে নিতে পারি। সে রকমই, যদি অভিনয়ে প্রস্তাব আসে, আমাকে সময় দিতে হবে। ওয়ার্কশপ করাতে হবে।

প্রশ্ন :

প্রথম সিনেমা মুক্তির পর নিশ্চয় প্রস্তাব বাড়বে?

এটা দেখার পর মনে হয় না আর অভিনয়ের প্রস্তাব আসবে। (হাসি)। গান করি, ছবি আঁকি, এটা ঠিক আছে। তবে যদি ইন্টারেস্টিং কিছু হয়, আমার চরিত্রের সঙ্গে যায়, অবশ্যই ট্রাই করব।

গাইছেন অর্ণব
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

মানুষ তো ভালো–মন্দ মিলিয়েই। এই চলচ্চিত্রে আপনার কোন দিকটা তুলে ধরা হয়েছে?

ডুয়ালিটি তো প্রত্যক মানুষের কমবেশি আছে। সবাই আমরা কিন্তু একটু ভালো, একটু খারাপ হই। আমার দ্বৈত সত্তা আরও বেশি আছে। কারণ, লাইফের ২০ বছর ছবি আঁকা আর ২০ বছর মিউজিক নিয়ে পড়েছি। দোটানা বেশি ছিল। আমার পরিবারের দিকে তাকালে একই অবস্থা, আম্মু মুসলিম, আব্বু হিন্দু। যদিও এসব নিয়ে খুব একটা সমস্যা কখনোই ছিল না। আর মস্তানি বলতে, মস্তানি তো আমার নিজের সঙ্গে নিজের।

প্রশ্ন :

সেই মস্তানি কেমন?

মস্তানি মানে, যেসব করেছি ভালো করিনি, ফর শিওর। থাকে না, আমি সব সময় নিজের স্বাধীনতা নিয়ে চলেছি। আমাকে তো ছোটবেলায় শান্তিনিকেতনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জোর করে আমাকে দিয়ে কিছু করানোও যায় না। মানে কিছু লোক শুনে শেখে, কিছু লোক ঠেকে; আমি সম্ভবত ঠেকে শেখার দলে।

গান ও গানের বাইরে অর্ণব কেমন, তা-ই উঠে আসবে ‘আধখানা ভালো ছেলে আধা মস্তান’–এ
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

এই চলচ্চিত্রের পরিচালক আবরার আতহার আপনাকে কেমনভাবে উপস্থাপন করেছেন?

আমি তো চলচ্চিত্রটি দেখেছি। এ ধরনের চলচ্চিত্রে সম্পাদনা তো খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটা দিয়ে গল্পটা দাঁড়ায়। পরিকল্পনা ছিল একটা মিউজিক্যাল শো করা, যেটাতে আমি পারফর্ম করব। নতুন-পুরোনো গান থাকবে, গানের পেছনের গল্প বলব। কিন্তু সে কিছু কিছু জায়গায় আমার গানের সঙ্গে এমন কিছু বিষয় যুক্ত করেছে, ওসব বাড়তি ইমোশন তৈরি করছে। একটা সুন্দর জার্নি তৈরি হয়েছে, ইট ওয়াজ আ ব্রিলিয়ান্ট জব। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই চলচ্চিত্রে আমার আম্মু ও আব্বু দুজনই ছিলেন। আমাকে নিয়ে কথা বলছেন। আব্বু তো বরাবরের মতো আমাকে পচাইছে। আব্বু জীবনে কোথাও যান না, এটাতে লাকিলি তাঁকে পাওয়া গেছে।