‘ভেবেছিলাম বলিউড ছেড়ে দেব’

ছবি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশ খুঁতখুঁতে কঙ্কণা সেন শর্মা। তাই খুব বেশি ছবিতে দেখা যায় না। একঘেয়ে চরিত্রে অভিনয় করতে মোটেও পছন্দ করেন না তিনি। ব্যতিক্রমী চরিত্রের সন্ধানে থাকেন কঙ্কণা। সম্প্রতি মুক্তি পেল তাঁর অভিনীত ছবি ‘রামপ্রসাদ কি থারভি’। সীমা পাহওয়া পরিচালিত এই ছবিতে নাসিরুদ্দীন শাহ, বিনয় পাঠক, বিক্রান্ত মাসেইসহ একাধিক নামকরা অভিনেতারা আছেন। শীতের এক বিকেলে বলিউডের দাপুটে এই বাঙালি অভিনেত্রীর সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল সাক্ষাৎকারে প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য।
কঙ্কণা সেন শর্মা
ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন :

ছবি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনি বেশ খুঁতখুঁতে। ‘রামপ্রসাদ কি থারভি’ ছবিটি করতে রাজি হলেন কেন?

এই ছবি করার পেছনে অন্য একটা কারণ ছিল। আমি সীমা পাহওয়াজির অভিনয়ের অনেক বড় ভক্ত। আমার দীর্ঘদিনের বাসনা ছিল ওনার সঙ্গে কাজ করা। এই ছবিতে আমি সীমাজির সঙ্গে পর্দায় দেখা দেওয়ার সুযোগ পাইনি। তবে ওনার প্রথম পরিচালিত ছবিতে আমি কাজের সুযোগ পেলাম। ‘থারভি’ ছবির সঙ্গে নামজাদা সব অভিনেতার নাম জড়িয়ে আছে। তাই ছবিটিকে ‘হ্যাঁ’ বলতে কষ্ট হয়নি।

প্রশ্ন :

শুটিংয়ের মজাদার অভিজ্ঞতার কথা বলেন।

দারুণ মজা করে কাজ করেছি আমরা। লক্ষ্ণৌতে ছবির শুটিং হয়েছে। তখন আবহাওয়া চমৎকার ছিল। আমরা খুব চাটনি খেতাম। লক্ষ্ণৌর চাটনি আর খাবার দুর্দান্ত। রোজ বিকেলে আমরা কী খাবার আসবে, সেই অপেক্ষায় থাকতাম। সীমাজি আমাদের জন্য নিজের হাতে রান্না করতেন। উনি পেয়ারা দিয়ে একটা তরকারি বানিয়েছিলেন। আমি এর আগে এই তরকারি কখনো খাইনি। দারুণ লেগেছিল। উনার হাতের কচুরিও দারুণ। আমরা সবাই খেয়েদেয়ে ওজন বাড়িয়ে মুম্বাইতে ফিরে এসেছিলাম। (সশব্দে হেসে)

প্রশ্ন :

পরমব্রতর সঙ্গে আপনাকে ‘কাদম্বরী’ ছবিতে দেখা গিয়েছিল। পরমের সঙ্গে আবার পর্দায় দেখা দেবার অভিজ্ঞতা কেমন?

ওর সঙ্গে কাজ করতে আমি সব সময়ই স্বচ্ছন্দ্য। সেটে আমরা বাংলায় কথা বলতাম। হিন্দি সংলাপ বলার সময় কোনো সমস্যা হলে আমরা একে অপরকে সাহায্য করতাম।

কঙ্কণা সেন শর্মা
ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন :

বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে আপনি দুই দশক পার করে ফেললেন। পিছনের দিকে ফিরে তাকালে কী দেখতে পান?

আমি কখনোই পেছনের দিকে ফিরে তাকাই না। আমি নিজের প্রচেষ্টায় দাঁড়িয়েছি। শিশু অভিনেতা হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম। তবে সত্যি বলতে আমি কখনোই অভিনেত্রী হতে চাইনি। আমার মনে হতো সাংবাদিকতা, প্রকাশনা বা বিজ্ঞাপনজগতে কাজ করব। কখন নিজের অজান্তে যে অভিনয়ের জগতে পা রাখলাম, তা আমি নিজেও জানি না। একের পর এক সাফল্য আসতে থাকে। তবে এসব খুব একটা পাত্তা দিতাম না। ভেবেছিলাম কয়েক বছর অভিনয় করে বলিউড ছাড়ব। তারপর নিজের মনের মতো রাস্তা খুঁজে নেব। এভাবেই দুই দশক কাটিয়ে দিলাম। আজ পর্যন্ত যা যা সুযোগ পেয়েছি, সে জন্য আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। তবে আমি এখন আগের থেকে অভিনয় অনেক বেশি উপভোগ করি।

প্রশ্ন :

ছবি নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেন?

অবশ্যই চিত্রনাট্য। চিত্রনাট্য পড়ে যেন আমি মজা পাই। আর একবসায় যেন ঝটপট চিত্রনাট্যটা পড়ে ফেলতে পারি। আরেকটা বিষয় হলো ছবিতে আমার অভিনীত চরিত্রটি। বাঁধাধরা চরিত্র আমার একদম পছন্দ না। আমি ব্যতিক্রমী চরিত্রের সন্ধানে থাকি। সেখানে চ্যালেঞ্জ নিয়ে অভিনয় করে নিজেকে এক্সপ্লোর করার সুযোগ আছে।

কঙ্কণা সেন শর্মা
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

বলিউডে এই দুই দশকে কী পরিবর্তন দেখলেন?

শুধু ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনের কথা বলতে পারি। চরিত্র থেকে ফরম্যাট সবকিছু নিয়ে এই জগতে নানান নিরীক্ষা চলছে। কারণ, এখানে সেন্সরশিপের ভয় নেই। তাই সিরিজ বা চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে অবাধ স্বাধীনতা আছে।

কঙ্কণা সেন শর্মা
ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন :

আপনার মা অপর্ণা সেনের বয়স ৭৫ বছর পার হয়ে গেছে। তাই মেয়ে হিসেবে কি মায়ের প্রতি আপনার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে?

আমার মা বরাবরই ভীষণ আত্মনির্ভরশীল নারী। এই বয়সেও উনি আমার থেকে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকতেন। আমরা একে অপরের খুব কাছের। অক্টোবরে মা আমার কাছে এসেছিলেন। এক মাসের মতো ছিলেন। আমরা একসঙ্গে দারুণ সময় কাটিয়েছি। আমি উনার জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছি। আমার কাছে উনি এক অনন্য উদাহরণ। আর আমার মা অত্যন্ত খোলা মনের মানুষ। তাই ওনার সঙ্গে যেকোনো বিষয় নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা যায়।

মায়ের সঙ্গে কঙ্কণা সেন শর্মা
সংগৃহীত