যোগ্যতার মূল্যায়ন কমেছে, লবিংবাজি বেড়েছে

তিন দশকের বেশি সময় ধরে পথচলা। একটা সময় সংগীতাঙ্গনে ছিল তাঁর দাপুটে বিচরণ। তারপর হঠাৎ করেই কমে যায় তাঁর কাজের পরিমাণ। গত বছর থেকে আবার গানের ব্যস্ততা আগের তুলনায় বেড়েছে। কী কারণে অনিয়মিত এবং নতুন পরিকল্পনাই–বা কী, জন্মদিনে এসব নিয়েই গতকাল রোববার বিকেলে ডলি সায়ন্তনীর সঙ্গে কথা বলল বিনোদন।

প্রশ্ন :

জন্মদিনে কি করলেন?

এখন আর আগের মতো আনন্দ নেই। অনেক বেশি প্র্যাকটিক্যাল হয়ে গেছি। ছোট থাকতে নানা রকম আনন্দে মেতে থাকতাম। এখন অবশ্য সন্তানদের জন্মদিন নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। আর সন্তানেরাও চেষ্টা করে মাকে সারপ্রাইজ দিতে।

ডলি সায়ন্তনী
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

জন্মদিনে নাকি পেছনে ফিরে তাকাতে হয়। এই দিনেই তাই জানতে চাই, সংগীতাঙ্গনে আপনার দাপুটে বিচরণ হঠাৎ করেই থেমে যায়। কারণ কী?

আমাদের সংগীতাঙ্গনে সেই পরিবেশ–পরিস্থিতি তো নেই। আগে দেখা যেত, প্রতিবছরের সব উৎসবে অনেক শিল্পীর অ্যালবাম প্রকাশিত হতো। এ ছাড়া সারা বছরই কোনো না কোনো শিল্পীর গানের অ্যালবাম প্রকাশিত হতো। আমরাও ঘুম থেকে উঠেই স্টুডিওতে ছুটতাম। কিন্তু একটা সময়ে প্রতিষ্ঠিত অনেক ক্যাসেট কোম্পানিও ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। এখন তো সবাই আবার অনলাইনের জন্য কাজ করছেন, তারপরও আগের মতো হচ্ছে না।

প্রশ্ন :

আপনি বলছিলেন, পলিটিকসের শিকার হয়েছিলেন। কাজের ব্যস্ততা কমার এটাই কি কারণ?

পলিটিকস তো সব জায়গায় আছে। আমরা বলি না, জোর যার মুল্লুক তার। সংগীতাঙ্গনে এখনকার অবস্থা হচ্ছে তা–ই। গান কমিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু খারাপ লাগা ছিল প্রধান কারণ। কিছু মানুষের ওপর অভিমান আরেকটা কারণ। নোংরা রাজনীতির কারণে আমি তো এমনও ভেবেছিলাম, গানবাজনা আর করবই না। আমি তো আসলে গান করতে এসেছি, তাই রাজনীতির ধার ধারিনি। সেটা আমি বুঝতামও না, বোঝার প্রয়োজনও মনে করিনি।

বিরতির পর ফিরে শওকত আলী ইমনের সুর ও সংগীতে গান গেয়েছেন ডলি সায়ন্তনী
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

পলিটিকস তো সব জায়গাতেই আছে, কিন্তু মোকাবিলাও তো করতে হবে।

আমাদের এই অঙ্গনে যে ধরনের পলিটিকস হয়, তা কীভাবে যে মোকাবিলা করতে হয়, আমার জানা নেই। এসব পলিটিকস শিল্পীকে মানসিকভাবে ভেঙে চুরমার করে দেয়। হয়তো অনেকে নিজেকে পুরোপুরি সরিয়েও নেন। আমি আমার মতো করে কাজ করেছি, হয়তো সংখ্যা কম ছিল। এখন আবার কাজ করছি। তবে আমি এখন মনে করি, কাজের মাধ্যমে পলিটিকসকে মোকাবিলা করা উচিত।

প্রশ্ন :

উদ্যম ফিরে পেলেন কী করে?

অনেকেই উৎসাহ দিয়েছেন। বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন আমার ভক্ত-শ্রোতারা। ফ্যান পেজ আমি নিজেই চালাই। করোনার শুরুর দিকে নিজের গাওয়া একটি গান এমনিই শেয়ার করেছিলাম। এরপর থেকে সবাই এত মেসেজ করেছেন...সবাই বলছিলেন, ‘অনেক বছর পর আপনার গান শুনলাম, আপনাকে নতুন করে পেলাম।’ তখন ভেতর থেকে একটা উৎসাহ পাই। মনে হলো ভক্তরা তো আমাকে ভোলেননি। তখন থেকে ভাবলাম, নতুন কিছু গান গাওয়া উচিত।

ডলি সায়ন্তনী
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনার সঙ্গে যা কিছু ঘটেছে, তাকে এখন কীভাবে দেখছেন?

যোগ্যতাই শিল্পী মূল্যায়নের মাপকাঠি হওয়া উচিত। আমাদের অঙ্গনে যোগ্যতা মূল্যায়নের মানুষ কমেছে, লবিংবাজি বেড়েছে। কতটুকু গাইতে পারেন, কতটা যোগ্যতা আছে, সেটা ম্যাটার করে না; পিআর মেইনটেইন করাই যেন বড় যোগ্যতা হয়ে গেছে।

প্রশ্ন :

সামনে শ্রোতাদের জন্য নতুন কী গান থাকছে?

নতুন গান পুরোপুরি তৈরি। ভিডিও চিত্রের শুটিংও শেষ। সম্পাদনার কাজ চলছে।

‘সময় কাটুক গানে গানে’ অনুষ্ঠানে গান গাইছেন ডলি সায়ন্তনী
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আর কী করছেন?

একটা রিয়েলিটি শোতে বিচারক হয়েছি। দেশ টিভির এই অনুষ্ঠানে অন্য বিচারকেরা হলেন পার্থ মজুমদার, মিলন ভট্টাচার্য। এই প্রথম কোনো রিয়েলিটি শোতে বিচারকের আসনে বসা। এর মধ্যে ৫ পর্বের শুটিংও আমরা করেছি। আয়োজক প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ যদি না থাকে, আমি মনে করি এই ধরনের রিয়েলিটি শো থেকে মেধাবী শিল্পী তুলে আনা সম্ভব। এই প্রজন্মে সংগীতাঙ্গনে যারা ভালো অবস্থানে আছে, তাদের অনেকেই রিয়েলিটি শো থেকেই এসেছে। আমিও এই আয়োজনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি, যদি আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়, তবেই আমি বিচারক হব।