শাড়ি পরে কতটা দৌড়াতে পারি বিশ্বের বাঙালি দেখেছেন

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নতুন সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে নিপুণকে
ছবি: সংগৃহীত
নতুন করে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঘোষণার পর চোখ ভিজে ওঠে অভিনেত্রী নিপুণের। নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি প্রতিক্রিয়া জানান প্রথম আলোকে।
আপিল বোর্ড আপনাকে নতুন করে সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করল।

প্রশ্ন :

কেমন লাগছে?

আমার ধারণার বাইরে ছিল যে মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে। কদিন ধরে নির্বাচনে অনিয়মের নানা প্রমাণ নিয়ে আমি বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছিলাম। সবার সাড়া দেখে বুঝতে পেরেছিলাম, জয় আমার হবেই। প্রত্যাশিত জয় এসেছে, আমি খুশি। গত সাতটি দিন আমার কীভাবে যে গেছে, আমি জানি না। মনে হয়েছে, সত্যের জয় হয়েছে।

প্রশ্ন :

যা চেয়েছিলেন তা তো হলো, এখন?

চেয়ারের জন্য আমি এই নির্বাচন করিনি। সবার সঙ্গে থেকে চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করতে চেয়েছি। সমিতিতে না থেকেও করোনাকালের আগে থেকেই নানাভাবে আমি শিল্পীদের জন্য কাজ করেছি। এবার একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে এখানকার মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চেয়েছিলাম। সেই কাজ এখন আরও ভালোভাবে করতে পারব।

প্রশ্ন :

এই নির্বাচন ঘিরে চলচ্চিত্রের ভেতর-বাইরের অনেকে আপনাকে একজন যোদ্ধা আখ্যায়িত করেছেন, শুনেছেন?

শুনেছি। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। এ জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। এই মানুষেরা যদি আজ আমার পাশে না থাকতেন, তাহলে আমি এই পর্যায়ে আসতে পারতাম না। কারণ, আমি পরাজিত হওয়ার পর বারবার এই মানুষগুলো আমাকে সাহস জুগিয়েছেন, সামনে যেতে সাহায্য করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘আপনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যান, আমরা আপনার সঙ্গে আছি।’

নিপুণ

প্রশ্ন :

এই নির্বাচনে আপনি বিজয়ী হবেন, সেটা কি আগে থেকেই জানতেন?

শতভাগ নিশ্চিত ছিলাম,কিন্তু অনিয়ম করে সেটা উল্টে দেওয়া হয়েছিল। আমি যে কাজটি করেছি, সততার সঙ্গে করেছি। আমি কোনো চেয়ার চাই না, এখানে একটা পরিবর্তন চেয়েছি। আমি এ-ও বলতে শুনেছি, নিপুণ একজন মেয়ে, শিল্পীদের কেউ মারা গেলে লাশ বহন করবেন কীভাবে? রিয়াজ ভাই এ কথার জবাব দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, নিপুণের ১৫ জন ভাই আছেন তাঁরা লাশ বহন করবেন। আমি একজন মেয়ে, সেটা ঠিক আছে। মেয়ে হয়ে শাড়ি পরে আমি কতটা কাজ করতে পারি, দৌড়াতে পারি, এই কদিনে সেটা সারা বাংলাদেশ, এমনকি সারা বিশ্বের বাঙালিরা দেখেছে।

প্রশ্ন :

চলচ্চিত্রের লোকেরা বলেছেন, একজন সাহসী নিপুণকে পেলাম, যাঁকে নিয়ে আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে আগামী দিনে লড়তে পারব।

এর প্রতিদান আমি কীভাবে দেব, জানি না। ধন্যবাদ ছাড়া আর কিছু্ই দেওয়ার নেই। এই নির্বাচনে নেমে তাঁরা আমাকে কেন সাহসী বলছেন, তা-ও জানি না। তবে আমি এই নির্বাচন ঘিরে অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়েছি। ভবিষ্যতেও এই মনোভাব নিয়ে চলচ্চিত্রের জন্য পথ চলতে চাই।

মৌসুমী, নিপুণ ও ফেরদৌস। দুই প্যানেলে প্রার্থী হলেও এফডিসিতে তাঁদের মধ্যে ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ

প্রশ্ন :

সাধারণ সম্পাদকের অনেক দায়িত্ব, শপথের পর আপনার প্রথম কাজ কী হবে?

এত দিন আমাদের প্যানেলের ওপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে। ২৯ জানুয়ারি ফলাফল প্রকাশের পর আমাদের প্যানেলের যাঁরা বিজয়ী হয়েছেন, তাঁরাও হতাশ ছিলেন। ইলিয়াস কাঞ্চন ভাই সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরও বলেছিলেন, আমাকে ছাড়া কীভাবে কাজ করবেন। এখন সুন্দরভাবে পরিকল্পনা করে আমি আর কাঞ্চন ভাই চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কাজ করতে পারব। আমরা এমন কাজই করব, যাতে বাংলা চলচ্চিত্র আলোকিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি সিনেমার দৃশ্যে শাকিল ও নিপুন
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের অনেকেই এই কমিটিতে আছেন। সমন্বয় করে কাজ করতে সমস্যা হতে পারে?

আমি এমন কিছু করব না, যাতে নিজের বা অন্যদের কাজ করতে অসুবিধা হয়। আর আমি সে ধরনের মেয়েও নই। ওই প্যানেলের অনেকে এই কমিটিতে আছেন, অনেকেই চলচ্চিত্রের পুরোনো মানুষ। তাঁদের পরামর্শ নিয়েই আমি ও কাঞ্চন ভাই কাজ করব।

প্রশ্ন :

কিন্তু ছোট্ট এই নির্বাচন নিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনজুড়ে যে ঘটনা ঘটে গেছে, তাতে চলচ্চিত্র সম্পর্কে বাইরের মানুষের বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

এ জন্য পুরো সিস্টেম দায়ী। সেই সিস্টেম থেকে আমরা বের হতে চাই এবং আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কাজই আগে করব, যাতে এ ধরনের নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষ বিরক্ত না হয়। আমার বিশ্বাস, আমি পারব। কারণ, আমার সঙ্গে চলচ্চিত্রের মানুষেরা আছেন। দেখুন, এই নির্বাচনে শিল্পীরা যে পরিমাণ ভোট আমাকে দিয়েছেন, আমি সেই মানুষগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব, যাতে ভবিষ্যতে এই জায়গা নিয়ে কেউ খারাপ মন্তব্য করতে না পারে।

প্রশ্ন :

ভোটাধিকার হারানো ১৮৪ জন শিল্পীকে নিয়ে কী ভাবছেন?

এখন তো আর কোনো সমস্যা নেই। আমরা আগে থেকেই চেয়েছি তাঁদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক, কিন্তু আগের কমিটি সেটা করেনি। আদালত থেকে ১০৩ জনের ব্যাপারে ইতিবাচক রায় এসেছে। এখন তো আর কোনো সমস্যা নেই। কারণ, শিল্পী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ক্যাবিনেট মিটিংয়ে সবার সম্মতিতে তাঁদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ আছে। আমরা সেই কাজ করব। কারণ, আমি সব সময়ই নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, তাঁদের জন্য কাজ করেছি। সুতরাং, এখানেও আমি ফেল করব না।