শুধু মিউজিক করে এখন সংসার চালানো মুশকিল: আলম খান
‘চাঁদের সাথে আমি দেব না’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘সবার জীবনে প্রেম আসে’, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘বুকে আছে মন’, ‘এখানে দুজনে নিরজনে’, ‘তুমি ছিলে মেঘে ঢাকা চাঁদ’, ‘কাল তো ছিলাম ভালো’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘মনে বড় আশা ছিল’ এমন অসংখ্য গানের সুরস্রষ্টা বরেণ্য সুরকার আলম খান। আজ ২২ অক্টোবর তাঁর জন্মদিন। অসংখ্য কালজয়ী গানের এই সুরকার এখন পর্যন্ত ৩০০ চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। তাঁর সুরারোপিত গানের সংখ্যা দুই হাজারের ওপরে। তাঁর লেখা শ্রোতাপ্রিয় গানও অসংখ্য। জন্মদিন উপলক্ষে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
প্রশ্ন :
শুভ জন্মদিন
ধন্যবাদ।
প্রশ্ন :
জন্মদিনে কেমন অনুভূতি হয়?
আমার কাছে তো সাধারণ দিনের মতোই লাগে। একটা করে দিন চলে যায়, মাস যায়, বছর শেষে আসে নতুন একটি দিন।
প্রশ্ন :
জীবনের ফেলে আসা দিনের দিকে তাকালে কেমন লাগে?
মন খারাপ লাগে। ছোটবেলার কথা অনেক কথা মনে পড়ে। ছোটবেলায় তো জন্মদিনের আনন্দ উদ্যাপন করা হতো না। বিনোদন অঙ্গনে কাজ করতে এসে জন্মদিন উদ্যাপনের শুরু হয়।
প্রশ্ন :
করোনার এই সময়ে বাসা থেকে কি বের হন?
সেভাবে একদমই বের হওয়া হয় না। বাসায় থাকি, টেলিভিশন দেখি, গান শুনি।
প্রশ্ন :
এই সময়ের গানের অঙ্গনের খবর রাখতে পারেন?
টুকটাক রাখি। রাখতে হয়। নতুনরা কেমন করছে, তা বোঝার চেষ্টা করি। তবে আমার কাছে মনে হয়, বর্তমান সময়ের সংগীতাঙ্গন কোনোরকমে কেটে যাচ্ছে। খুব একটা সুবিধার নয়।
প্রশ্ন :
সংগীতাঙ্গন সুবিধার করতে হলে করণীয় কী? আপনার পরামর্শ কী?
ভালো ভালো গান হওয়া দরকার। পরিচ্ছন্ন গল্পের চলচ্চিত্র বেশি তৈরি হতে হবে। যুগের সাথে তো অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখনকার সংগীত পরিচালকেরা অন্য ধরনের কাজ করছে। ওরা তো অবশ্য পেছনের দিকে ফিরে যাবে না। তারা সামনের দিকেই চলবে, সেটা ভালো বা খারাপ যেটাই হোক। যুগের সাথে চলছে এ রকম। আগের মতো গানও তো এখন আর হয় না।
প্রশ্ন :
অনেকে বলে থাকেন, কালজয়ী গান তৈরি হচ্ছে না। আবার অন্যদের মতে কালের ওপর ছেড়ে দেওয়া হোক, তখন বোঝা যাবে।
গান তৈরির সময়ই বোঝা যায়, গানটি কি কালজয়ী হবে, নাকি হবে না। একটা লক্ষণ দেখা যায় বলা যেতে পারে। সকালবেলার সূর্য দেখে যেমন বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে, তেমন আরকি। এটাও ঠিক, এমন অনেক গান তৈরি হয়, যা অনেক দিন যাওয়ার পর আস্তে আস্তে মানুষের ভালো লাগে।
প্রশ্ন :
নতুন প্রজন্মের গান শোনেন?
আজ সকালেই কথা হচ্ছিল সাবিনা ইয়াসমীনের সঙ্গে। কথায় কথায় সে বলল, ‘গানবাজনার অবস্থা জানি কেমন হয়ে গেল, আলম ভাই। অনেক গানই শুনি, কিন্তু বেশির ভাগেরই কিছুই বুঝি না। কথা তো না-ই, সুরও মনে থাকে না।’ আমারও তেমনটাই মনে হয়। কথাও মনে থাকে না, সুরও মনে থাকে না। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার কথা আছে, কিন্তু সময়ের কারণে কি এসব হচ্ছে কি না, সেটাও বুঝতে পারছি না। দিনগুলোই কেমন যেন হয়ে গেছে। ভাবতে হবে। নতুন প্রজন্মের কিছু কিছু শিল্পী তো খুবই ভালো গান করে। তারা ভীষণ প্রতিভাবান। বেশি করে সুযোগ পেলে তারা অনেক ভালো করবে।
প্রশ্ন :
কারও নাম কি মনে পড়ে?
অনেক ছেলেমেয়েই আছে, তাদের কণ্ঠস্বর দুর্দান্ত। অনেক সুরেও গায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা ভালো গান পাচ্ছে না। ভালো সংগীত পরিচালক পেলে তারা অনেক ভালো করতে পারত।
প্রশ্ন :
আপনি সর্বশেষ কাজ করেছেন কবে?
এন্ড্রু কিশোরের জন্য একটা গান করেছিলাম, সৈয়দ শামসুল হকের লেখা। এরপর আর নতুন কোনো গান বানানো হয়নি।
প্রশ্ন :
এখন গান তৈরি করতে ইচ্ছা করে না?
সুযোগ-সুবিধা নেই। ফাইন্যান্সের অভাবেও করা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রশ্ন :
আপনার দুই সন্তান আরমান খান ও আদনান খানকে সংগীতাঙ্গনে অল্প সময়ের জন্য পাওয়া গেলেও তাঁরা নিয়মিত হননি। এটা নিয়ে কোনো দুঃখবোধ আছে কি?
ওরা যেটা ভালো মনে করেছে, করেছে। এসব নিয়ে দুঃখবোধ। শুধু সংগীত করে এখন সংসার চালানো মুশকিল। ওরা ওদের নিশ্চিত নিরাপদ পথ বেছে নিয়েছে। তবে গান কিন্তু একেবারে ছেড়ে দেয়নি। ওরা চর্চা করে। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে নতুন গান প্রকাশ করছে।