সব দেখেশুনে বুঝতে চাই কতটা সহজ হতে পারব

সাদিয়া জাহান প্রভা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
টেলিভিশনে আজ ও কাল রয়েছে সাদিয়া জাহান প্রভা অভিনীত দুটি নাটক। এনটিভিতে আজ শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় রয়েছে ‘তবুও লাবনীরা থেমে থাকে না’। আজম খানের রচনায় নাটকটি পরিচালনা করেছেন মৃত্যুঞ্জয় সরদার। শনিবার রাত আটটায় আরটিভিতে রয়েছে ‘সুরঞ্জনার শেষ সংলাপ’। আহমেদ তাওকীরের লেখা ও সীমান্ত সজলের পরিচালনায় এতে প্রভা অভিনয় করেছেন মনোজের সঙ্গে। এ দুই নাটক ছাড়া ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয়েও কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

প্রশ্ন :

আপনি অনেক দিন শুটিংয়ে নেই। ছুটি কাটালেন?

ঠিক ছুটি নয়, আমার আব্বু অসুস্থ ছিলেন। এ কারণে বাসায় থাকতে হলো। এখন তিনি আগের চেয়ে অনেক সুস্থ।

প্রশ্ন :

মা–বাবার সঙ্গে থাকতে পারাটা সৌভাগ্যের ব্যাপার।

আমিও তা–ই মনে করি। আমি তাঁদের বড় সন্তান। তাঁদের সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। মায়ের করোনা হলো, তখন শুটিং করতে হয়েছিল আমার। ভীষণ মন খারাপ হয়ে থাকত। মনটা বাসায় পড়ে থাকত।

প্রশ্ন :

আবার কবে শুটিং শুরু করবেন?

৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে পারে। আউটডোর, বেশ কিছু কাজ নিয়ে ঢাকার বাইরে যাচ্ছি।

আরও ভালো গল্পের খোঁজে অভিনেত্রী প্রভা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

প্রশ্ন :

ডিজিটাল দুনিয়ায় পিছিয়ে পড়লেন কেন?

ওয়েব সিরিজের ব্যাপারে কথা চলছে। আসলে সব ধরনের সিরিজে আমি অভিনয় করতে পারব না। আমার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমি আসলে সবকিছুতে আরাম পাই না। আমাকে অনেক বুঝেশুনে কাজ করতে হয়। অনেক ভয় লাগে। ছোট ছোট অনেক ব্যাপার থাকে। গল্প, সংলাপ সব দেখেশুনে বুঝতে চাই যে আমি কতটা সহজ হতে পারব। এসব কারণে সময় লাগছে। দেখি, ভালো গল্প খুঁজছি। আমি যতখানি সহজ হতে পারব, ততটাই করতে পারব।

প্রশ্ন :

ওয়েব সিরিজ বাদ, টেলিভিশন ধারাবাহিক করছেন না কেন?

ধারাবাহিকের অনেক দায়–দায়িত্ব থাকে। চুল কাটা যাবে না, চুলে রং করা যাবে না। হয়তো পরিবারের কেউ অসুস্থ, তখন সম্প্রচারের তারিখ আসে। আম্মুর করোনা হলো যখন, তখন আমার শুটিং ছিল। কিছুই করার ছিল না। বিধিনিষেধ শেষ হলে ভেবেছিলাম পরিবারের সবাই মিলে ঢাকার বাইরে যাব। হঠাৎ নাটক সম্প্রচার বা শুটিংয়ের সময় হয়ে গেল, যেতে পারলাম না। তখন মনে হলো, ধারাবাহিকটা আমার জন্য আপাতত কষ্টকর হয়ে যাবে। একটা–দুটো করলাম হয়তো, সেটা ভিন্ন কথা।

এখন অনেক কিছু বুঝে কাজ করতে হয় প্রভাকে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

প্রশ্ন :

এ কারণে একক নাটকে কাজ করছেন? ‘তবুও লাবনীরা থেমে থাকে না’ নাটকটা কেমন হবে? ওই যে লাশ কাটা ঘরে...

লাশ হতে আমার খুব ভয় করেছিল। তবে এ ধরনের চরিত্রে আমি অনেক আরাম বোধ করি। কারণ, অনেক বেশি প্রসাধনী ব্যবহার করতে হয় না, সাজগোজের ব্যাপার নেই। এ ধরনের চরিত্রে আমার জন্য দুই রকম লাভ, এক—অভিনয় করতে ভালো লাগে। দুই—তৈরি হতে বেশি সময় লাগে না।

প্রশ্ন :

এত বেছে কি কাজ করা সম্ভব, অনেক প্রতিযোগিতা না?

আমাদের এখানে এই ‘বেছে কাজ করা’ কথাটাকে অনেকেই লোকদেখানো মনে করেন। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। আমার অনেক সমস্যা আছে। যেমন আমার রোদে অনেক কষ্ট হয়। এ জন্য চেষ্টা করি, বাইরের দৃশ্য যাতে কম করতে হয়। রোদে কিছুক্ষণ থাকলেই আমার মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হয়ে যায়। তারপর ধরুন, অনেক বেশি অন্তরঙ্গ দৃশ্য করতে আমি স্বস্তি বোধ করি না। তারপর ধরুন, শুটিং সেটে মানুষ না জানিয়ে ভিডিও করবে, নিজের টিকটকে ছেড়ে দেবে, এসব আমার ভালো লাগে না। হোক সেটা শুটিংয়ের লোক বা বাইরের কেউ। দেখা গেল সুন্দর করেই নিল, কিন্তু অসুন্দরভাবে প্রকাশ করল। আমি এ রকম অনেক কিছুর সম্মুখীন হয়েছি। হয়তো আমার সে রকম মানসিকতাও ছিল না। এ সব কারণে অনেক কিছু বুঝে কাজ করতে হয়।

প্রভার ভক্তরা সব অনুসরণ করেন তাঁর ভুয়া পেজগুলো
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

প্রশ্ন :

আপনার নিজের টিকটক–ইউটিউব এসব নেই কেন?

আমার নেই, হয়তো একসময় থাকবে। ফেসবুকে আমার নামে অনেক পেজ আছে, যেগুলোর একটাও আমার নয়। একটা তো দেখলাম ২.৪ মিলিয়ন অনুসারী। আমার ইনস্টাগ্রাম থেকে ছবি নিয়ে নিয়ে সেই পেজটা বড় করেছে। গুড মর্নিং, আমাকে কেমন লাগছে সেলফিতে—এ রকম উটকো সব পোস্ট দেয়, লোকেও মনে করে ওটা আমি। অথচ আমার যে আসল পেজ, সেটার কথা খুব কম মানুষ জানে। অনেক দিন পর পেজ খুললাম, কারণ আমার অনেক সহকর্মী ফেক আইডির কারণে বিপদে পড়েছেন। ফেক পেজ নিয়ে আমি খুব চিন্তিত। আমার কোনো টুইটার নেই, টিকটক নেই, ইউটিউব নেই। শুধু একটা ফেসবুক পেজ আছে আর আছে ভেরিফাইড ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট। ফেসবুকের যে প্রোফাইল, সেটাও লকড। সেখানে কিছু কাছের লোক আছে।

প্রশ্ন :

ঘরে যেসব দিন কাটালেন, কী কী দেখলেন?

‘মরীচিকা’ দেখে আমি আবারও নিশোর ফ্যান হয়ে গেসি। ইটস আমেজিং। জোভানও ভালো করেছে। ‘ইউটিউমার’ দেখে অনেক মজা লেগেছে। জাস্ট এটা ফান বলে না, পলাশ আর প্রিতমের অভিনয় খুবই স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। এ কদিন বাসায় ছিলাম, অনেক কিছু দেখা হয়েছে। নতুন সিরিজ আসলে সব সময়ই দেখা হয়। কিছুই মিস করি না। নেটফ্লিক্স সব সময়ই দেখা হয়। চরকি ডাউনলোড করে গত কয়েক দিনে সেখানে যা যা ছিল, প্রায় সব দেখে ফেলেছি। ‘ঊনলৌকিকটা’ও অনেক ভালো লেগেছে।

প্রশ্ন :

আপনার আর কার কার কাজ ভালো লাগে?

তানজিন তিশা, সাবিলা, ফারিণ মেয়েটা ভালো। ওর অভিনয় অনেক দারুণ। খায়রুল বাসারের অভিনয় ভালো লেগেছে, ইয়াশ রোহানের অভিনয়ও সুন্দর। ওদের ছবিটা দেখলাম, ভালো লেগেছে।

‘সুরঞ্জনার শেষ সংলাপ’ নাটকে প্রভা
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনি যে কাজ করেন, সেটা কি ভালোবেসে করেন নাকি করার জন্য করেন?

একদম সত্যি করে বলতে গেলে, কিছু কাজ আসলেই সময় আছে বলেই করা। কিছু কাজ না করে পারি না। ধরা যাক, সুন্দর একটা গল্প পেয়েছি। শুটিংয়ের আগের দিন হাতে পেলাম স্ক্রিপ্ট। দেখলাম, গল্পের সঙ্গে স্ক্রিপ্টের মিল খুব সামান্য। তখন দেখা গেল, সবার তারিখ নেওয়া হয়ে যায়, কিছু করার থাকে না। একটা দায়বদ্ধতায় পড়ে যাই। আমার তো মনে করেন, অনেক সমস্যা। কী করব? ধরা যাক, আমার অনুমতি ছাড়া যদি কেউ ছবি তোলে, সেটা কি আমার ভালো লাগবে? বললেই আমি ছবি তুলতে রাজি হয়ে যাই। ছবি তোলার জন্য অবশ্যই একটা প্রস্তুতির দরকার আছে। নয়তো আমি তো রাগ করবই। যখন আমি অন্যমনস্ক হয়ে মুঠোফোন স্ক্রল করছি, তখন যদি কেউ ছবি তোলে, তখন সেটা খুবই বাজে। আশপাশের মানুষজনের আসলে ভদ্রতার অভাব, যেটার আমি খুব সম্মুখীন হই। কিন্তু আমাদের দেশে ভালো ভালো শিল্পী আছেন। গল্প, সংলাপে আমাদের আরও এগোতে হবে। আর আমার কাছে ভালো গল্প আসে না। আমি আরও ভালো গল্প ডিজার্ভ করি।

প্রশ্ন :

‘সুরঞ্জনার শেষ সংলাপ’ নাটকটা?

ওটা জীবনানন্দের কবিতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা। এটা খুব সুন্দর নাটক। এর ভাষা, সেট সবকিছু আমার ভালো লেগেছে। মার্জিত পোশাক ও সংলাপের এসব নাটক হয়তো মানুষ কম দেখে। কিন্তু আমি এসব নাটকে অভিনয় করে তৃপ্তি পাই।

এখন নিজেতে বেশি সময় দিতে পারেন প্রভা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

প্রশ্ন :

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জেনেছি, আপনি প্রেমে জড়িয়েছিলেন।

গত অক্টোবরে আমাদের ব্রেক আপ হয়ে গেছে। নিজেকে ভীষণ মুক্ত লাগছে এখন। যত দিন নিজের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজের হাতে রাখা না শিখব, আশা করি তত দিন আর কোনো সম্পর্কে জড়াব না। প্রেম করলে পুরো সময়টা প্রেমিককে দিয়ে দিতে হয়। নিজেকে দেওয়া যায় না, বাবা–মা বা বন্ধুদের দেওয়া যায় না। এটা একটা ব্যক্তিত্বহীনতা বলে মনে হয়েছে আমার কাছে।

প্রশ্ন :

বিয়ে করবেন কবে?

জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এসব আগে থেকে নির্ধারণ হয়ে থাকে। আমি এটা বিশ্বাস করি। কপালে যখন লেখা আছে, তখন বিয়ে করব। এখন আমি ভালো আছি। একা থাকতে আমার এখন আর ভয় করে না। আমি একা থাকা শিখে গেছি। নিজের জন্য সময় বের করতে পারি।