সালমান–শাহরুখ এখনো কাজ করে যাচ্ছে, আমাদের কাজে লাগানো হচ্ছে না: ওমর সানি

ওমর সানি
ঢালিউড অভিনেতা ওমর সানির ৫৪তম জন্মদিন আজ। ঈদের পরেই জন্মদিন, নিজের পুরোনো সিনেমাসহ চলচ্চিত্র ও পারিবারিক জীবনের নানা বিষয় নিয়ে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।

প্রশ্ন :

শুভ জন্মদিন।

ধন্যবাদ।

প্রশ্ন :

বাসায় কী আয়োজন আজ?

গত ২০ বছর আমার জন্মদিনের বড় কোনো আয়োজন হয় না। কারণ, এ মাসে আমার মা মারা গিয়েছিলেন, ২৩ মে তাঁর মৃত্যুর দিন। মে মাসে আমার ওপর একধরনের বিষণ্নতা ভর করে।

প্রশ্ন :

বড় না হোক, ছোট পরিসরে কিছু আয়োজন তো ছেলে–মেয়েরা করবেই?

আমার ছেলে বড় হয়ে গেছে। সে–ই এখন আমার পরিবারের গার্ডিয়ান। সে, আমার মেয়ে আর ছেলের বউ ছোট কিছু হয়তো করবে। বেশ আগে ববিতা আপা, সুচন্দা ম্যাডাম ও চম্পা আপাদের নিয়ে বড় আয়োজনে আমার জন্মদিন উদ্‌যাপন করেছিলাম, সেটিও পরিবারের কারণে।

ছেলের বউ আয়েশা, ওমর সানি ও ছেলে ফারদিন

প্রশ্ন :

বিশেষ কে কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আজ?

কখনো আশা করিনি যাঁদের, তাঁদের অনেকে। বিশেষ করে ফেসবুকে আমাকে অনেকে উইশ করেছেন, সেটি কল্পনারও অতীত। এখনো মানুষ আমাকে মনে রেখেছেন, ভালোবাসার কিছু বাক্য আমার নামে লিখেছে, আমি তাতেই ভীষণ অভিভূত।

প্রশ্ন :

মানুষ যে আপনাকে এখনো ভালোবাসে, টের পান?

অবশ্যই। ‘কি ছিলে আমার’, ‘হারানো প্রেমের স্মৃতি’, ‘প্রেম কখনো মধুর’ গানগুলোর ইউটিউব ভিউ দেখলেই বুঝি।

প্রশ্ন :

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আপনাকে অনেক কিছু দিয়েছে। পরিচিতি, খ্যাতি, অভিনেত্রী মৌসুমীর মতো জীবনসঙ্গী—এই ইন্ডাস্ট্রিকে যদি ফেরত দিতে হয়, কোনটি কীভাবে দেবেন?

আমরা কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যাইনি। আমার চেয়ে বলিউডের সালমান ও শাহরুখের বয়স অনেক বেশি। ক্যারিয়ার সালমান–শাহরুখ আমরা প্রায় কাছাকাছি সময়েই শুরু করেছিলাম। সালমান–শাহরুখ এখনো কাজ করে যাচ্ছে, অথচ ঢালিউডে আমাদের কাজে লাগানো হচ্ছে না। এখন এখানে সিনেমা হচ্ছে এককেন্দ্রিক, একজন হিরো—পৌনে তিন ঘণ্টা তাঁকেই দেখতে হবে! পাঁচটি ফাইট, পাঁচটি নাচ, তথাকথিত ‘তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না’ মার্কা ডায়ালগ, ভিলেনের ভাই হচ্ছে হিরো—এসব চলছে। এগুলো আর দর্শক নিতে চান না। দক্ষিণ ভারতে আমার বাবার বয়সী রজনীকান্তকে এখনো কাজে লাগানো হচ্ছে। আমাদের এখানে সেসব চেষ্টা নেই। ‘কেজিএফ’–এ রাভিনা ট্যান্ডনকে কীভাবে কাজে লাগিয়েছে! অথচ তিনি কিন্তু মাধুরীর মতো সুপারস্টার নন। কোথায় মৌসুমীকে কাজে লাগানো হচ্ছে? আমরা শিল্পীদের চেঞ্জ করতে পারি না! ৩০০ এমপির এলাকায় ৩০০ সিনেপ্লেক্স করে দিক সরকার। মানুষ এখন একটু আরাম করে সিনেমা দেখতে চায়। প্রযোজক ও হল মালিকদের প্রাপ্তির জায়গাগুলো যদি ঠিক করা যায়, তাহলে কিন্তু প্রডিউসার বেঁচে যান। তাঁরা না বাঁচলে ফিল্ম বাঁচবে? তাঁরা নতুন ফিল্মে বিনিয়োগ করবেন?

ওমর সানি
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

হল করলেই হবে? ভালো সিনেমা কি আমরা বানাতে পারছি?

কিছু ছবি হয়ে যাচ্ছে রবীন্দ্র–নজরুলসংগীত ধাঁচের। ফিল্ম কেবল টাকা থাকলেই হয় না, আবার টাকা না থাকলেও হয় না। ‘কেজিএফ’ দিয়ে আবার উদাহরণ দিই, এটা কিন্তু এক হাজার কোটি টাকার ছবি নয়, এক–দেড় শ কোটি টাকার বাজেটেরই ছবি। একজন আর্টিস্টের কোনো ক্ষমতাই নেই একটি ছবি হিট করানোর। ছবি হিট করানোর মূল কারিগর ডিরেক্টর। সেটা কি আমাদের আছে? সে রকম কারিগরের জন্মও তো হতে হবে! যেমন এ জে মিন্টু মানেই তাঁর ছবিতে যে–ই থাকুক, ছবি হিট হবে। কামাল আহমেদ, উত্তম আকাশ, সোহানুর রহমান সোহানদের ক্ষেত্রেও অনেকটা তাই। বাংলাদেশে কিন্তু দু–একজন ভালো ডিরেক্টর আছেন এখনো। কিন্তু তাঁরা আবার বেপথে চলে যান। জ্ঞানটা থাকতে হবে, টেবিলে বসে কী কী করলে আমাদের ছবি দর্শক দেখবে।

প্রশ্ন :

অনেকেই তো আছেন। তাঁদের উদ্দেশে কী বলবেন?

সালাহউদ্দীন লাভলুকে প্রশ্ন করব—কেন আপনি ‘মোল্লাবাড়ির বউ’য়ের পর আর ছবি বানালেন না। সেলিমকে করব ‘মনপুরা’র পর আপনি কেন ওই জায়গায় বন্দী হয়ে রইলেন? দীপঙ্কর দীপনকে বলব, এই চলচ্চিত্রে তোমার অনেক কিছু দেওয়ার আছে। একজন অমিতাভ রেজাকে বলব, তুমি এখনো হাল ধরছ না কেন। সোহান ভাইকে, এফ আই মানিক, ওয়াকিল আহমেদ, উত্তম আকাশ, জাকির হোসেন রাজুদের বলব, আপনারা হাল ধরেন। ‘শান’–এর পরিচালক ছেলেটা, ওর ক্যাপাবিলিটি আছে।

মৌসুমী ও ওমর সানি

প্রশ্ন :

শাহরুখ, সালমানরা প্রডিউসার হিসেবে কাজ করছেন। আপনি করছেন না কেন?

মৌসুমী, আমি ও আমার শ্বশুর ২৬ বছর আগে ছবি প্রডিউস করেছিলাম। আমরা তখন থেকেই বসে ছিলাম না। এরই মধ্যে আমার দুটি ছবি এনলিস্ট করেছি। আমরা বানাতে চেষ্টা করছি। নানা কারণে পেরে উঠছি না। ফিডব্যাকের গ্যারান্টি যদি পেতাম, তাহলে এগোতে পারতাম। এ জায়গাগুলো ঠিক না হলে আমাদের মতো প্রডিউসাররা কীভাবে এগোবেন? আমরা তো অঢেল টাকার মালিক নই যে দুই–চার কোটি টাকা লোকসান হয়ে গেলে আমাদের গায়ে লাগবে না। নব্বইয়ের দশকে একটি ছবি সুপার ফ্লপ হলেও টাকা উঠে আসতে দুই থেকে পাঁচ বছর লাগত। স্বাভাবিক শো চললে প্রযোজকের পকেটে লাখ পাঁচেক টাকা আসত।

প্রশ্ন :

সিনেমার পর্দায় না থাকলেও ফেসবুকে আপনি আছেন। মানুষ যে নানা সময়ে ট্রল করে আপনাকে নিয়ে, ওগুলো সহ্য করেন কীভাবে?

ট্রল কাকে নিয়ে করে না? রুবেল ভাই বিগ সুপারস্টার, তাঁকে নিয়েও করে। মুম্বাইতে শাহরুখকে ও সালমানকে নিয়ে করে। মৌসুমীকে নিয়ে করে—একটু মোটা হয়ে গেলেও ট্রল করে, চিকন হয়ে গেলেও করে। চুল পাকেনি কেন, এটা নিয়েও করে, পাকলেও করে। আমি সরির জায়গায় ‘চরি’ বলে ফেললে সেটি নিয়েও মানুষ ট্রল করে। অনন্ত জলিলকে অহরহ ট্রল করে, আবার তাঁকে ছাড়া কোনো অনুষ্ঠানও হয় না। তাঁর গাড়ির দরজা থেকে স্টুডিওর দরজা পর্যন্ত লাল গালিচা বিছিয়ে তাঁকে রিসিভ করা হয়।

মৌসুমী ও ওমর সানি একত্রে কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি সিনেমায়

প্রশ্ন :

নায়ক ওমর সানির জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি নায়িকা মৌসুমী। এই প্রাপ্তি আপনার কাছে কেমন?

স্ত্রী হিসেবে সে অসাধারণ। আমি সৌভাগ্যবান যে এ রকম একজন ভালো স্ত্রী পেয়েছি। আমি সৌভাগ্যবান, আমার সন্তানদের জন্য একজন ভালো মা পেয়েছি। স্বামীকে কীভাবে ধরে রাখতে হয়, স্বামী শত অপরাধ করার পরও কীভাবে স্যাক্রিফাইস করতে হয়, মাফ করতে হয়, ভালোবাসতে হয়, সবই সে করেছে।

প্রশ্ন :

আপনি কি সে রকম কোনো অপরাধও করেছিলেন?

পৃথিবীতে চলার পথে, আচরণে মানুষ কত কিছুই তো করে। আমি আমার আশপাশের মানুষকে দেখেছি, নিজের জীবনে দেখেছি, নিজের ছেলে–মেয়েকে দেখছি। মানুষ ভুল করবেই। আমার স্ত্রী যদি সবকিছুকে পজিটিভলি না নিত, শিল্পী হিসেবে আমি কীভাবে কাজ করতাম, আমি স্যাক্রিফাইস না করলে সে কীভাবে কাজ করত?

প্রশ্ন :

অভিনেত্রী মৌসুমীর কাছ থেকে জন্মদিনে মনে রাখার মতো কী পেয়েছেন?

গত ২০ বছর আমার জন্মদিনের ব্যাপারে আমাদের দুজনের অবস্থান একই। এর আগের কথা যদি বলি, সে রকম কিছু এখন আর মনে পড়ছে না। বেশির ভাগ সময় তো কাজের মধ্যেই কেটে গেছে। একবার বোধ হয় আমার জন্মদিনে শুটিং ইউনিটের সবাইকে নিজে বাজার ও রান্না করে খাইয়েছিল।

ওমর সানী, ছেলে ফারদিন, মেয়ে ফাইজা ও মৌসুমী

প্রশ্ন :

ঈদে ছেলে কী কিনে দিলেন?

ছেলে, ছেলের বউ, মেয়ে পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছে। বাড়ির বাইরে থেকেও বেশ কিছু উপহার ও পাঞ্জাবি পেয়েছি। ওমর সানী ফ্যান ক্লাবের সেক্রেটারি সালাউদ্দিন আমাকে একটি পাঞ্জাবি দিয়েছিল। সেটি পরেই ঈদ করেছি, নামাজ পড়তে গেছি। তার উপহার আমার কাছে অনেক বড় উপহার।

প্রশ্ন :

ঈদের সিনেমা দেখতে যাবেন?

‘শান’ দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। আমার এলাকার ছোট ভাই সিয়াম আবদার করেছে, তাঁর সঙ্গে একদিন ‘শান’ দেখতে যাব। আমি প্রত্যাশা করি, ‘শান’–এর পাশাপাশি ‘গলুই’ ও ‘বিদ্রোহী’র টাকা উঠে আসুক। এমনকি ‘বড্ড ভালোবাসি’ ছবির প্রযোজক ও নায়িকা নীপা মেয়েটার ছবির টাকা উঠে আসুক। তাহলে তারা খুশি মনে আরেকটি ছবিতে বিনিয়োগ করতে পারবে।