সুযোগ পেলে নায়িকা চরিত্রেও অভিনয় করতে চাই

শাহেদ আলী
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ টেলিভিশনে আজ রোববার শুরু হচ্ছে ধারাবাহিক নাটক ‘এখানে কেউ থাকে না’। অনিমেষ আইচের রচনা ও পরিচালনায় ধারাবাহিকটিতে অভিনয় করেছেন শাহেদ আলী। সপ্তাহে রবি ও সোমবার দুই দিন নাটকটি দেখানো হবে। এদিকে সম্প্রতি ঢাকার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এই অভিনেতার ‘নবাব এলএলবি’। ঈদের নাটকেরও শুটিং করছেন তিনি।

প্রশ্ন :

লকডাউনে কেউ কেউ শুটিং করছেন। আপনিও শুটিংয়ে নাকি?

তিন দিন টানা শুটিং ছিল। লকডাউনের কারণে ক্যানসেল হয়েছে। বাসা থেকে একদমই বের হই না।

প্রশ্ন :

‘এখানে কেউ থাকে না’-এর ট্রেলার দেখে মনে হলো হরর ধাঁচের নাটক।

এই ধরনের নাটকে আগে অভিনয় করা হয়নি। হররের পাশাপাশি সুপারন্যাচারাল ব্যাপারও আছে। আমি এত দিন ধরে যত ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি, এমন গল্প পাইনি। আমার মনে হয়, দর্শকেরা এই ধরনের নির্মাণও দেখেননি। অনিমেষ আইচ আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু, একসঙ্গে থিয়েটার করেছি, ও যেভাবে এবং যে বিষয়ে গল্পটা বলতে চেয়েছে, পেরেছে। টেলিভিশনে এখন যে ধরনের নাটক চলে, তার চেয়ে ভিন্নভাবে গল্পটা বলতে চেয়েছে।

প্রশ্ন :

বন্ধু পরিচালক বলেই কী এসব বলছেন?

আমি তো আগেও ওর পরিচালনায় কাজ করেছি। এবার মনে হয়েছে, অনিমেষ আরও বেশি মগ্ন হয়ে কাজ করেছে। বন্ধু তো বন্ধুত্বের জায়গায়। এই নাটকে সত্যিই সে নিজেকে ছাড়িয়ে গেছে। অনেক বেশি সিনসিয়ার ছিল, যদিও সব সময় থাকে। অনেক ভালো অভিনয়শিল্পীরাও যুক্ত ছিলেন। অনেক ভালোবেসে গল্পটা বলতে চেয়েছে, মনে হয়েছে।

শাহেদ আলী।
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

নাটক দেখে দর্শক ভয় পাবেন তো?

ভয়ের চেয়েও দর্শক নানা রকমের অনুভব পাবেন। এটার মধ্যে কমেডি যেমন আছে, তেমনি ভালোবাসা, হিংসা ও সম্পর্কের খেলা আছে। এককথায় অনেক ধরনের মিশেল আছে। নাটকে আমি হাকিম নামের একজন সচেতন থিয়েটারকর্মী। বাকিটা দর্শকেরা দেখুক, নিজেরা জানুক।

প্রশ্ন :

টেলিভিশনে নতুন কী নাটক প্রচারিত হচ্ছে?

দুটি ধারাবাহিক। বাংলাভিশনে ‘আম্মা’ আর চ্যানেল আইয়ে ‘ডিরেক্টর’।

স্ত্রী দীপা খন্দকারের সঙ্গে শাহেদ আলী
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

‘নবাব এলএলবি’তে আপনি আইনজীবীর সহকারী। চলচ্চিত্রে কমেডি ধাঁচের চরিত্রে আগে কি অভিনয় করা হয়েছিল?

এই ধরনের চরিত্রেও আগে অভিনয় করিনি। তাই নিজেরও একটা তাগিদ ছিল, নিজেকে ভেঙে অন্য কোনো চরিত্রে দেখার। পরিচালক বলেছিলেন, এই চরিত্র আমার জনরার বাইরের। তাই নিজের কাছে নিজেকে প্রুফ করার ব্যাপারও ছিল। কারণ, আমি নিজের জনরা কখনোই ডিসাইড করিনি। কেউ আসলে তো জানেই না, আমার জনরা কী, অ্যাজ অ্যান অ্যাক্টর। সেই চ্যালেঞ্জ নিতে চেয়েছিলাম, দেখি, লেটস ট্রাই টু মেক অ্যানাদার জনরা অব মাইসেলফ।

প্রশ্ন :

আপনার আসলে জনরা কোনটি?

আমি আসলে একজন অভিনেতা, যেকোনো চরিত্রে অভিনয় করব। সুযোগ পেলে নায়িকা চরিত্রেও অভিনয় করতে চাই। জানি না, সেই সুযোগ কোনো দিন পাব কি না। আমি নিজের জনরা ফিক্সড করতে চাই না।

প্রশ্ন :

কেন এমন ইচ্ছা হয়েছে?

আমার দাদা যাত্রাপালায় নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করতেন। আমার নিজের ভেতরে তাই যেকোনো ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার ইচ্ছা। তবে এই ইচ্ছার কথা কাউকে কখনোই বলা হয়নি।

শাহেদ আলী
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনি ও আপনার স্ত্রী দীপা খন্দকার, দুজনকেই দেখি হলে গিয়ে সিনেমা দেখেন। ‘নবাব এলএলবি’ দেখেছেন?

সিনেমা তো বড় পর্দায় দেখারই জিনিস। বড় পর্দায় দেখতেই আমরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। সিনেমাটি এখনো দেখার সুযোগ হয়নি। ৩০ জুন পর্যন্ত দুজনেরই শুটিং ছিল। একসঙ্গে দেখার ইচ্ছা ছিল, শুটিং শেষের আগেই লকডাউনের কারণে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউন শেষ হলে একসঙ্গে সিনেমাটি দেখব।

প্রশ্ন :

অনেকে বলছে, ওটিটির কারণে দর্শক সিনেমা হলে অনাগ্রহী হয়ে উঠবে?

পৃথিবীর প্রায় দেশে কিন্তু ওটিটি আছে। এমন নয় যে শুধু বাংলাদেশেই ওটিটি এসেছে। সিনেমার দর্শক কিন্তু সব সময় আলাদা, তাঁরা বরাবরই হলে গিয়েই সিনেমা দেখেন। এভাবে সিনেমা দেখার ব্যাপারটা কিন্তু যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। ওটিটি সিনেমার দর্শককে ডিস্টার্ব করবে, এমন মনে হওয়ার কিছু নেই।

প্রশ্ন :

নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করছেন।

আমি পুরোদস্তুর মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমায় কাজ করতে চাই। ভিন্নমাত্রার সব চরিত্রে কাজ করতে চাই। কখনো ভিলেন, কখনো কমেডি চরিত্রে আসতে চাই। নতুন নতুন চরিত্র নির্মাণ করতে চাই। অবশ্য আমরা এখানে কাউকে কাউকে ফিক্সড করে দিই, অমুক ভিলেন, তমুক কমেডির জন্য। অভিনয়শিল্পীর তো জনরা ফিক্সড করার কিছু নেই। হুমায়ুন ফরীদি ভাইকে আমরা একটা জনরায় কখনোই ফেলতে পারি না। আরও বড় বড় অভিনেতা যাঁরাই ছিলেন, এই যেমন ফতেহ লোহানী সাহেবরা কিন্তু ভিন্ন মাত্রার চরিত্রই করে গেছেন। সেই জায়গা থেকে ভিন্নমাত্রার চরিত্রে অভিনয় করে যেতে চাই।

‘অজ্ঞাতনামা’ ছবির একটি দৃশ্যে ফজলুর রহমান বাবুর সঙ্গে শাহেদ আলী
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

এখন আপনাকে নিয়ে মূলধারার চলচ্চিত্র নির্মাতারাও কাজ করছেন।

মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমার নির্মাতারা তাঁদের নিজস্ব গণ্ডির অভিনেত্রী–অভিনেত্রীদের নিয়ে কাজ করতে চান। আমাদের কাজ তাঁরা দেখেন না। দেখতে চানও না। অলটারনেটিভ অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে তাঁদের কোথায় যেন অনীহা থাকে। আমি মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমা পরিচালকদের অনেকের সঙ্গে কাজ করেছি। প্রত্যেকে কাজ করার আগপর্যন্ত কিছুই বলেননি। কাজ করার পর একটা জিনিস বলেছেন, ‘যদি আগে জানতাম, একসঙ্গে আরও কাজ করতাম।’ নিজেকে আগে জানানোর যে বিষয়, তা তো জানি না। আমি তো অনেক দিন ধরেই কাজ করছি। কাজ দিয়েই নিজেকে জানানোর প্রচেষ্টা থাকে। তাঁদের সঙ্গে আসলে আমাদের একটা কমিউনিকেশন গ্যাপও আছে।