সেই তাগিদ থেকেই আমার যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল

অভিনয়জীবনের এক যুগ পূর্ণ হলো অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর। ২০১০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁর অভিনীত প্রথম নাটক ‘তুমি থাকো সিন্ধুপারে’ প্রচারিত হয়েছিল। ইফতেখার আহমেদ ফাহমি পরিচালিত নাটকটিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন মাহফুজ আহমেদ। এরপর প্রায় সাড়ে চার শ নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। পৌঁছে গেছেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সম্প্রতি তাঁর অভিনীত প্রথম ওয়েব ফিল্ম রেডরাম দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন। এক যুগের অভিনয়ভ্রমণ নিয়ে কথা বললেন তিনি।

মেহজাবীন চৌধুরী

প্রশ্ন :

অভিনয়জীবনের এক যুগ পূর্ণ হলো। এই অর্জনে আপনার শ্রম–মেধা যেমন আছে, তেমন নিশ্চয়ই আরও মানুষের ভূমিকা আছে?

অবশ্যই। ১২ বছর আগে কিংবা তারও আগে পরিবার ও সমাজের নানা বাধা, নানা শর্তের কারণে বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে এসে মেয়েদের কাজ করা সহজ ছিল না। সেই জায়গা থেকে এখানে কাজ করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছি আমার বাসা থেকে। আমার বাবা-মা সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন। একটা মেয়ের ইচ্ছাকে সমর্থন করা। তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন, তাঁর পরিশ্রমকে মূল্যায়ন এবং তাঁর কাজের সুযোগ করে দেওয়ার বিষয়টি আমি বাসা থেকে শিখেছি। বাবা-মা আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। এ কারণে আমি সফলতার সঙ্গে ১২ বছর পার করতে পেরেছি। পাশাপাশি সঙ্গে ছিলেন অসংখ্য দর্শক। কাজের ভালো–মন্দ দর্শকই বিচার করেন। তাঁদের বিচার–বিশ্লেষণই আমার এগিয়ে যাওয়ার শক্তি।

প্রশ্ন :

অভিনয়ের আরও অনেক পথ বাকি। এ মুহূর্তে কোন বিষয়টা বেশি মনে পড়ছে?

কোনো অভিনয়শিল্পীই চান না তাঁর পথ এক যুগ পর শেষ হয়ে যাক। এক যুগ চলে যায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতেই। যেকোনো ক্ষেত্রেই হোক, নিজের পরিচিতি পেতে, শীর্ষে যেতেই ১০ বছর লেগে যায়। সেই জায়গা থেকে এখন মনে হচ্ছে আমার যাত্রা শুরু হলো। এ পথ আরও অনেক বাকি।

‘বড় ছেলে’। নাটকটি আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। আমার অভিনীত নাটকের তালিকায় এক নম্বর হয়ে থাকবে এটি। এই কাজটি ইন্ডাস্ট্রির কিছুটা পরিবর্তন এনেছে। ‘চিরকাল আজ’ নাটকটিও আমার পছন্দের। গল্পের দিক থেকে এটি আমার প্রিয় নাটক।
মেহজাবীন চৌধুরী

প্রশ্ন :

কোনো অতৃপ্তি আছে?

বড় কোনো অতৃপ্তি নেই। কিন্তু ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেখেছি নারীপ্রধান গল্প বা নারীদের নিয়ে যে গল্প হতে পারে সেই চিন্তাভাবনা খুব একটা ছিল না। এখন হচ্ছে। তবে আরও অনেক হওয়া উচিত। এখন নারীরা অনেক এগিয়েছেন। ভালো গল্প পাচ্ছেন, তাঁরা ভালো অভিনয় করছেন। শুধু তাঁদের কাজ দেখতেই মানুষ হলে যাচ্ছেন। তাঁদের জন্য ওটিটিতে সাবস্ক্রাইব করছেন দর্শক।

‘বড় ছেলে’ নাটকে অপূর্ব ও মেহজাবীন।

প্রশ্ন :

আপনার পছন্দের কাজের কথা বলুন

আমার প্রতিটি কাজই সন্তানের মতো। শতভাগ চেষ্টা দিয়ে প্রতিটি কাজ করি। তবে কোনো মানুষের সব কাজ ভালো হয় না। আমারও তা–ই। এর মধ্যে অনেক কাজই আমার মনে পড়ছে। একটি কাজের কথা না বললেই নয়। যে কাজটি আমাকে দর্শকের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছে। কিশোর থেকে প্রবীণ—সবাই নাটকটি দেখেছেন, প্রশংসা করছেন। সেটা হলো ‘বড় ছেলে’। নাটকটি আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। আমার অভিনীত নাটকের তালিকায় এক নম্বর হয়ে থাকবে এটি। এই কাজটি ইন্ডাস্ট্রির কিছুটা পরিবর্তন এনেছে। ‘চিরকাল আজ’ নাটকটিও আমার পছন্দের। গল্পের দিক থেকে এটি আমার প্রিয় নাটক। এই নাটকটি আমি অন্য কোনো কাজ দিয়ে আদৌ ছাপিয়ে যেতে পারব কি না, জানি না। আমার অভিনয়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল এই নাটকটিতে। আরও অনেক ভালো ভালো কাজ আছে, নাম বলে শেষ করা যাবে না।

বাস্তবতা হলো ফিল্ম বা ওয়েব ফিল্মের বাজেট অনেক বেশি থাকে। সেখানে গল্পের ডেভেলপমেন্ট, স্থায়িত্বকাল বেশি থাকে। ক্যারেক্টারাইজেশনের সময় পাওয়া যায়। চরিত্রে উন্নতি, চরিত্রটিকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ থাকে। এ কারণে ওটিটিতে কাজ করলে এই সুবিধাগুলো পাওয়া যায়।
মেহজাবীন চৌধুরী

প্রশ্ন :

কোনো চরিত্রের প্রতি দুর্বলতা আছে, যে চরিত্রে এখনো অভিনয় করেননি?

এ রকম অনেক চরিত্র আছে। যেগুলো এখনো করিনি। আইনজীবী, পাইলট কিংবা জাহাজের ক্যাপ্টেন চরিত্রে অভিনয় করা হয়নি। এসব চরিত্রে কাজের ইচ্ছা আছে।

প্রশ্ন :

ইদানীং নাটক থেকে ওটিটির কাজে আগ্রহ বেড়েছে কি?

আমি নাটকের মানুষ। এই নাটক থেকেই আমার জীবনের এত কিছু অর্জন। স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া। অনেক মানুষ ওটিটির কাজ না দেখে নাটকই দেখেন, দেখবেন। সুতরাং এই মাধ্যমটি কখনোই ছাড়ব না। তবে বাস্তবতা হলো ফিল্ম বা ওয়েব ফিল্মের বাজেট অনেক বেশি থাকে। সেখানে গল্পের ডেভেলপমেন্ট, স্থায়িত্বকাল বেশি থাকে। ক্যারেক্টারাইজেশনের সময় পাওয়া যায়। চরিত্রে উন্নতি, চরিত্রটিকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ থাকে। এ কারণে ওটিটিতে কাজ করলে এই সুবিধাগুলো পাওয়া যায়। ৪০ মিনিটের টেলিভিশন নাটকে সময়টা কম। চরিত্রের ডেভেলপমেন্টের সুযোগ কম থাকে। দুই মাধ্যমে দুই রকম ভালো লাগা কাজ করে।

২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেখেছি নারীপ্রধান গল্প বা নারীদের নিয়ে যে গল্প হতে পারে সেই চিন্তাভাবনা খুব একটা ছিল না। এখন হচ্ছে। তবে আরও অনেক হওয়া উচিত। এখন নারীরা অনেক এগিয়েছেন। ভালো গল্প পাচ্ছেন, তাঁরা ভালো অভিনয় করছেন। শুধু তাঁদের কাজ দেখতেই মানুষ হলে যাচ্ছেন।
মেহজাবীন চৌধুরী

প্রশ্ন :

হুট করেই ‘রেডরাম’ ওয়েব ফিল্মটি বড় পর্দায় দেখানো হলো। আপনাকে প্রথমবার বড় পর্দায় দেখে দর্শকের কী প্রতিক্রিয়া পেলেন?

আমি বড় পর্দায় কাজ করব কি করব না, এমন প্রশ্ন কেন আসবে এই যে দেখুন, না চেয়েই বড় পর্দায় আমাকে পেয়ে গেছেন দর্শক। দর্শক হয়তো বুঝে ওঠার আগেই আমি বড় পর্দায় চলে এলাম। সুতরাং কখন আসব, কীভাবে আসব, জানা নেই আমার। সবকিছু সময় ঠিক করে দেবে।

ভালো চরিত্র ও গল্পে মেহজাবীনের আগ্রহ
চরকির সৌজন্যে

প্রশ্ন :

বড় পর্দায় নিজেকে দেখে কেমন লাগল?

অনেক ভালো লেগেছে। প্রতিটি দৃশ্যে দর্শক হাততালি দিচ্ছিলেন। শিস দিচ্ছিলেন। এ এক অন্য রকম অনুভূতি।

আমার অভিনয়জীবনের এক যুগ হয়েছে। তাই বলে আমি অভিনয় থেকে বিদায় নিচ্ছি, তা নয়। সুযোগ এলেই বড় পর্দায় কাজ হবে। তবে অবশ্যই ভালো কাজের মাধ্যমে আমি বড় পর্দায় নিজেকে দেখতে চাইব।
মেহজাবীন চৌধুরী

প্রশ্ন :

দর্শকের উচ্ছ্বাস দেখে বড় পর্দায় কাজের আগ্রহ বেড়েছে?

সেটা অন্য কথা। বড় পর্দায় কাজ করতে হবে। আমার অভিনয়জীবনের এক যুগ হয়েছে। তাই বলে আমি অভিনয় থেকে বিদায় নিচ্ছি, তা নয়। সুযোগ এলেই বড় পর্দায় কাজ হবে। তবে অবশ্যই ভালো কাজের মাধ্যমে আমি বড় পর্দায় নিজেকে দেখতে চাইব।

প্রশ্ন :

১২ বছর আগে এ অবস্থানে নিজেকে দেখতে চেয়েছিলেন?

অবশ্যই। আমি আসলে কোনো কিছুই সহজে ছেড়ে দিই না। আমি দেশের বাইরে বড় হয়েছি। একসময় বাংলা একেবারেই বলতে পারতাম না। প্রথম দিকে নাটকে কাজ করতে গিয়ে সমস্যা হতো। তখন যদি মনে করতাম, সমস্যা হচ্ছে। থাক, নাটক আর করব না। শুধুই ফটোশুট করি কিংবা শুধুই টিভিসি করি। তাহলে এত দূর আসতে পারতাম না। দর্শক যখন লাক্স–চ্যানেল আই সুপারস্টারের মুকুট আমার মাথায় পরতে সহযোগিতা করেছিল, তখন থেকেই আমার দায়িত্ববোধ বেড়ে গিয়েছিল। আমি তাঁদের খালি হাতে ফেরাতে পারি না। তাঁদের জন্য কিছু করতে হবে। দর্শক আমাকে এত বড় একটি উপহার দিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেননি, সেই প্রমাণটা আমাকেই দিতে হবে। সেই তাগিদ থেকেই আমার যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল। যার সফলতা আমাকে এই পর্যন্ত টেনে এনেছে।

আফরান নিশো ও মেহজাবীন
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন