সেই শিল্পীর কটাক্ষ আমার জন্য আশীর্বাদই হয়েছে

মেহরীন

প্রায় দুই বছর পর ‘বৃষ্টি এলো’ নামে নতুন একটি গান নিয়ে ফিরলেন মেহরীন। এই গানসহ নানা বিষয়ে ‘বিনোদন’–এর সঙ্গে কথা বলেছেন এই শিল্পী।

প্রশ্ন :

২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অ্যালবাম প্রকাশে ধারাবাহিকতা ছিল। পরে দীর্ঘ বিরতি। কেন?

একটা সময় বুঝতে পারলাম, মানুষ একটি করে গান শোনা শুরু করেছে। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, ভালো বাজেট দিয়ে একটা একটা করে অডিও ভিডিও গান করব। এভাবে বিভিন্ন সময়ে ‘ঢোল’, ‘আজ এক নতুন দিন’, ‘শহীদ মিনার’, ‘রিমঝিম এই বর্ষায়’ প্রভৃতি গান করি। একটা সময় মনে হলো, গানগুলোর একটা বাসা দরকার। তখন ১০টি গান নিয়ে ‘সেভেন’ নামে অ্যালবামটি করলাম ২০১৫ সালে। যদিও তখন সিডির যুগ শেষ। তা–ও অ্যালবামটি করলাম। তাই বলতে পারেন, গান প্রকাশে বিরতি ওইভাবে নিইনি। প্রতিবছরই একটা–দুইটা করে গান দিয়েছি।

মেহরীন

প্রশ্ন :

নাকি শ্রোতার কাছে আপনার গানের চাহিদা কমে গেছে?

না না, তা হবে কেন? ২০১৯ সালে ‘যাযাবর’ গানটি করি। আমার জনপ্রিয় গানগুলোর মতোই যাযাবর শ্রোতারা শুনেছেন! আমার সঙ্গের অনেক শিল্পী তো আগেই হাল ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন। আমি এখনো কাজ করে যাচ্ছি। তবে বলতে দ্বিধা নেই, একজন ইয়াং শিল্পীর প্রথম প্রথম যে ধরনের দর্শক ক্রেজ থাকে, একটা সময় সেই ক্রেজ তো কিছুটা কমেই!

প্রশ্ন :

আপনার বেশির ভাগ গানই পপ ঘরানার। শুরু থেকেই এ ধরনের গান বেছে নিয়েছেন কেন?

শুরু থেকেই নিজের স্বকীয়তা নিয়ে কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম। গানে আমার স্ট্যান্ড থাকুক, এটাই চেয়েছি। যেমন রবীন্দ্রনাথের গান, নজরুলের গান কিংবা ফোক গান আমার চেয়ে কোনো না কোনো শিল্পী ভালো গাইছেন। আমাকে কেন এসব গাইতে হবে। তবে খুব যে পরিকল্পনা করেই পপ ঘরানার গান বেশি করেছি, এমনটা নয়। নিজের সিক্সথ সেন্স থেকে এই ঘরানার গান করা।

মেহরীন

প্রশ্ন :

একসময় উপস্থাপনাও করতেন। এখন আর দেখা যায় না কেন?

২০০০ সালে মেয়ের জন্ম হলো। এরপর ২০০২ সাল পর্যন্ত পরপর দুটি গানের অ্যালবাম করলাম। একদিকে গান, অন্যদিকে উপস্থাপনা চলতে থাকে। ওই সময় একজন বড় মাপের শিল্পী আমাকে কটাক্ষ করে একটা কথা বলেছিলেন। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম, গান নিয়েই এগোতে হবে। এখন মনে হয়, সেই শিল্পীর কটাক্ষ আমার জন্য আশীর্বাদই হয়েছে।

প্রশ্ন :

সম্প্রতি আপনার কণ্ঠে ‘বৃষ্টি এলো’ নামের একটি গানের ভিডিও ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে।

এটি আসলে বর্ষার গান। লিখেছেন হাসিবুর রেজা কল্লোল। সুর ও সংগীত করেছেন মুনতাসীর তুষার। যাঁরা শুনেছেন, সবাই পছন্দ করেছেন। গানটিতে মেঘ, বৃষ্টির মতো একটা স্নিগ্ধ ব্যাপার আছে। বাংলাদেশের মাটি ও প্রকৃতিকে সুন্দরভাবে তুলে আনা হয়েছে। ভিডিওটিতে আমি নিজেও আছি।

মেহরীন

প্রশ্ন :

এ পর্যন্ত যত অ্যালবাম, সলো করেছেন, সব কটিই নিজের প্রযোজনায় করা। ‘বৃষ্টি এলো’ অন্যের প্রযোজনায় কেন?

এ পর্যন্ত যত গান করেছি, সবই আমার নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘গো গার্ল প্রোডাকসন্স’ থেকে করেছি। কিন্তু ‘বৃষ্টি এলো বাইরের প্রযোজনা। কারণও আছে। আমার খুবই শ্রদ্ধার একজন মানুষ গানটি করতে অনুরোধ করেছিলেন। তাঁর কথার বাইরে যেতে পারিনি। তা ছাড়া গানটির সঙ্গে জড়িত কল্লোল ভাই ও তুষার ভাই আমার খুব পছন্দের মানুষ। সব মিলিয়ে কাজটি করে ফেললাম। ভাবছি, এখন থেকে বাইরের পছন্দের কাজ করব।

গানের মিউজিক ভিডিওতে মেহরীন

প্রশ্ন :

এখন কী নিয়ে ব্যস্ততা?

বাসায় একটি স্টুডিও সেটআপ করেছি, যাতে অনলাইন কাজগুলো করতে পারি। গানের রেকর্ডিং করা শিখছি। নিজেই এখন গান রেকর্ডিং করতে পারি। স্টুডিওতে বসে ভিডিও করতে শিখেছি। কোভিডের মধ্যেও অনলাইনে অনুষ্ঠান করতে সমস্য হচ্ছে না। প্রচুর অনুষ্ঠানও করি। পাশাপাশি গানের চর্চা করতে পারছি। আগামীতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গানের কিছু কাজ হবে। স্টুডিওতে বসেই তাঁদের সঙ্গে জুম মিটিং করতে পারছি। এ ছাড়া আমার নিজের ইউটিউব চ্যানেলটি সুন্দর করে গুছিয়েছি। যেখানে ১৯৯৮ সালে থেকে এ পর্যন্ত আমার যত গান, গানের ভিডিও আছে—সব পাওয়া যাবে। আমার অনেক গান পরে অনেকে গেয়েছেন। এভাবে অনেক গান ছড়িয়ে–ছিটিয়ে গিয়েছিল। এখন আমি সব গান কপিরাইট করে নিয়েছি। এখন আমার গান অন্য কেউ করতে হলে আমাকে পে করতে হবে।

মেহরীন

প্রশ্ন :

কোন দেশের সঙ্গে কাজ করছেন?

বছর দশেক হবে, ফ্রান্সে গিয়ে জামেল নামে এক আলজেরিয়ান ভায়োলিনিস্ট ও কম্পোজারের সঙ্গে কাজ করেছিলাম। কাজী নজরুল ইসলামের ‘মধুর বাঁশরী বাজে’ ও তিনটি মৌলিক গান। এর মধ্যে দুটি ইংরেজি ও একটি বাংলা। এলিজাবেথ নামে আমাদের একজন ম্যানেজার ছিলেন। ম্যাজকেল নামে তাঁর একটি ব্যান্ডও আছে। তাঁরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মাটির গান করেন। ওদের সঙ্গে আমার কিছু ফোক গান করার কথা ছিল। নানা কারণে অনেক দিন ধরেই কাজটি করা হচ্ছিল না। আমি মনে করছি, এখন কাজটি করার মোক্ষম সময়। গত সপ্তাহে জুম মিটিং করেছি। গান নির্বাচনের কাজ করছি। ভারত, বাংলাদেশ—এই দুই দেশে এসে গান করার কথা ছিল। যেহেতু বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে এখানে ঢুকতে পারছেন না তাঁরা, তাই অনলাইনেই গানগুলো করব।

মেহরীন