হাবিবকে বলি—ঘর যদি করো, সংসারী মেয়েকে নিয়েই করো

স্টুডিওতে ছেলে হাবিব ওয়াহিদের সঙ্গে বাবা ফেরদৌস ওয়াহিদছবি : প্রথম আলো।
গায়কির পাশাপাশি সংগীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ তাঁর স্টাইলেও মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। বাংলাদেশি সংগীতের এই পপ তারকা সম্প্রতি করোনা জয় করেছেন। ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে, বাপ বেটা (হাবিব ওয়াহিদ) স্টুডিওতে গাইছেন। দুজনে মিলে আবার কি নতুন কিছু সৃষ্টি করতে চলছেন? শ্রোতাদের জন্য থাকছে কি চমক? তাই জানতে গত শনিবার দুপুরে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।

প্রশ্ন :

আপনি কি স্টুডিওতে নাকি বাসায়?

আমি স্টুডিওতেও না, বাসাতেও না। এখন আমি গ্রামেই থাকি। ঢাকায় গিয়ে গান গাই, আবার চলে আসি। ঢাকায় থাকতে এখন একদম ভালো লাগে না।

ফেরদৌস ওয়াহিদ
ছবি : প্রথম আলো

প্রশ্ন :

ঢাকায় ভালো না লাগার কারণ কী?

কারণ, আমি কোনো রকম আলট্রা মডার্ন কালচারে অভ্যস্ত নই। ক্লাবে যাই না, কিছুই করি না। করোনার পর এখন লোকজন সবাই আমাকে দেখতে আসুক, এটাও চাই না। গ্রামে থেকে শান্তি পাই।

প্রশ্ন :

গ্রামে কী করে সময় কাটান?

আমার নিজস্ব একটা স্পিডবোট ও ছোট লঞ্চ আছে। মন চাইলে নদীতে ঘুরিফিরি। সব ধরনের শাকসবজি, মাছ আছে। খাই–দাই, বেশ আনন্দ পাই। হাবিব তাঁর বন্ধুদের নিয়ে এসেছিল।

ফেরদৌস ওয়াহিদ
ছবি: ফেসবুক থেকে

প্রশ্ন :

ফেসবুকে দেখলাম, হাবিব বাজাচ্ছেন, আপনি গাইছেন। কী ছিল সেটা?

আমরা সাধারণত স্টুডিওতে যা করি, এই ব্যাপারটাও তাই। একদম র ভয়েস। করোনার পর একদিন হঠাৎ হাবিব আমাকে স্টুডিওতে ডেকে নিয়ে গাইতে বলল। আমি গাওয়ার পর সে লাফ দিয়ে উঠল। বলল, এত ভালো কীভাবে গাইতেছ! কণ্ঠটা তার পছন্দ হলো। আমাকে হঠাৎ বলল, করোনার আগের চেয়ে করোনার পর তোমার কণ্ঠ আরও মিষ্টি হয়েছে। আলাদা কোনো ইফেক্ট ছাড়াই সুন্দর। এদিকে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গান ছেড়ে দেব। তার আগেই হাবিব আমার গাওয়া কিছু গান নতুন করে রেকর্ডের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যতগুলো সুপারহিট গান আছে, সব কটি গানের মুখটাই শুধু গাইব। সবাইকে আবার গানগুলোর কথা মনে করিয়ে দিতেই এই আয়োজন।

ফেরদৌস ওয়াহিদ
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

শুনলাম, এবার চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে আপনাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হবে।

যেকোনো সম্মাননা শিল্পীর জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণার। আমাকে এত বড় সম্মাননায় সন্মানিত করার জন্য চ্যানেল আইয়ের প্রতি আমি সত্যিই খুব কৃতজ্ঞ। আমি তো ভেবেছিলাম আগামী বছর থেকে গান ছেড়ে দেব। কিন্তু তার আগেই এত বড় পাওয়া কখনো আশা করিনি।

ফেরদৌস ওয়াহিদ
ছবি: ফেসবুক থেকে

প্রশ্ন :

বাপ–বেটা একসঙ্গে গাইতে কেমন লাগে?

খুব ভালো লাগে। হাবিব বাজাচ্ছে, আমি গাইছি—এ এক অসাধারণ অনুভূতি। করোনায় যে অবস্থায় ছিলাম, এরপর এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে, আমি নিজেও কল্পনা করিনি। হাবিবও করেনি।

প্রশ্ন :

গান কেন ছাড়বেন?

গাইব। তবে এখন থেকে পাঁচ লাখ টাকার নিচে সম্মানী দিলে গাইব না। এই সম্মানীতে এক ঘণ্টা গাইব। সম্মানীর অর্থ গরিবদের বিলিয়ে দেব। গড়পড়তা অনুষ্ঠান আর করব না। জীবনের অনেক সময় পার করে ফেললাম। এবার নিজের মতো করে কাটাতে চাই।

স্টুডিওতে বাবা ফেরদৌস ওয়াহিদের সঙ্গে ছেলে হাবিব ওয়াহিদ
ছবি : প্রথম আলো।

প্রশ্ন :

করোনায় গানের জগতের অবস্থা জানেন?

আমার মনে হয় আর্থিকভাবে শিল্পীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মানুষেরা মন দিয়ে যে গান শুনবে, সেই অবস্থা নেই। কারোরই মন ভালো নেই। সব মিলিয়ে আগের চেয়ে এখন বিনোদনের প্রতি মানুষের ৫০ ভাগ আগ্রহ কমে গেছে। সবকিছু স্বাভাবিক হলেই হয়তো আবার পরিস্থিতি আগের মতো হবে।

প্রশ্ন :

কোভিড–১৯ থেকে সেরে ওঠার পর কেমন আছেন?

তিন মাসের মধ্যে দুইটা সিটিস্ক্যান করেছি, রিপোর্ট ভালো। ডাক্তার বলেছেন, ঠান্ডা যেন না লাগে। আমি ভালো আছি। শরীরটা ভালো, মনটাও চাঙা।

একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মঞ্চে ছেলে হাবিবের সঙ্গে বাবা ফেরদৌস ওয়াহিদ
ছবি : প্রথম আলো।

প্রশ্ন :

করোনার মধ্যে যেসব গান তৈরি হলো, সেগুলো কেমন লেগেছে আপনার?

মানুষের মনেই তো শান্তি নেই। শান্তি না থাকলে শিল্পীরা ক্রিয়েট করবে কীভাবে? সুন্দর সময়ের অপেক্ষায় থাকতে হবে সবাইকে। এখন গুণগত মান বাড়ার চেষ্টা কম হবে। যাদের একদম পেটে–ভাতে জীবন চলে যায়, তারাই খুশিমনে গান করবে। আর যারা মনে করবে অনেক টাকা কামাতে হবে, তারা আয় নিয়ে ভাববে। একটা প্রবাদ আছে, গান হয় আমিরি না হয় গরিবি। তার মানে যার অনেক আছে তার, যার কিছু নেই তারও। সেই অবস্থায় আবার ফিরছে মনে হচ্ছে।

প্রশ্ন :

আপনার বাড়িতে শাকসবজির চাষাবাদ করেন কারা?

আমাদের এখানে সবকিছু কেমিক্যাল ছাড়াই চাষ করা হয়, শ্রমিক আছেন। আমরা নিজেরা দেখাশোনা করি। মূলত আমার চাচা এমদাদ মাস্টারই দেখাশোনা করেন। হাবিব আর তার মা মাঝেমধ্যে আসে। অসাধারণ সময় কাটিয়ে যায়।

প্রশ্ন :

জীবনের সামনের সময়টা বুঝি গ্রামেই কাটাতে চান?

আয়ের উৎস থাকতে থাকতেই সব ছেড়ে গ্রামে চলে এসেছি। আমি গ্রামেই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চাই।

ফেরদৌস ওয়াহিদ
ছবি : প্রথম আলো।

প্রশ্ন :

নতুন করে ছেলে হাবিব ওয়াহিদের বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছেন?

যার বয়স হয়ে গেছে ৪১, তাকে আমি কীভাবে বোঝাব। ইদানীং একটা বিষয় খেয়াল করেছি, ছেলেকে সে প্রচুর সময় দিচ্ছে। গানেও সময় দিচ্ছে। সংগীতের প্রতি তার ভালোবাসা অনেক। কিছুদিন আগেও যে দুষ্টুমি করত, সেসব থেকে পুরোপুরি সরে এসেছে। করোনার মধ্যে মানসিকভাবে হাবিবের চিন্তা-চেতনায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আমি সব সময় হাবিবকে একটা পরামর্শ দিই—ঘর যদি করো, একজন সংসারী মেয়েকে নিয়েই করো।

গানের ভিডিওচিত্রের শুটিংয়ে ফেরদৌস ওয়াহিদ ও হাবিব ওয়াহিদ
ছবি : সংগৃহীত।