হিমু বাংলাদেশের সুপার হিরো

ইরেশ যাকের
ইরেশ যাকের
বাংলা সাহিত্যের অমর কথাসাহিত্যিক হ‌ুমায়ূন আহমেদ। একাধারে ছিলেন সাহিত্যিক, নাট্যকার, পরিচালক, চলচ্চিত্রকার। তাঁর সৃষ্টি মিসির আলী ও হিমু চরিত্র দুটি বাংলাদেশের তরুণদের হৃদয়ে গেঁথে আছে। আজ এ কথা সাহিত্যিকের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁকে নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন অভিনেতা ইরেশ যাকের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শরীফ নাসরুল্লাহ

এবার কি হ‌ুমায়ূন আহমেদের কোনো নাটক করেছেন? 
এবার করিনি। তাঁর মৃত্যুর পরে ‘প্রিয় পদরেখা’ নাটকে কাজ করেছিলাম। তাঁর খুব বেশি নাটক করার সৌভাগ্য হয়নি। 
হ‌ুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আপনার স্মৃতি...
‘বহুব্রীহি’ নাটকের স্ক্রিপ্ট রিডিং আমাদের বাসায় হওয়ার কথা। তখন আমার বয়স ১০ কি ১১। তখন হ‌ুমায়ূন আহমেদের নামডাক সব জায়গায়। হ‌ুমায়ূন আহমেদকে যখন আমি কল্পনা করি, তখন ভাবলাম, তিনি বড় দেহের অধিকারী একজন মানুষ হবেন। দেখতে ডাকসাইটে টাইপের। তখনকার বিটিভির প্রযোজক ছিলেন নওয়াজিশ আলী খান। চশমা পরা বেশ গম্ভীর লোক। আমি ধরেই নিয়েছি তিনি হ‌ুমায়ূন আহমেদ। তখন দেখলাম চশমা পরা ছোটখাটো একটা লোক বসে আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এই লোকটা কে? একজন বললেন, পরিচালক। আমি তো তখন পরিচালক কী বুঝি না। আমি নওয়াজিশ সাহেবকেই ধরে নিলাম হ‌ুমায়ূন আহমেদ। পরে যখন জানলাম তিনি হ‌ুমায়ূন আহমেদ, এই স্মৃতিকে আর ভুলতে পারিনি। এটা এতই ‘পাওয়ারফুল’ স্মৃতি যে এখনো মনে আছে। আমার অনেক দিন মানতে কষ্ট হয়েছে এই লোক কেমনে হ‌ুমায়ূন আহমেদ হয়! 

হ‌ুমায়ূন আহমেদের কোন বইটি সবচেয়ে ভালো লাগে?
তাঁর তো অনেক লেখা। সবই ভালো লাগে। বিশেষ করে মিসির আলী আর হিমুর তো আমি যারপরনাই ভক্ত। তবে বিদেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁর একটি বইয়ের গল্পগুলো আমার মনে থাকবে। আমিও তো বিদেশে ছিলাম। যাঁরা বিদেশে থাকেন, বাড়ির জন্য তাঁদের একটা আকুলতা থাকে। সেদিক থেকে তাঁর ‘হোটেল গ্রেভার ইন’ বইটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। তিনি যখন নর্থ ডাকোটায় ছাত্র হিসেবে ছিলেন ওই সময়ের কিছু গল্প। সেগুলো মনে হয় যেন আমার জীবনের সঙ্গে কোথায় মিলে যায়। তাঁর সব লেখার কথা চিন্তা করলে কোনো একটা কারণে ওই লেখাগুলোই আমাকে সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করে।
মিসির আলী না হিমু?
অবশ্যই আমার জন্য সব সময় হিমু। আমার কাছে মনে হয়, মিসির আলী আপনি পাবেন। বিভিন্ন ধরনের সাহিত্যে মিসির আলীর মতো একজন সাইকোলজিক্যাল বিশ্লেষণকারী চরিত্র পাওয়া যাবে। অবশ্যই এটা শক্তিশালী চরিত্র। মিসির আলীর গল্প আমার খুব প্রিয়। কিন্তু ঢাকা শহরের যদি কোনো সুপার হিরো চিন্তা করা হয়, সেটা কিন্তু আসলে হিমু। এই ঘরানার সাহিত্য যদি দেখেন, তাহলে দেখবেন, সুপার হিরোর সব কোয়ালিটি হিমুর মধ্যে পাবেন। তবে অন্য সুপার হিরোদের মতো কিন্তু হিমুর কোনো পাওয়ার নেই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সুপারম্যানের মতো উড়ে যাচ্ছে, একটা ঘুষি দিয়ে দালান ফেলে দিচ্ছে—এমন কিন্তু আমাদের সুপার হিরো হয় না। আমাদের এই মানসিকতার বাস্তবতা নেই। হিমু একদম বাঙালি মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের মধ্যে সুপার হিরোর চরিত্র। এই চরিত্রটি ঢাকায় ছাড়া, বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও হতে পারে না। এটা যে কি অসাধারণ অর্জন, তা বলে বোঝানো যাবে না। এটা যদি কেউ অনুবাদ করে বিশ্বের দরবারে পৌঁছাতে পারেন, তাহলে অবশ্যই একটা অবিস্মরণীয় চরিত্র হয়ে থাকবে।
‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের কোন চরিত্রে অভিনয় করতে চান?
এই নাটকে বাকের ভাইয়ের চরিত্র ছাড়া আর কোনো চরিত্রের কথা কেউ বললে সে মিথ্যা বলবে। কিন্তু বাকের ভাই হিসেবে তো কাস্টিং পাব না। এই সময়ে বাকের ভাই চরিত্রটি মোশাররফ ভাই পাবেন। আমি ফরিদী মামার (হুমায়ুন ফরিদী) চরিত্রটা করতাম হয়তো। ওখানে জর্জ ভাইয়ের (লুৎফর রহমান জর্জ) যে চরিত্রটি ছিল, ওটাও অসাধারণ একটি চরিত্র। ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে ওই সময় যে রকম সহশিল্পী, যে রকম চিত্রনাট্য, তাতে ওই নাটকের জেলার চরিত্রে কাস্টিং দিলে তা-ও করতে পারি। এখন আমরা যেসব নাটকে অভিনয় করি, সেই তুলনায় তখন অভিনয় থেকে শুরু করে চিত্রনাট্য—সবকিছু ছিল অসাধারণ। যেকোনো চরিত্রে অভিনয় করতাম।
হ‌ুমায়ূন সাহিত্যের কোন চরিত্রে অভিনয় করতে চান?
আমি যদি আমার ওজন আরও ২০ থেকে ৩০ কেজি কমাতে পারি, তবে হিমু করতে পারব। প্রত্যেকেরই একটা ড্রিম চরিত্র থাকে। তবে চরিত্রের জন্য শারীরিক গঠনও একটা ব্যাপার। এখন যদি হিমু করতে যাই, তবে মানাবে না। কারণ, শারীরিক গঠনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবার মাথায় তো হিমুর একটা চেহারা আছে। আমার মাথায় একটি বিশেষ চরিত্র আছে, যেটা আমি করতে চাই। ‘নিশীথিনী’ উপন্যাসের ফিরোজ চরিত্রটি। আমি যখন পড়েছি, আমার মনে হয়েছে চরিত্রটি হ‌ুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন আমার জন্য। তিনি যখন এটি লেখেন, তখন কিন্তু আমাকে চিনতেন না। আমি অনেক ছোট কিন্তু আমার বারবার মনে হয়েছে, ওই চরিত্রটি আমার অভিনয়ের জন্য লেখা।