পত্রিকা হিসেবে প্রথম আলো অনন্য

সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। ছবি: প্রথম আলো

চোখের সামনে প্রথম আলোর আত্মপ্রকাশ। দেখতে দেখতে ২৫ বছর পার করল। সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন মানুষ হিসেবে বিনোদন পাতার কথা বলতে চাই। দীর্ঘ পথচলায় এই পেজে সংস্কৃতি অঙ্গনের খুঁটিনাটি নানা বিষয় সঠিকভাবে উঠে এসেছে। বরাবরই শিল্পীদের পাশে থেকেছে। শিল্পী হিসেবে আমার মনের কথা আমারই হয়ে বিনোদন পাতা সুন্দরভাবে পাঠক ও ভক্তদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।

আমার একটা চাওয়া হচ্ছে, পুরোনো অনেক শিল্পী, গায়ক-গায়িকা বা মিউজিশিয়ান এবং অভিনয়শিল্পী ও যন্ত্র প্রকৌশলীদের খবর আরও বেশি প্রকাশ করা উচিত। এই প্রজন্মের অনেকে তাঁদের অগ্রজদের সম্পর্কে জানে না, এই অঙ্গনে তাঁদের অবদানের খবর জানে না। নির্দিষ্ট সময় পর তা তুলে ধরা উচিত। এখন অনলাইনের যুগ। পত্রিকার পাতায় না হলেও অনলাইন সংস্করণে লেখার অনেক সুযোগ আছে।

কথার কথা বলতে পারি, আব্দুল আলীম সাহেব বেঁচে নেই। তাঁর পরিবারের লোকজন আছেন। তাঁদের কাছ থেকে সেই মানুষটার কর্মের কথাগুলো শোনা উচিত। এরপর পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়া উচিত। তাহলে পাঠকের পাশাপাশি এই প্রজন্মের শিল্পীরাও তাঁদের সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে।

ঢাকার পাঁচতারা হোটেলে প্রথম আলোর ক্যামেরায় উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা
ছবি : আশরাফুল আলম

নিলয় ভট্টাচার্য, সেলিম হায়দার, ফোয়াদ নাসের বাবুর মতো মেধাবী মিউজিশিয়ান আছে, যাঁদের সম্পর্কে এই প্রজন্মের অনেকে জানে না। সুনীল চন্দ্র দাসের মতো একজন অসাধারণ মিউজিশিয়ান আছেন, যিনি ভায়োলিন বাজান, মানুষ তো ভুলেই গেছে তাঁর কথা। তাঁর মতো মানুষকে নিয়ে বেশি করে লেখা উচিত।

আরও পড়ুন

সমর দাসের মতো বড়মাপের একজন সংগীত পরিচালক সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। তিনি অসাধারণ মেধাবী একজন ব্যক্তিও ছিলেন—এই প্রজন্মের তা জানা দরকার। এ রকম আরও অনেকেই আছেন। ফেরদৌসী (রহমান) আপার মতোও একজন শিল্পী আছেন, তাঁদের নানা বিষয়ে খবর তুলে ধরা উচিত। পরিচিতজনদের বাইরে অপরিচিত অনেকের অবদানে এই বিনোদন অঙ্গন। তাঁদের নিয়ে প্রথম আলো বিনোদনের কাজ করার আছে। তাঁদের অবদান নিয়ে খুব একটা কথা হয় না। এখনো ভালো ভালো শিল্পী আসছে। মিউজিশিয়ান আসছে। আমি যদি বলি বাপ্পা মজুমদার, কী চমৎকার কাজ করে। ইমন চৌধুরী যে কাজ করছে, সাংঘাতিক মেধাবী একজন মিউজিশিয়ান। তাঁদের নিয়ে বারবার লেখা উচিত। শিল্পের পথে তাঁদের যাত্রার গল্প তুলে ধরা উচিত।

শুধু জনপ্রিয়তার স্রোতে না হেঁটে শিল্পের সঙ্গে যাঁদের বসবাস, যাঁদের সংস্কৃতি অঙ্গনের জানাশোনা আছে, তাঁদের নিয়ে বেশি বেশি লেখা উচিত। তাঁদের সম্পর্কে জানতে পারলে ইন্ডাস্ট্রি উপকৃত হবে, প্রজন্মও শিল্পীর সংগ্রামের বিষয়গুলোও জানতে পারবে।
আমি প্রিন্ট এবং অনলাইন দুটোই দেখি। মাঝেমধ্যে বিনোদনের খবরে হেডিং একটু চটকদার লাগে। পড়ানোর জন্য হলেও এসব হেডিং নিয়ে আরেকটু ভাবা উচিত। কারণ, প্রথম আলো অনেক ক্ষেত্রে অনেককে পথ দেখায়, তাই তাদেরই সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীল থাকতে হবে।

দেশ–বিদেশের অনেক পত্রিকা পড়া হয়। তবে আমার কাছে পত্রিকা হিসেবে প্রথম আলোকে অনন্য লাগে। সবচেয়ে বড় বিষয়, প্রথম আলোর পরিবেশটা অনেক বেশি পারিবারিক মনে হয়। সম্পাদক থেকে শুরু করে সাংবাদিক—যাঁদের সঙ্গে নিয়মিত কথা হয়, তাঁদেরকে একটা পরিবারের সদস্য মনে হয়। চমৎকার একটা বন্ধন আছে। এতে কাজগুলোও ভালো হয়। একজনকে আরেকজন দারুণভাবে সহযোগিতা করতেও দেখি। খুব ভালো কাজ করার চেষ্টা সবার মধ্যে আছে।