গ্যেটে ইনস্টিটিউটের নতুন যাত্রা মুহূর্ত গানে মাতাল চিরকুট

আলোচনার পর ছিল চিরকুট ব্যান্ডের গানছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

সংস্কারের পর ‘ব্যাক হোয়ার উই বিলং’ স্লোগান নিয়ে আবার নতুন করে কার্যক্রম শুরু হলো গ্যেটে ইনস্টিটিউটের। ধানমন্ডির ৯ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাড়ির জার্মান দূতাবাসের এ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জাঁকজমকপূর্ণ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। অনুষ্ঠানে অতিথিদের গানে গানে মাতালেন জনপ্রিয় ব্যান্ডদল চিরকুটের শিল্পীরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার স্মৃতিচারণা করে বলেন, সত্তরের দশকে ছাত্রজীবনে তিনি গ্যেটে ইনস্টিটিউটে নিয়মিত আসতেন। এখানে সমৃদ্ধ পাঠাগারে বিভিন্ন বই ও সাময়িকী পড়ার পাশাপাশি অনেক চলচ্চিত্র, শিল্পকলা প্রদর্শনী ও ধ্রুপদি সংগীতের অনুষ্ঠান উপভোগের সুযোগ পেয়েছিলেন। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান তরুণদের মেধা, সৃজনশীলতা ও মনোজগতের প্রসার ঘটতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখন সংস্কার করা ভবনে এসব সুবিধা আরও বৃদ্ধি পাবে। গ্যেটে ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি ব্রিটিশ কাউন্সিল, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তরুণদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সংস্কৃতি বিনিময় ও সম্প্রীতি নিবিড় হয়ে ওঠে।

জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার বলেন, গ্যেটে ইনস্টিটিউট দীর্ঘদিন ধরে জার্মানি ও বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধ তৈরিতে কাজ করে চলেছে। নতুন করে সংস্কারের পর এ ভবনে আরও অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জনসাধারণ এখানে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশে ভাষা শিক্ষা থেকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন। গ্যেটে ইনস্টিটিউট উভয় দেশের সংস্কৃতি বিনিময় ও সহযোগিতার একটি মাইলফলক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বিশেষ অতিথি অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ম্যক্স মুলার ভবনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক মার্লা স্টুকেনবার্গ বলেন, ‘গ্যেটে ইনস্টিটিউটের ভবনের এ পুনঃ উদ্বোধন উভয় দেশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সংস্কৃতি বিনিময়ের ক্ষেত্রে একটি নতুন সূচনা হিসেবে চিহ্নিত হবে। আমরা এমন একটি ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য কাজ করব, যেখানে বৈচিত্র্যময় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে উঠবে। সেখানে এ প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করবে।’
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, গ্যেটে ইনস্টিটিউট শিক্ষা ও সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে অতীতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ভবনটি সংস্কার করে যে নতুন যাত্রা শুরু হলো, সেখানে আরও সুযোগ সংযোজিত হয়েছে। এখানে অতীতের মতোই তাদের ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।

‘ব্যাক হোয়ার উই বিলং’ স্লোগান নিয়ে আবার নতুন করে কার্যক্রম শুরু হলো গ্যেটে ইনস্টিটিউটের
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

সূচনা বক্তব্যে গ্যেটে ইনস্টিটিউট ঢাকার পরিচালক ফ্র্যাঙ্ক ভার্নার বলেন, ‘ঢাকায় ১৯৬১ সাল থেকে গ্যেটে ইনস্টিটিউট কার্যক্রম শুরু করেছিল। এ ভবনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জার্মান ভাষা শিক্ষা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, বক্তৃতা, সেমিনারের মতো বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধন দৃঢ় করতে ভূমিকা রেখে আসছে। এখন ভবনটি সংস্কার করা হয়েছে। “ব্যাক হোয়ার উই বিলং” স্লোগান নিয়ে ধানমন্ডির এ ভবনকে সর্বস্তরের মানুষের জন্য একই সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমরা আশা করি, সব অংশীজনকে এখন আরও উন্নত অভিজ্ঞতা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপহার দিতে পারব।’
সংস্কারের পর এ ভবনে রয়েছে আধুনিক সুবিধাসংবলিত শ্রেণিকক্ষ, গ্রন্থাগার, মিডিয়া লাউঞ্জ, মিলনায়তন ও অনুষ্ঠানের স্থান, ক্যাফেটেরিয়া ইত্যাদি।

শারমিন সুলতানা সুমি ‘আহারে জীবন’ গানটি দিয়ে তাঁদের পরিবেশনা শুরু করেছিলেন
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

আলোচনার পর ছিল চিরকুট ব্যান্ডের গান। দলের জনপ্রিয় ভোকালিস্ট শারমিন সুলতানা সুমি ‘আহারে জীবন’ গানটি দিয়ে তাঁদের পরিবেশনা শুরু করেছিলেন। পরে ‘জাদুর শহর’, ‘খাজনা’, ‘দেখতে দেখতে রোদ উধাও’, ‘কানামাছি সত্য’সহ তাঁদের জনপ্রিয় গান গেয়ে শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন।