খুনের মামলায় তদন্তে আসা কর্মকর্তাদের প্রেমের ফাঁদে ফেলতেন ক্যাথরিন
বিত্তশালী রকস্টার খুন হয়েছেন। সন্দেহের তালিকায় ১ নম্বরে এই রকস্টারের প্রেমিকা ক্যাথরিন। যথারীতি গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ক্যাথরিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। কিন্তু ক্যাথরিনের রূপ ও ব্যক্তিত্বের কাছে আটকে যায় তদন্ত। ক্যাথরিনের সাজসজ্জার স্টাইল, বাচনভঙ্গিতে নিমেষেই কর্মকর্তারা তার প্রেমে হাবুডুবু খান। খুনের কোনো সুরাহা না হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়। তাতে কী? সবাইকে রূপের জাদু দিয়ে আটকে ফেলেন এই লেডি সিরিয়াল কিলার। তাদের সঙ্গে প্রেম জমিয়ে গল্পের সাসপেন্স বাড়িয়ে তোলেন। ১৯৯২ সালের ‘বেসিক ইনস্টিংক্ট’ সিনেমায় দারুণ সাড়া ফেলেছিলেন ক্যাথরিন চরিত্রের অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন। এটাই ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। আজ এই অভিনেত্রীর জন্মদিন।
পল ভারহোভেন পরিচালিত ‘বেসিক ইনস্টিংক্ট’ সিনেমাটি সে বছর দুটি শাখায় অস্কারে মনোনয়ন পায়। কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাম দ’রের জন্য প্রতিযোগিতা করেও আলোচনায় আসে। সিনেমাটি ব্যবসায়িকভাবেও সাফল্যের মুখ দেখে। সিনেমাটি মুক্তির পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি শ্যারনকে। প্রথম সারির নির্মাতা, অভিনেতাদের সঙ্গে সমানতালে কাজ করে গেছেন। পর্দায় তাঁকে ঘিরে দর্শকদের আলাদা আকর্ষণ থাকত। কারণ, বেশির ভাগ সিনেমায় তাঁর উপস্থিতি থাকত খোলামেলা। নগ্ন হয়ে পোজ দিতেও দেখা গেছে। এসব কারণে তাঁকে বলা হয় নব্বইয়ের দশকের সেক্স সিম্বল। শ্যারন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত পোশাকের স্টাইল ও জনসমক্ষে যাওয়ার পোশাকের স্টাইল একদমই আলাদা। দুই জায়গায় আমি এমন ড্রেস পরি যেন আমাকে সুখী মনে হয়।’
শ্যারন ছিলেন সাধারণ ঘরের মেয়ে। তাঁর বাবা ছিলেন শ্রমিক। মা ছিলেন গৃহিণী। শ্যারন খুবই সুন্দরী ছিলেন। পরিবার ও নিজে চলার জন্য মডেলিং করে টাকা আয়ের চিন্তা নিজে করেছিলেন তিনি। পরে পেনসিলভানিয়ার ছোট শহর থেকেই তাঁর সংগ্রাম শুরু হয়। তখন তাঁর বয়স ১৫ বছর। দুই বছরের মাথায় তিনি ১৯৭৬ সালে সুন্দরী প্রতিযোগিতার মুকুট মাথায় তুলে নিজেকে প্রমাণ করেন। পার্টটাইম চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে টিভি নাটক, বিজ্ঞাপনে কাজ করে টাকা কামানো শুরু করেন। প্রথম উডি অ্যালেনের ‘স্ট্রাডাস্ট’ সিনেমায় ট্রেনের সুন্দরী মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। পরে তিনি অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। এখানেও তাঁকে টিকে থাকতে চরম প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে।
১৯৮০ সালে অভিনয় শুরু করলেও সেভাবে পরিচিত পাচ্ছিলেন না। ১০ বছর নীরবে কাজ করার পর আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগারের ‘টোটাল রিকল’ শ্যারনকে আলোচনায় আনে। সিনেমায় একটি দৃশ্যের জন্য নগ্ন হয়ে পোজ দেন। ৩২ বছরের শ্যারনের সাহসিকতার জন্যই এ আলোচনা। তবে তাঁর ক্যারিয়ার অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায় ‘বেসিক ইনস্টিংক্ট’ সিনেমাটির সিকুয়েল। পরে তিনি একাধিকবার আবেদনময়ী তারকার তালিকায় প্রথম দিকে স্থান পেয়েছেন। লিডিং লেডি হিসেবেও খ্যাতি পান। নব্বইয়ের দশকের পর থেকে তিনি অনেক জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্য উল্লেখযোগ্য ‘ক্যাসিনো’, ‘ক্যাটওমেন’, ‘দ্য লাস্ট ড্যান্স’, ‘দ্য মিউস’, ‘লাভলেস’ ইত্যাদি। তিনি সব সময় চেষ্টা করেছেন মেরিলিন মনরোর মতো কাজ করে যাবেন।
সিনেমার মতোই ছিল তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের সম্পর্ক। একাধিক বিয়ে ও প্রেমে জড়িয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে তিনি মিশেল গ্রিনবার্গ নামের এক টেলিভিশন প্রযোজকের সঙ্গে প্রেম করে প্রথম বিয়ে করেন। সেটি তিন বছর পরে বিচ্ছেদে রূপ নেয়। পরে দুজনের সঙ্গে প্রেম করলেও তাঁদের সম্পর্ক টেকেনি। একজনের সঙ্গে আংটিবদল হওয়ার পরও সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে। শ্যারন অভিমানে সেই আংটি কুরিয়ার করে ফেরত দিয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করলেও তিনি মা হতে পারছিলেন না। পরে তাঁরা ছেলে দত্তক নেন। ২০০৩ সালে তাঁদের সংসার ভেঙে যায়। শ্যারন মনে করেন, তিনি জীবনে অনেক কিছুই পাননি। কিন্তু সেগুলো হয়তো তাঁর সত্যিকারের চাওয়া ছিল না। অনেক ভুল করে প্রতিবারই সেখানেই শেষ করেছেন। জীবনকে নিজের মতো করে এগিয়ে নিতে চান, সেই পথেই হাঁটছেন তিনি। তিনি মনে করেন, শান্তি সব জায়গায় বিদ্যমান। শ্যারনের জন্ম ১৯৫৮ সালের ১০ মার্চ।