৩৬ হাজার কোটি টাকার মালিক, তবুও এত সাধারণ জীবন

ডেনজেল ওয়াশিংটন। ছবি: টুইটার

‘তাঁর সঙ্গে অভিনয় মানেই যেন ফিল্ম স্কুলে যাওয়া। তাঁর অভিনয় দেখে আমি অভিনয়ের বহু কিছু শিখেছি’ একসঙ্গে ‘ফিলাডেলফিয়া’ সিনেমায় অভিনয়ের পরে সহ–অভিনয়শিল্পী ডেনজেল ওয়াশিংটন সম্পর্কে কথাগুলো বলেছিলেন আরেক বিখ্যাত হলিউড অভিনেতা টম হ্যাংকস। এখনো বলা যায়, অভিনয় দিয়েই আজও ডেনজেল ওয়াশিংটন হলিউডের শীর্ষ অভিনেতার একজন। আজ তাঁর জন্মদিন।

অভিনয়ের শক্তি, ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা ও পর্দার বাইরের নীরব জীবনযাপনের জন্য তিনি বহুদিন ধরেই আলাদা এক মর্যাদায় অবস্থান করছেন। চার দশকের বেশি সময় ধরে সিনেমায় সক্রিয় থেকেও ডেনজেল নিজেকে কখনো তারকাখ্যাতির প্রদর্শনীতে ভাসাননি—বরং কাজ দিয়েই নিজের পরিচয় গড়ে তুলেছেন। স্বীকৃতি হিসেবে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা হিসেবে দুবার অস্কার অস্কার পুরস্কার জিতেছেন।

অভিনেতা ডেনজেল ওয়াশিংটন। ছবি: আইএমডিবি থেকে

ডেনজেল ওয়াশিংটনের শৈশব কেটেছে নিউইয়র্কের মাউন্ট ভার্ননে। তাঁর মা লেনিস ওয়াশিংটন ছিলেন একজন বিউটি পারলারের মালিক। মায়ের সেই পারলারই ছিল ডেনজেলের জীবনের প্রথম পাঠশালা। সেখানে বসেই তিনি মানুষের নানা চরিত্র, কথাবার্তা ও আচরণ লক্ষ করতেন—যা পরবর্তী সময়ে তাঁর অভিনয়জীবনে বড় প্রভাব ফেলেছে। ডেনজেল নিজেই একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘মায়ের পারলার তাঁকে মানুষ বুঝতে শিখিয়েছে।’

ডেনজেলের জীবনে কিছু অদ্ভুত ঘটনাও আছে। মায়ের পারলারে প্রতিদিনের মতোই সেদিন বসে ছিলেন তিনি। সেখানে একবার, একজন তাঁকে বলেছিলেন—তিনি একদিন পৃথিবীর মানুষের কাছে পরিচিত মুখ হবেন। লাখো মানুষের জন্য কাজ করবে এই শিশু। তখন তিনি নিজেও বিষয়টি বিশ্বাস করেননি। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই কথাই যেন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি একজন ধার্মিক মানুষ হিসেবেও পরিচিত। নিয়মিত বাইবেল পড়া এবং আত্মসংযমী জীবনযাপন তাঁর দৈনন্দিন অভ্যাসের অংশ। খুব সাদামাটা জীবন যাপন করেন।

অস্কার পেয়ে নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙেছিলেন ডেনজেল ওয়াশিংটন
ছবি: আইএমডিবি থেকে সংগৃহীত

ক্যারিয়ারে ডেনজেল ওয়াশিংটন একের পর এক স্মরণীয় চরিত্র উপহার দিয়েছেন। তাঁর অভিনীত প্রতিটি ছবিতেই তিনি ভিন্ন মাত্রার অভিনয় দেখিয়েছেন। দুটি অস্কারসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে থাকলেও তিনি সব সময় বলেন, ‘পুরস্কার নয়—ভালো কাজই তাঁর আসল অর্জন।’ ডেনজেল ওয়াশিংটনের উক্তিগুলোও অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর প্রিয় উক্তি, ‘লক্ষ্যহীন স্বপ্ন কেবল স্বপ্নই থেকে যায়।’ তাঁর আরেকটি বিখ্যাত উক্তি, ‘কষ্টের চেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যই অগ্রগতির জন্য বড় হুমকি।’ যা তাঁর জীবনদর্শনের রয়েছে।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ডেনজেল ‘গ্লোরি’, ‘ম্যালকম এক্স’, ‘দ্য বুক অব এলি’, ‘ট্রেনিং ডে’, ‘ফেন্সেস’, ‘দ্য ইকুয়ালাইজার’ সিনেমাগুলো দিয়ে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছেন। ক্যারিয়ারে তাঁর মুক্তি পাওয়া সিনেমার সংখ্যা ৫২টি। বিভিন্ন সময় তিনি পারিশ্রমিকেও রেকর্ড গড়েছেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তাঁর সব মিলিয়ে আয় বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আয় থেকেও তাঁকে প্রচুর দান করতে দেখা গেছে। সর্বশেষ তাঁকে দেখা গেছে ‘হায়েস্ট টু লোয়েস্ট’ সিনেমায়। এটি পরিচালনা করেছেন স্পাইক লি।

আরও পড়ুন
ডেনজেল ওয়াশিংটন অভিনীত সিনেমা ‘হায়েস্ট টু লোয়েস্ট’
ছবি: আইএমডিবি

ডেনজেল ওয়াশিংটন কেবল একজন সফল অভিনেতা নন, বরং শৃঙ্খলা, বিশ্বাস ও কঠোর পরিশ্রমের এক জীবন্ত উদাহরণ। হলিউডে তিনি আজও প্রমাণ করে চলেছেন—নীরবতা আর কাজই সবচেয়ে বড় পরিচয়। ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও তিনি নিজের কাজ নিয়ে খুশি।

তাঁর ব্যক্তিপরিচয় নিয়ে একবার বলেছিলেন, ‘আমি আমার কৃষ্ণাঙ্গ পরিচয় নিয়ে গর্বিত। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ হওয়াই আমার সবকিছু নয়। এটি আমার সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পটভূমি, আমার জিনগত গঠন—তবে এটাই আমার সম্পূর্ণ পরিচয় নয়, কিংবা আমি যে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিই, তার একমাত্র ভিত্তিও নয়। পরিবারই আমার কাছে জীবন।’ ১৯৫৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর এই অভিনেতা জন্ম।