‘হোম অ্যালোন’ সিনেমার সেই ছোট্ট ‘কেভিন’ এখন কোথায়
নব্বই দশকের আলোচিত হলিউড ছবি ‘হোম অ্যালোন’ দেখেননি বা এর নাম শোনেননি, এমন সিনেমাপ্রেমী খুঁজে পাওয়া ভার। যাঁরা ছবিটি দেখেছেন, তাঁদের নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছা করে, সিনেমার সেই ছোট্ট ও বুদ্ধিমান শিশুশিল্পী কেভিন এখন দেখতে কেমন হয়েছেন? কী করেন? সম্প্রতি সিনেমাটি মুক্তির ৩৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
‘হোম অ্যালোন’ ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রধান চরিত্র কেভিন রূপে পর্দায় হাজির হয়েছিলেন ম্যাকোলি কালকিন। পর্দায় দেখা আট বছরের সেই ছোট্ট শিশুটির বয়স এখন ৪৫। মাঝে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় অনেক দিন তিনি অন্তরালে ছিলেন; জড়িয়েছিলেন নানা বিতর্কেও।
৫০০ জনের মধ্যে থেকে একজন
পরিচালক ক্রিস কলম্বাস সিনেমার জন্য ৫০০ শিশুর অডিশন নিয়েছিলেন। শেষে ম্যাকলি কালকিনের সঙ্গে দেখা হয়। ‘ও ঘরে বসে আছে, আর আপনি ভাবছেন—এই তো সিনেমা তারকা। ওকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল—ওকেই দরকার,’ বলেন ক্রিস।
‘অস্বাভাবিক’ জীবন
হলিউডে শিশু অভিনেতা হিসেবে অল্প বয়সেই আকাশছোঁয়া সাফল্য পেয়েছিলেন ম্যাকোলি। কিন্তু সেই জীবন যে কতটা ব্যতিক্রমী ছিল, তা তিনি বুঝতে পেরেছেন অনেক পরে।
সম্প্রতি ইউটিউব শো ‘মিথিক্যাল কিচেন’–এর এক পর্বে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৪৫ বছর বয়সী এই অভিনেতা নিজের শৈশবের অভিজ্ঞতা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। কালকিন বলেন, ‘আমি জানতাম, আমি যা করছিলাম, সেটা অন্য বাচ্চাদের জীবন থেকে আলাদা। কিন্তু সত্যি বলতে কী, বড় না হওয়া পর্যন্ত—আর সেই জীবন থেকে দূরে না আসা পর্যন্ত—আমি বুঝতেই পারিনি, আমার জীবনটা কতটা অদ্ভুত ছিল।’
বয়স বাড়ার সঙ্গে আসে বোঝাপড়া
সাক্ষাৎকারে কালকিন আরও বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজের অভিজ্ঞতাগুলোকে ব্যাখ্যা করার ভাষা খুঁজে পেয়েছেন—বিশেষ করে আবেগের ভাষা। ‘একসময় আপনি সত্যিই সেই শব্দভান্ডারটা খুঁজে পান—আবেগের শব্দভান্ডার—যা দিয়ে বোঝা যায়, এসব অভিজ্ঞতা আপনার জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলেছে,’ বলেন তিনি।
পরিবার ও কঠিন শৈশব
ম্যাকোলি কালকিনের জন্ম ক্রিস্টোফার কর্নেলিয়াস ‘কিট’ কালকিন ও প্যাট্রিসিয়া ব্রেন্টরাপের ঘরে। ম্যাকোলি ছাড়াও এই দম্পতির আরও সন্তান আছে—কিয়ারান, ররি, কুইন, শেন, ক্রিশ্চিয়ান ও জেনিফার। তাঁদের আরেক সন্তান ডাকোটা ২০০৮ সালে ২৯ বছর বয়সে মারা যান।
শিশু বয়সেই খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছানোর ফলে পরিবারে জটিলতা তৈরি হয়। ১৯৯৫ সালে ম্যাকোলির তারকাখ্যাতি যখন তুঙ্গে, ঠিক সেই সময় তাঁর মা–বাবার বিচ্ছেদ হয়। এরপর বাবার সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় পুরোপুরি ছিন্ন হয়ে যায়।
বাবাকে নিয়ে তিক্ত স্মৃতি
চলতি বছরের মার্চে ‘সিবলিং রেভেলরি’ পডকাস্টে (কেট হাডসন ও অলিভার হাডসনের সঞ্চালনায়) ম্যাকোলি বলেন, বাবাকে নিয়ে তাঁর শৈশবের একটি স্মৃতি আজও স্পষ্ট।
‘ছোটবেলাতেই আমি ভাবতাম—আমি বড় হলে নিজের সন্তানদের সঙ্গে কখনোই এমন হব না।’ নিজের সন্তান হওয়ার পর সেই স্মৃতিগুলো আরও গভীরভাবে নাড়া দেয় তাঁকে।
তিনি বলেন, ‘এখন যখন আমার নিজের সন্তান আছে, তখন এসব ভাবনা আরও বেশি মাথায় আসে। আমি অবাক হয়ে যাই—ওর তো এত সুন্দর সন্তান ছিল, তবু সে এমন আচরণ করত। এটা ভাবতেই কেমন অদ্ভুত লাগে।’
প্রায় ৩০ বছর ধরে বাবার সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই বলেও জানান ম্যাকোলি। এই বিচ্ছেদ নিয়ে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘তাঁর পরিণতি এমনই হওয়ার ছিল। তাঁর সাতটি সন্তান ছিল, এখন চারটি নাতি-নাতনি আছে। অথচ তাদের কেউ তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখতে চায় না।’
নিজের পরিবার, নিজের জীবন
বর্তমানে ম্যাকোলি কালকিত তাঁর বাগদত্তা অভিনেত্রী ব্রেন্ডা সংয়ের সঙ্গে সংসার করছেন। তাঁদের দুই সন্তান—ডাকোটা (প্রায় ৪ বছর) ও কারসন (২ বছর)।
‘হোম অ্যালোন’ নিয়ে রোড শো
গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করেছিলেন ‘হোম অ্যালোন’–ভিত্তিক লাইভ শো। চলতি বছরও শুরু হয়েছে ১৪ শহরে কান্ট্রি রোড শো। বড় পর্দায় ছবির প্রদর্শনী, তারপর দর্শকদের সঙ্গে আড্ডা, স্মৃতিচারণা—চার প্রজন্মের দর্শক একসঙ্গে।
অভিনয় থেকে বিরতি ও প্রত্যাবর্তন
১৯৯০-এর দশকে ‘হোম অ্যালোন’, ‘মাই গার্ল’, ‘রিচি রিচ’-এর মতো ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে ম্যাকোলি কালকিন হয়ে ওঠেন বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত শিশু তারকাদের একজন। তবে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই, ১৯৯৪ সালে ‘রিচি রিচ’-এ অভিনয়ের পর তিনি অভিনয় থেকে বিরতি নেন।
পরে ২০০৩ সালে জীবনীভিত্তিক ছবি ‘পার্টি মনস্টার’ দিয়ে অভিনয়ে ফেরেন তিনি।
এই দীর্ঘ সময়ে ম্যাকোলি কালকিন কি কখনো আফসোস করেছেন? কোনো তিক্ততা? বিরক্তি? অভিনেতা বলেন, ‘আমি নিজের জীবন পছন্দ করি। আমি আলাদা। আর সেটা ভালোই লাগে।’
পিপলডটকম ও ডেডলাইন অবলম্বনে