অবশেষে পর্দায় হাজির নেপোলিয়ন
সাবেক ফরাসি জেনারেল ও সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে নিয়ে সিনেমা বানিয়েছেন রিডলি স্কট। ২২ নভেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। আগে ‘গ্ল্যাডিয়েটর’, ‘রবিন হুড’, ‘কিংডম অব হ্যাভেন’-এর মতো ঐতিহাসিক সিনেমা বানিয়েছেন রিডলি স্কট, এবার এই ব্রিটিশ পরিচালক পর্দায় হাজির করলেন ইতিহাসের অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনায়কের জীবনী। ছবিতে নেপোলিয়নের উত্থান ও তাঁর স্ত্রী জোসেফাইনের সঙ্গে সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে।
নেপোলিয়নকে নিয়ে সিনেমা বানাতে চেয়েছিলেন স্ট্যানলি কুবরিকও। নিজে একখানা চিত্রনাট্যও দাঁড় করিয়েছিলেন। জীবনভরই সাবেক ফরাসি সম্রাটকে নিয়ে বুঁদ ছিলেন কুবরিক, নিজের সিনেমায় নেপোলিয়ন ও জোসেফাইন চরিত্রে নিতে চেয়েছিলেন জ্যাক নিকলসন ও অড্রে হেপবার্নকে।
তবে যে কারণেই হোক, সিনেমাটি বানাতে পারেননি। কুবরিকের লেখা চিত্রনাট্য অবশ্য স্কটের মনে ধরেনি। কুবরিকের চিত্রনাট্য থেকে এখন সিনেমা নয়, সিরিজ হচ্ছে; বানাচ্ছেন প্রয়াত নির্মাতার বন্ধু স্টিভেন স্পিলবার্গ। সে যা–ই হোক, ফেরা যাক রিডলি স্কটের ‘নেপোলিয়ন’-এ।
২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর সিনেমাটির কথা ঘোষণা দেন স্কট। জানা যায়, হোয়াকিন ফিনিক্সকে দেখা যাবে নেপোলিয়নের চরিত্রে। যদিও অন্য এক অভিনেতাকে পরিচালকের মনে ধরেছিল। কিন্তু তিনি না করে দেওয়ায় আর জোকার-এ ফিনিক্সের পারফরম্যান্স দেখে পরিচালক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
এ–ও ঠিক হয়, জোসেফাইনের চরিত্রে দেখা যাবে জুডি কোমারকে। এই অভিনেত্রী রিডলি স্কটের আগের সিনেমা ‘দ্য লাস্ট ডুয়েল’-এ ছিলেন। অন্যদিকে ২০১০-এর ‘গ্ল্যাডিয়েটর’-এর পর আবার ফিনিক্সের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন স্কট। তবে শুটিংয়ের আগে বদলে যায় অভিনেত্রী, অন্য একটি সিনেমার সঙ্গে শুটিংয়ের সূচি সাংঘর্ষিক হওয়ায় ‘নেপোলিয়ন’ থেকে সরে দাঁড়ান কোমার। তাঁর চরিত্রে নেওয়া হয় আরেক ব্রিটিশ অভিনেত্রী ভানেসা কিরবিকে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে যুদ্ধের দৃশ্য দিয়ে শুরু হয় শুটিং। যুক্তরাজ্য ছাড়াও শুটিং হয় মাল্টা, ফ্রান্স ও মরক্কোতে। মাত্র ৬১ দিনে ছবিটির শুটিং শেষ করেন নির্মাতা, এত বড় পরিসরের সিনেমার জন্য যা আশ্চর্যই বলতে হবে।
এ প্রসঙ্গে পরিচালক জানান, নিখুঁত পরিকল্পনা আর কম রিটেকের কারণেই এতটা কম সময়ে শুটিং শেষ করা সম্ভব হয়েছে। গত বছর ভ্যারাইটিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে, ছবিটিতে হোয়াকিন ফিনিক্সের পারফরম্যান্সে এতটাই মুগ্ধ হন পরিচালক যে তাঁর জন্য কিছু দৃশ্য নতুন করে লিখেছিলেন। অনুমিতভাবেই নেপোলিয়নকে নিয়ে নির্মিত সিনেমায় যুদ্ধের দৃশ্যগুলো আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে।
পরিচালক জানান, একই সময়ে ১১টি ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে যুদ্ধের দৃশ্যগুলো। ‘নেপোলিয়ন’ সিনেমা বানাতে পরিচালককে সম্ভবত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় সম্পাদনা করতে। স্কট জানিয়েছেন, প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া সংস্করণটি তিনি আড়াই ঘণ্টার মধ্যে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। তবে এ–ও জানিয়েছেন, অ্যাপল টিভি প্লাসে ডিরেক্টরস কাট যখন মুক্তি পাবে, সেটির দৈর্ঘ্য হবে চার ঘণ্টা!
সম্প্রতি সিনেমাটি মুক্তি উপলক্ষে বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকার দেন স্কট। সেখানে নেপোলিয়ন বানানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি খুব আকর্ষণীয়, সেটা শ্রদ্ধা, ঘৃণা বা ভালোবাসার—সব দিক থেকেই। ইতিহাসের যেকোনো মানুষ বা নেতা বা রাজনীতিবিদের চেয়ে বেশি বিখ্যাত। আপনি কেন তাঁকে নিয়ে কাজ করেত চাইবেন না?’
নেপোলিয়নের চরিত্রে অভিনয় করা ফিনিক্সেও মুগ্ধ পরিচালক। স্কটের মতে, তাঁর সঙ্গে কাজ করা অভিনেতাদের মধ্যে সম্ভবত ফিনিক্সই সবেচেয়ে চিন্তাশীল। ফিনিক্সও কৃতজ্ঞ এমন একটি চরিত্রে তাঁকে ভাবার জন্য। তিনি বিবিসিকে জানান, স্টুডিও রাজি না হলেও কেবল পরিচালকের কারণেই ‘গ্ল্যাডিয়েটর’-এ সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
স্কটের সঙ্গে কাজ করাকে ‘অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা’ হিসেবেও অভিহিত করেন তিনি। রিডলি স্কটের সঙ্গে কাজ করে দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে ভানেসা কিরবিরও। তবে তাঁর কাজের গতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হাঁপিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। ভানেসার ভাষ্যে, ‘তিনি খুব দ্রুত কাজ করেন। এক দিনেই হয়তো আপনার পাঁচটি বড় দৃশ্যের শুটিং থাকতে পারে। বুঝতেই পারছেন, সেটে আপনাকে উড়তে হবে। স্কট নিজে আমাকে বলেছেন, এই সিনেমা তিনি ছাড়া অন্য কেউ বানালে ৬১ দিনের বদলে ১২০ দিন লাগত।’
মুক্তির পর ফ্রান্স ছাড়া অন্য দেশের সমালোচকদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়েছে ‘নেপোলিয়ন’। তবে বেশির ভাগ ফরাসি সমালোচক ছবিটি পছন্দ করেননি। তাঁদের মতে, এ ছবিতে সত্যের ব্যত্যয় ঘটেছে। এসব নিয়ে চিন্তিত নন পরিচলক। তিনি উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘নেপোলিয়নকে নিয়ে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বই লেখা হয়েছে, তাঁর মৃত্যুর পর থেকে প্রতি সপ্তাহেই ১টি করে প্রকাশিত হয়। সমালোচকদের যাঁরা বলছেন ইতিহাসের ব্যত্যয় ঘটেছে, তাঁরা কী তখন সেখানে ছিলেন? না থাকলে কীভাবে জানলেন।’
৩০ নভেম্বর ৮৬-তে পা দেবেন রিডলি স্কট। সামনে মুক্তির অপেক্ষায় তাঁর বানানো ‘গ্ল্যাডিয়েটর’-এর সিকুয়েল। কত দিন সিনেমা বানিয়ে যাবেন? ‘যত দিন পারি। এখান (লন্ডন) থেকে আমি মাল্টা যাব শুটিংয়ে। শেষ করে পরের প্রজেক্ট শুরু করব, সে আইডিয়াও চূড়ান্ত,’ থামার ইঙ্গিত না দিয়ে বলেন রিডলি স্কট।