‘জস’–এর ৫০ বছর, স্পিলবার্গের সিনেমাটি নিয়ে এ তথ্যগুলো জানতেন কি

‘জস’ সিনেমার দৃশ্যছবি: আইএমডিবি

মুক্তির পাঁচ দশক পার করছে স্টিভেন স্পিলবার্গ নির্মিত ‘জস’ সিনেমাটি। ১৯৭৫ সালের আজকের দিনে (২০ জুন) সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল। সিনেমাটিকে হলিউডের ব্লকবাস্টার যুগের পথপ্রদর্শক হিসেবে মনে করা হয়। কারণ, এর আগে কোনো সিনেমা এত ব্যাপক আকারে মুক্তি পায়নি। ব্যবসায়িক সফলতার সঙ্গে সিনেমাটি তিন বিভাগে অস্কার জয় করে। তবে এই আইকনিক সিনেমার পেছনের গল্প ছিল রীতিমতো এক যুদ্ধ। শার্কের যান্ত্রিক গোলযোগ, বাজেটের লাগামছাড়া বৃদ্ধি, শুটিংয়ের বিপত্তি—একের পর এক চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে তৈরি হয়েছিল ইতিহাসের অন্যতম রোমাঞ্চকর চলচ্চিত্র। চলুন, জেনে নিই সিনেমাটিকে ঘিরে কিছু চমকপ্রদ অজানা তথ্য।

‘জস’ সিনেমার ৫০ দিনের শুটিং শেষ হয় ১৫৫ দিনে
ছবি: আইএমডিবি

৫০ দিনের শুটিং শেষ হয় ১৫৫ দিনে
৫০ দিনের পরিকল্পনা থাকলেও তিন গুণের বেশি সময়, ১৫৫ দিনে শেষ হয় সিনেমার শুটিং। আটলান্টিক মহাসাগরে শুটিংয়ের কারণে অনেক প্রতিকূলতায় এই দেরি হয়। ক্রমাগত বাজেট বেড়ে যাওয়াই প্রযোজকেরা শেষ মুহূর্তে সিনেমা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। এক সময়, সিনেমায় ব্যবহৃত নৌকা ফুটো হওয়ার কারণে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, যার ওপর ছিল অভিনেতা ও ক্রু। তবে উদ্ধারকারী নৌকা এসে তাদের উদ্ধার করতে পেরেছিল এবং শুটিং ফুটেজও বাঁচানো গিয়েছিল। সিনেমা নির্মাণের পেছনের গল্প নিয়ে নির্মাণ করা ‘দ্য শার্ক ইজ স্টিল ওয়ার্কিং’ ডকুমেন্টারিতে ঘটনাটি মজা করে দেখানো হয়। তথ্যচিত্রে দেখা যায় স্পিলবার্গ চিৎকার করে বলছেন, ‘অভিনেতাদের নৌকা থেকে নামাও!’ —তখন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার জন কার্টার বলেন, ‘অভিনেতাদের নয়, সাউন্ড বিভাগকে বাঁচাও!’

স্পিলবার্গ ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখতেন
শুটিংয়ের সময়কালে স্পিলবার্গ ও জস সিনেমার চিত্রনাট্যকারদের একজন কার্ল গটলিব রুমমেট ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন স্পিলবার্গ প্রায়ই দুঃস্বপ্ন দেখতেন, সমুদ্রতলে তিনি হাঙ্গরের আক্রমণের শিকার হয়েছেন।


বিমানবন্দরে প্যানিক অ্যাটাক
১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে, জসের দীর্ঘ শুটিং শেষ হয় এবং স্পিলবার্গ লস অ্যাঞ্জেলস ফিরছিলেন। টানা শুটিং ধকল ও প্রোডাকশন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বস্টনের লোগান বিমানবন্দরে প্যানিক অ্যাটাক হয় তাঁর। বাজেট বেড়ে ৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়, যা মূল বাজেটের দ্বিগুণেরও বেশি। এর ফলে ইউনিভার্সাল পিকচার্স থেকে তেমন ভালো প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে পরবর্তী সময়ে এই সিনেমা বিশ্বজুড়ে ৪৭০ মিলিয়ন ডলার আয় করে।

স্টিভেন স্পিলবার্গ
ছবি: আইএমডিবি

প্রতিদিন চিত্রনাট্য বদল
কার্ল গটলিবকে প্রতিদিন চিত্রনাট্য লিখতে হতো। শুটিংয়ের দিন অনেক দৃশ্যই করা হতো তাৎক্ষণিকভাবে। প্রতিদিন সকালে চা খেতে খেতে স্পিলবার্গ চিত্রনাট্য পড়তেন, তারপর সেটে যেতেন। সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় সংলাপ ‘ইউ আর গনা নিড আ বিগার বোট’ শুটিংয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি করা হয়।


ট্রমা কাটাতে...
এন্টারটেইনমেন্ট উইকলিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্পিলবার্গ জানান, ‘এটি (সিনেমাটির শুটিং) আমার জন্য খুব ট্রমাটিক অভিজ্ঞতা ছিল। নিজের মানসিক মোকাবিলা করতে, আমি একা বসে অনেক ঘণ্টা কাটাতাম নৌকায়।’ সিনেমার ব্যাপক সাফল্য সত্ত্বেও স্পিলবার্গ এই অভ্যাস চালিয়ে গিয়েছিলেন দুই বছর ধরে। তবে তিনি বলেছেন, এই অভিজ্ঞতা তাঁকে নিজের গল্প বলতে ও ঝুঁকি নিতে মুক্তি দিয়েছিল। ‘এই অভিজ্ঞতা আমার পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে আমাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।