৭০ বছরে প্রতিবেশীর ঘরে নজরদারির গল্প
আজ থেকে ৭০ বছর আগে ১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পেয়েছিল আলফ্রেড হিচককের ‘রিয়ার উইন্ডো’। মুক্তির এত বছর পরেও যা বহু নির্মাতার প্রেরণা।
ওটিটির কল্যাণে মিস্ট্রি, থ্রিলার ঘরানার এন্তার সিনেমা তৈরি হচ্ছে আজকাল; দর্শকের জন্য এই ঘারনার কনটেন্টের অভাব নেই। তবু থ্রিলারের কথা উঠলেই ঘুরেফিরে আসে ১৯৫৪ সালে মুক্তি পাওয়া একটি সিনেমার কথা। আজ থেকে ৭০ বছর আগে ১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পেয়েছিল আলফ্রেড হিচককের ‘রিয়ার উইন্ডো’। মুক্তির এত বছর পরেও যা বহু নির্মাতার প্রেরণা। মুক্তির ৭০ বছর উপলক্ষে আলো ফেলা যাক হিচককের ‘জানালায়’।
গল্প এক পেশাদার আলোকচিত্রীকে নিয়ে। ভাঙা পা নিয়ে আপাতত নিজের বাড়িতে হুইলচেয়ারে বসে থাকা ছাড়া গতি নেই তাঁর। তবে এই বসে থাকাই তাঁর জন্য খুলে দেয় এক নতুন দুনিয়া। আরও নির্দিষ্টভাবে বললে ‘প্রতিবেশীর দুনিয়া’। জেফ নিজে হাঁটতে পারেন না বটে, তবে তাঁর ঘরের জানালা তো খোলা, যে জানালায় চোখ রাখলেই অনায়াসে ঢুকে পড়া যায় প্রতিবেশীর চৌহদ্দিতে।
তখন চলছিল তাপপ্রবাহ, জানালা বন্ধ করার তাই প্রশ্ন নেই। জেফের বাধা নেই যখন-তখন ‘প্রতিবেশীর দুনিয়া’য় অনধিকার চর্চার। জেফের প্রতিবেশীদের মধ্যে আছেন একজন নাচিয়ে, এক নিঃসঙ্গ নারী, এক পিয়ানোবাদক, কয়েক দম্পতি, একজন মধ্যবয়সী ভাস্কর এবং ভ্রাম্যমাণ গয়না বিক্রেতা লার্স থরওয়আল্ড ও তাঁর শয্যাগত স্ত্রী। তাঁদের সবার দিনযাপনের গল্প জানালায় চোখ রাখার সুবাদে জানা হয়ে গেছে জেফের। তবে মূল ঘটনার তখনো বাকি।
একদিন মারা যান লার্স থরওয়আল্ডের স্ত্রী। জেফ নিশ্চিত এটা খুন, আর খুনটা করেছেন লার্স নিজেই। গোয়েন্দা বন্ধু টম ডয়েলকে ডেকে এনে সন্দেহের কথা জানান জেফ, তবে প্রমাণ কোথায়? কিন্তু লার্স কি আসলেই নিজের স্ত্রীকে খুব করেছিলেন? প্রমাণ মিলবে কীভাবে? এমন গল্প নিয়ে এগিয়ে যায় সিনেমাটি।
১৯৪২ সালে প্রকাশিত জন মিচেল হায়েসের ছোটগল্প ‘ইট হ্যাড টু বি মার্ডার’ অবলম্বনে সিনেমাটি বানিয়েছিলেন হিচকক। শুটিং হয় প্যারামাউন্ট স্টুডিওর একটি লোকেশনেই। মাত্র ১ মিলিয়ন বাজেটের সিনেমাটি বক্স অফিসে ৩৭ মিলিয়ন ডলার ব্যবসা করে।
সিনেমায় জেফের চরিত্রে অভিনয় করেন জেমস স্টুয়ার্ট। এ ছাড়া ছবিতে ছিলেন গ্রেস কেলি, থেইমা রিটার, রেমন্ড বার প্রমুখ।
মুক্তির পর থেকেই সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে ‘রিয়ার উইন্ডো’। পরে তো হয়ে উঠেছে সর্বকালের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট ১০০ বছরের সেরা ১০০ সিনেমার যে তালিকা প্রকাশ করে, সেখানে ‘রিয়ার উইন্ডো’ ছিল ৪২ নম্বরে।
কিন্তু কেন ‘রিয়ার উইন্ডো’ এতটা প্রভাব বিস্তারকারী চলচ্চিত্র হয়ে উঠল? ক্যামেরা, কালার, গল্প বলা আর নির্মাণ মিলিয়ে ‘রিয়ার উইন্ডো’ প্রায় নিখুঁত সিনেমা, সঙ্গে ছবিটিতে বিনোদনের সব রসদই মজুত আছে ভালোভাবে—ছবিটি নিয়ে বেশির ভাগ সমালোচকেরই মত এমন।
‘রিয়ার উইন্ডো’ নিয়ে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্মাতা মার্টিন স্করসেজি বলেন, ‘গল্প নয়, বরং হিচকক যেভাবে সেটিকে উপস্থাপন করেছেন, সেটাই ছবিটিকে অনন্য করে তুলেছে। কারণ, গল্পটি তো অনুমান করাই যায়। নির্মাতা যেভাবে ক্যামেরা ঘুরিয়েছেন আর স্থির রেখেছেন, সেটা ছিল নির্মাতাদের জন্য শিক্ষণীয়। ছবিটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো জেমস স্টুয়ার্টের চরিত্রটি। ছবিতে সে যা করে, সেটা তো অনুচিত কাজ (অন্যের ব্যক্তিগত জীবনের নজরদারি)। কিন্তু এমন জটিল চরিত্র তিনি যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, সেটা কেবল তাঁর পক্ষেই সম্ভব হয়েছে।’
মুক্তির পর বিভিন্ন নির্মাতার সিনেমায় বারবার দেখা গেছে ‘রিয়ার উইন্ডো’র প্রেরণা। বিশেষ করে বলা যায় ব্রায়ান ডি পালমার কথা। তাঁর নির্মিত ‘হাই, মম!’, ‘সিস্টার্স’, ‘ড্রেসড টু কিল’, ‘বডি ডাবল’-এর মতো সিনেমায় ‘রিয়ার উইন্ডো’র প্রেরণা স্পষ্ট।
হিচককের ছবির প্রেরণায় ২০০৭ সালে ডি জে কারুসো নির্মাণ করেন ‘ডিস্টার্বিয়া’।
এ সময়ের অন্যতম শীর্ষ গায়িকা টেলর সুইফট বহুবার তাঁর ক্যারিয়ারে ‘রিয়ার উইন্ডো’ সিনেমার প্রেরণার কথা বলেছেন। সমালোচকেরা মনে করেন, গায়িকার ‘ফোকলোর’ অ্যালবামের গানের কথা তিনি মূলত লিখেছেন হিচককের সিনেমাটির প্রেরণায়।
মুক্তির ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে আবারও মুক্তি পেয়েছে ‘রিয়ার উইন্ডো’।
তথ্যসূত্র: আইএমডিবি, ভ্যারাইটি