পাওয়া গেল মনের মতো ‘রিচার’
ব্রিটিশ লেখক লি চাইল্ডের উপন্যাসের চরিত্র জ্যাক রিচার। জনপ্রিয় এ চরিত্র নিয়ে এ পর্যন্ত ২৮টি উপন্যাস লিখেছেন চাইল্ড। এই সিরিজ উপন্যাস অবলম্বনে অ্যামাজন প্রাইমের ওয়েব সিরিজ রিচার। গত ১৫ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে এটির দ্বিতীয় সিজনের প্রথম তিন পর্ব। দর্শক, সমালোচকের কাছে ব্যাপক প্রশংসা ছাড়াও সিরিজটি এনে দিয়েছে অন্য একটি স্বস্তি।
জ্যাক রিচার যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি পুলিশের সাবেক মেজর। এখন অবশ্য সে চাকরি করে না, নিজের মর্জিমতো ঘুরে বেড়ায় এ শহর থেকে ও শহর। প্রায়ই জড়িয়ে পড়ে রহস্যের জালে। মোটাদাগে এই হলো ক্রাইম, থ্রিলার ঘরানার উপন্যাসগুলোর গল্প। জনপ্রিয় এই সিরিজের প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালের মার্চে। আশ্চর্য হলো, ব্যাপক সাড়াজাগানো এই সিরিজের চলচ্চিত্রায়ণে সময় লেগে যায় ১৫ বছর! ২০১২ সালে মুক্তি পায় রিচারকে নিয়ে সিনেমা জ্যাক রিচার। চার বছর পর আসে দ্বিতীয়টি জ্যাক রিচার: নেভার গো ব্যাক। দুই সিনেমায় রিচারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন টম ক্রুজ। কোনো ছবিই সেভাবে সাড়া জাগাতে পারেনি। ফলে প্রযোজকেরা আর রিচারকে নিয়ে সিনেমা করতে উৎসাহ পাননি।
দর্শক, সমালোচক তো বটেই, রিচারকে নিয়ে নির্মিত দুটি সিনেমা তেমন পছন্দ হয়নি লেখক লি চাইল্ডেরও। তাঁর মতে, তাঁর লেখা রিচারকে পর্দায় ঠিকমতো দেখাতে পারেননি নির্মাতা।
বাহ্যিক ব্যাপারটিই ধরা যাক, লেখায় আছে রিচার সাড়ে ছয় ফুট লম্বা। বিশালদেহী রিচারের বর্ণনার সঙ্গে টম ক্রুজকে কোনোভাবেই মেলানো যায় না।
রিচারের চলচ্চিত্রায়ণ যখন অনিশ্চিত, তখনই তাঁকে সিরিজ হিসেবে পর্দায় নিয়ে আসে অ্যামাজন প্রাইম। গত বছরের শুরুতে এর প্রথম সিজন মুক্তির পরই বাজিমাত। দর্শক, সমালোচকদের তুমুল প্রশংসা কুড়ায় সিরিজটি। নেলসন স্ট্রিমিং র্যাঙ্কিংয়ের জরিপ অনুসারে, মুক্তির সপ্তাহে রিচারই ছিল সবচেয়ে বেশি স্ট্রিমিং হওয়া সিরিজ।
এমন সাফল্যে দ্রুতই ঘোষণা আসে দ্বিতীয় কিস্তির। সেই মোতাবেক ১৫ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে তিন পর্ব, ২২ ডিসেম্বর এসেছে চতুর্থটি। ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে মুক্তি পাবে বাকি পর্বগুলোও। এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সিজনের যেসব পর্ব এসেছে, সেগুলোও প্রথম সিজনের মতো ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।
কিন্তু কী এমন আছে এই সিরিজে, যা রিচারকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোয় পাওয়া যায়নি? সমালোচকদের ভাষ্যে, সিরিজের মূল শক্তির জায়গা রিচার চরিত্রে অ্যালান রিটসসনের অভিনয়। এই অভিনেতা দেখতে বইয়ে লেখা রিচারের বর্ণনার সঙ্গে অনেকটাই মিলে যান। সিরিজটি দেখার পর দর্শক, সমালোচকের কথা—অবশেষে রিচারকে পাওয়া গেছে। রিটসসনের অভিনয়ের সঙ্গে বুদ্ধিদীপ্ত চিত্রনাট্য আর নির্মাণ মিলিয়ে যথেষ্ট উপভোগ্য হয়ে উঠেছে সিরিজটি।
এবারের কিস্তিটি তৈরি হয়েছে ২০০৭ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ব্যাড লাক অ্যান্ড ট্রাবল অবলম্বনে। যেখানে দেখা যায়, রিচারের তদন্ত দলের সাবেক সদস্যদের কারা যেন বেছে বেছে খুন করছে। আরেক সাবেক সহকর্মীর কাছে বার্তা পেয়ে দৃশ্যপটে হাজির হয় রিচার। এরপর কীভাবে সে পরিস্থিতির মোকাবিলা করবে, তা–ই নিয়ে এগিয়েছে গল্প।
দ্বিতীয় সিজন মুক্তির আগে ভ্যারাইটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অ্যালান বলেন, ‘প্রথম সিজনের পাত্র–পাত্রী সবাই মিলে একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন, এবারও আমাদের সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে। এবারের সিজনে সব নতুন চরিত্র, আমরা চেষ্টা করেছি দর্শকদের সর্বোচ্চটা দিতে। রিচার খুবই শক্তিশালী চরিত্র, যে চরিত্রে অভিনয়ের চ্যালেঞ্জ নিতে যেকোনো শিল্পীই মুখিয়ে থাকবেন।’ চরিত্রটির প্রস্তুতির জন্য রিচারকে নিয়ে লেখা ২৪টি বইও পড়েছেন এই অভিনেতা। রিচার সিরিজটি বানিয়েছেন নিক সান্তোরা।