আর হাসাবে না চ্যান্ডলার বিং

ফ্রেন্ডস-এ ম্যাথিউ পেরি। ছবি: আইএমডিবি

বিখ্যাত হতে চেয়েছিলেন তিনি। ২০০২ সালে নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজেই বলেছিলেন, ‘আমি খ্যাতির পাগল ছিলাম। আপনি যখন মনোযোগ চান, টাকা চান, রেস্তোরাঁর সেরা আসন চান—এর প্রতিক্রিয়া কী হবে ভাবেন না। আমিও ভাবিনি।’ বিখ্যাত ম্যাথিউ পেরি ঠিকই হয়েছিলেন। মাত্র ২৪ বছর বয়সে সুযোগ পেয়েছিলেন টিভি সিরিজ ‘ফ্রেন্ডস’-এ। কে জানত, এই একটি সিরিজই তাঁকে সারা দুনিয়ার ভক্তদের কাছে অমর করে রাখবে। ছিলেন কৌতুকশিল্পী। পর্দায় তাঁর কমিক টাইমিংয়ের সুখ্যাতি করেন দুঁদে অভিনয়শিল্পীরাও। তবে ভক্তদের বিষণ্ন করে চলে গেলেন এই কৌতুক অভিনেতা। ২৮ অক্টোবর মাত্র ৫৪ বছর বয়সেই থেমে গেছে পেরির পথচলা।

১৯৬৯ সালের ১৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটে জন্মেছিলেন ম্যাথিউ পেরি। মা সুজানে পেরি ছিলেন কানাডীয় সাংবাদিক, কাজ করতেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী পিয়ের ট্রুডোর তথ্যসচিব হিসেবে। বাবা জন বেনেট পেরি ছিলেন মার্কিন মডেল, অভিনেতা। পেরির প্রথম জন্মদিনের আগেই তাঁর বাবা–মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ছোট্ট পেরি মায়ের সঙ্গে থেকে যান কানাডায়। কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো প্রাথমিক স্কুলে পেরির সহপাঠী ছিলেন।

আরও পড়ুন

ছোটবেলায় টেনিসে খুব আগ্রহ ছিল পেরির। জুনিয়র পর্যায়ে তিনি ছিলেন র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ খেলোয়াড়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টেনিসে আগ্রহ কমে, অভিনেতা হতে মন আনচান করতে থাকে। বাবা অভিনেতা, থাকেন লস অ্যাঞ্জেলেসে; পেরিও ১৫ বছর বয়সে চলে আসেন বাবার কাছে।

স্থানীয় এক রেস্তোরাঁয় তাঁকে খুঁজে পায় নির্মাতা উইলিয়াম রাইকার্টের জহুরি চোখ। পেরি তখন উচ্ছল একদল তরুণীর সঙ্গে রাতের খাবার খেতে ব্যস্ত। পরিচালক পেরিকে বলে যান, নিজের পরের ছবিতে তাঁকে নেবেন। ব্যস, ‘আ নাইট ইন দ্য লাইফ অব জেমি রেয়ারডন’-এ সুযোগ মিলে গেল। ১৯৮৮ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমা দিয়েই শুরু হয় পেরির চলচ্চিত্রযাত্রা।

ম্যাথিউ পেরি। ছবি: রয়টার্স

এর আগে অবশ্য কয়েকটি টিভি সিরিজে কাজ করেছেন, তবে সেগুলোর কোনোটিই উল্লেখ করার মতো নয়। ম্যাথিউ পেরির জীবন চিরদিনের মতো বদলে যায় ‘ফ্রেন্ডস’ দিয়ে। ১৯৯৪ থেকে ২০০৪—টানা ১০ বছর এই সিরিজে চ্যান্ডলার বিং চরিত্রে অভিনয় করে তিনি হয়ে উঠলেন দর্শকদের ‘ঘরের মানুষ’। এই সিরিজে তাঁর কৌতুকাভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন অনুরাগীরা। বিশেষ করে মণিকা ও জোয়ির সঙ্গে চ্যান্ডলারের সমীকরণ ভোলার নয়। ফেন্ডস-এর বাকি বন্ধুদের মধ্যে মণিকা, রস, রেচেল, জোয়ি, ফিবি—সবাই আছেন, চলে গেলেন কেবল পেরি।

২০০২ সালে জানা যায়, ‘ফ্রেন্ডস’-এর প্রতি পর্বের জন্য ১০ লাখ ডলার পারিশ্রমিক নিতেন সিরিজের প্রধান ছয় অভিনয়শিল্পী। ফ্রেন্ডস ছাড়াও ‘ফুলস রাশ’, ‘অলমোস্ট হিরোজ’, ‘থ্রি টু ট্যাঙ্গো’, ‘দ্য হোল নাইন ইয়ার্ড’সহ ইত্যাদি সিনেমায় অভিনয় করেন। কোনোটিই ‘ফ্রেন্ডস’-এর কাছাকাছিও সাফল্য পায়নি। তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ টিভি সিরিজ ‘দ্য ওয়েস্ট উইং’। অভিনয় ছাড়াও পরিচালনাও করেছেন পেরি। টিভি সিরিজ ‘স্কার্বস’-এর একটি পর্ব নির্মাণ করেন তিনি, যে পর্বে দেখা যায় তাঁর বাবাকেও।

ম্যাথিউ পেরি। ছবি: রয়টার্স

পেরির অনেক সহকর্মী মনে করেন, নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে পারেননি ম্যাথিউ পেরি, যার অন্যতম কারণ মাদকাসক্তি। নেশা আর অসুস্থতার সঙ্গে মৃত্যুর আগপর্যন্ত লড়াই করে গেছেন। ১৯৯৭ সালে জেট স্কি দুর্ঘটনার পর থেকেই ব্যথানাশক ওষুধে আসক্ত হয়ে পড়েন ম্যাথিউ পেরি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ-ও জানান, ওই দুর্ঘটনার পর তাঁর তিন বছরের স্মৃতি মুছে যায়। নেশা ছাড়তে ৯০ লাখ ডলারের বেশি খরচ করেছেন বলেও উল্লেখ করেন পেরি।

২০১৯ সালে কোলনের অসুস্থতায় দুই সপ্তাহ কোমায় ছিলেন অভিনেতা। সেরে উঠতে ১৪টি অস্ত্রোপচার করতে হয়। পরে ওই সময়ের কথা মনে করে পেরি বলেছিলেন, ‘আমি মারা যেতে পারতাম, কোনোভাবে বেঁচে গেছি আরকি।’

ম্যাথিউ পেরির মৃত্যুর পর শোকে মুহ্যমান দুনিয়াজুড়ে থাকা তাঁর ভক্তরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভক্ত, সহকর্মীসহ অনেকেই। ফ্রেন্ডস সিরিজের প্রযোজক ওয়ার্নার ব্রাদার্স টিভি এক শোকবার্তায় বলেছে, ‘সারা দুনিয়াজুড়ে এই প্রতিভাবান কৌতুকশিল্পীর অভাব বোধ হবে। তাঁর কাজ আরও ছড়িয়ে পড়বে, অনেকের হৃদয়ে তিনি সব সময়ই রয়ে যাবেন।’

স্কুলের সহপাঠী ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক্সে লিখেছেন, ‘ম্যাথিউ পেরির মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। স্কুলের মাঠে একসঙ্গে খেলার স্মৃতি কখনো ভুলতে পারব না। আমি জানি, সারা দুনিয়ার মানুষকে সে যেভাবে আনন্দ দিয়েছে; তারা সেটা ভুলতে পারবে না। সব হাসি-আনন্দের জন্য ধন্যবাদ।’