ধর্মঘট ও সুপারহিরো সিনেমার দুঃস্বপ্নের বছর

‘ওপেনহেইমার’ ও ‘বার্বি’র দৃশ্য। ছবি: আইএমডিবি

এই দশকের শুরু থেকেই হলিউড বক্স অফিসে রাজত্ব করেছে সুপারহিরো সিনেমাগুলো। কিন্তু কয়েক বছর ধরেই এ ধরনের সিনেমার বাজার নিম্নমুখী। চলতি বছর অবস্থা আরও খারাপ। তবে সিনেমার চেয়ে ২০২৩ সালে বেশি আলোচনা হয়েছে ধর্মঘট নিয়ে। এ ছাড়া চলতি বছর কয়েকটি সিনেমা রেকর্ড ব্যবসা করে রীতিমতো চমকে দিয়েছে।

সুপারহিরো-জাদু ফিকে
দ্য মার্ভেলস, অ্যান্ট-ম্যান অ্যান্ড দ্য ওয়াসপ: কোয়ান্টাম্যানিয়া, শ্যাজাম! ফিউরি অব দ্য গডস থেকে দ্য ফ্ল্যাশ—চলতি বছর মুক্তি পাওয়া বেশির ভাগ বড় বাজেটের সিনেমাই বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে। আগে এই ঘরানার সিনেমাগুলো মুক্তির কয়েক দিনের মধ্যেই ১০০ মিলিয়ন ডলার পূর্ণ করত। কিন্তু চলতি বছর রেকর্ড তো দূরের কথা, মান বাঁচানোই যেন কঠিন হয়ে উঠেছিল সিনেমাগুলোর জন্য। সাধারণ দর্শক তো বটেই, সমালোচকেরাও বেশির ভাগ সুপারহিরো সিনেমাকে ধুয়ে দিয়েছেন। টান টান চিত্রনাট্য, কমেডি আর সুপারহিরোর সমাগমে যে জমজমাট দুনিয়া তৈরি করেছিল প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো, চলতি বছর তা অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে; যা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন খোদ লেখক স্টিফেন কিংও। মার্কিন গণমাধ্যম দ্য হলিউড রিপোর্টার মনে করছে, একই ধরনের গল্প, দুর্বল গ্রাফিকস আর টিভি, ওটিটি ও প্রেক্ষাগৃহে সুপারহিরো কনটেন্টের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে। ২০২৩ সালে ডিসি, মার্ভেল বা ডিজনি কেউই বাজার ধরতে পারেনি।

অনেক সিনেমাভক্তের আশা ছিল ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড দ্য ডায়াল অব ডেসটিনি নিয়ে। কারণ, এ সিনেমায়ই শেষবারের মতো ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স’ রূপে হাজির হয়েছিলেন হ্যারিসন ফোর্ড। কিন্তু ছবিটি দর্শককে হতাশ করেছে। অনেক সমালোচকের মতে, ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স’ সিনেমা সিরিজের এটিই সবচেয়ে দুর্বল সিনেমা। এ ছাড়া জন উইক ৪ বা মিশন: ইমপসিবল-ডেড রেকনিং ১-এর মতো সিনেমাগুলো সমালোচকদের প্রশংসা পেলেও প্রত্যাশামতো ব্যবসা করতে পারেনি।
সুইফটের চমক
সংগীতশিল্পী হিসেবে বছরটা দুর্দান্ত কেটেছে টেলর সুইফটের। কিন্তু তাঁর সিনেমাও যে বাজিমাত করবে, কে ভেবেছিল! তাঁর কনসার্ট থেকে নির্মিত সিনেমা টেলর সুইফট: দ্য ইরাস ট্যুর মুক্তি পায় গত ১৩ অক্টোবর। মুক্তির আগেই অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে রেকর্ড গড়ে ছবিটি। পরে বক্স অফিসে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যবসা করে, যা কনসার্ট থেকে সিনেমার জন্য সর্বোচ্চ আয়।

‘বার্বেনহেইমার’ দ্বৈরথ
২১ জুলাই মুক্তি পায় বছরের সবচেয়ে আলোচিত দুই সিনেমা বার্বি ও ওপেনহেইমার। দুই হেভিওয়েট নির্মাতা গ্রেটা গারউইগ ও ক্রিস্টোফার নোলানের সিনেমা দুটি নিয়ে মুক্তির আগে ও পরে তুমুল আলোচনা হয়েছে। এই সিনেমাটিক দ্বৈরথের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘বার্বেনহেইমার’। বাংলাদেশেও এসে লেগেছিল এই ঢেউ।

সেরা ১০
পাস্ট লাইভস
পুওর থিংস
অল অব আস স্ট্রেঞ্জার্স
কিলার্স অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন
ফলেন লিভস
দ্য জোন অব ইন্টারেস্ট
শোয়িং আপ
অ্যানাটমি অব আ ফল
পারফেক্ট ডেজ
প্যাসেজেস
সূত্র: হলিউড রিপোর্টার

ভক্ত থেকে শুরু করে তারকারাও ‘বার্বি’ সেজে হাজির হয়েছিলেন প্রেক্ষাগৃহে। তুলনামূলক জটিল ধরনের সিনেমা হলেও ওপেনহেইমার দেখতেও ভিড় করেছিলেন ভক্তরা। দুই সিনেমাই বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হয়েছে। বার্বি হয়েছে চলতি বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা, ওপেনহেইমার আছে তৃতীয় স্থানে।

হরর সিনেমার জনপ্রিয়তা
বড় বাজেটের অনেক সিনেমা প্রত্যাশামতো ব্যবসা করতে না পারলেও প্রেক্ষাগৃহ ও ওটিটিতে মুক্তি পাওয়া বেশ কয়েকটি অল্প বাজেটের হরর সিনেমা প্রশংসা কুড়িয়েছে। এসব সিনেমার মধ্যে রয়েছে কোকেন বিয়ার, ইভিল ডেড রাইজ, স্ক্রিম ৬, ইনসিডিয়াস: দ্য রেড ডোর, টক টু মি, মেগান ইত্যাদি। এ ছাড়া বলা যায় হুলুর নো ওয়ান উইল সেভ ইউ আর নেটফ্লিক্সের দ্য ফল অব দ্য হাউস অব আসার–এর কথাও।
এবং থমকে যাওয়া হলিউড
বেতনকমানো ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের কারণে কর্মক্ষেত্রে তৈরি হওয়া হুমকির কারণে ২ মে থেকে ধর্মঘটে যায় রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা।

লেখকদের ধর্মঘটের পর এতে যোগ দেন অভিনয়শিল্পীরাও। এ কারণে কার্যত থমকে যায় যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র ও সিনেমার শুটিং। শিল্পীরা প্রচারে না যাওয়ায় বিপাকে পড়ে প্রযোজনা সংস্থাগুলো, পিছিয়ে যায় অনেক বড় বাজেটের সিনেমার মুক্তি। শেষ পর্যন্ত ১৫৩ দিন পর লেখকেরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন ২৭ সেপ্টেম্বর। আর ১৪ জুলাই শুরু হওয়া অভিনয়শিল্পীদের ধর্মঘট শেষ হয় ৯ নভেম্বর।

ব্যবসাসফল ১০
বার্বি
দ্য সুপার মারিও ব্রস. মুভি
ওপেনহেইমার
গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্যালাক্সি ৩
ফাস্ট এক্স
স্পাইডার-ম্যান: অ্যাক্রস দ্য স্পাইডার-ভার্স
দ্য লিটল মারমেইড
মিশন: ইমপসিবল-ডেড রেকনিং ১
এলিমেন্টাল
অ্যান্ট-ম্যান অ্যান্ড দ্য ওয়াসপ: কোয়ান্টাম্যানিয়া
সূত্র: বক্স অফিস মোজো