মদ না খেলেই নিকোলের কাছ থেকে স্বামী পাবেন ১৩৮ কোটি টাকা

নিকোল কিডম্যান ও কিথ আরবান। ছবি: রয়টার্স

হলিউডের ঝলমলে দুনিয়ায় প্রেম ও বিচ্ছেদের গল্প নতুন কিছু নয়। তবু অস্কারজয়ী অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান ও কান্ট্রি মিউজিক তারকা কিথ আরবানের বিচ্ছেদ ভক্তদের মনে অন্য রকম ধাক্কা দিয়েছে। প্রায় ২০ বছরের সম্পর্ক, একসঙ্গে কাটানো অসংখ্য মঞ্চ ও স্মৃতি, আর সেই সম্পর্কের ভাঙনের খবর যেন বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে অনেকের।

শুরুটা ছিল রূপকথার মতো
২০০৫ সালে এক অনুষ্ঠানে প্রথম দেখা কিডম্যান ও আরবানের। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দুজনের গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। ২০০৬ সালে তাঁরা বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। নিকোলের জন্য এটি ছিল দ্বিতীয় বিয়ে (এর আগে টম ক্রুজের সঙ্গে ১১ বছরের সংসার করেছিলেন)। তবে কিথের জীবনে এটি ছিল প্রথম। প্রথম থেকেই তাঁদের দাম্পত্যকে ঘিরে ছিল প্রচুর আগ্রহ ও কৌতূহল।

টালমাটাল সময়ও এসেছিল
তবে সম্পর্কের পথ সব সময় মসৃণ ছিল না। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই কিথের মাদকাসক্তি নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন তাঁরা। নিকোল প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, স্বামীর পাশে থেকে তাঁকে পুনর্বাসনের পথে ফেরানো তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। বহু উত্থান–পতন পেরিয়ে তাঁরা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখেন। এ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে তাঁদের দাম্পত্যকে অনেকে ‘হলিউডের সাফল্যের গল্প’ বলে মনে করতেন।

নিকোল কিডম্যান। ছবি: রয়টার্স

হঠাৎ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত
তবে ২০২৫ সালে এসে সব বদলে গেল। টেনেসির ন্যাশভিল আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন নিকোল। কাগজপত্র থেকে জানা যায়, এ সিদ্ধান্ত হঠাৎ নয়, বেশ কিছুদিন ধরেই পরিকল্পনা চলছিল। আদালতে জমা দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, উভয়ের মাসিক আয় প্রায় এক লাখ ডলার হলেও কেউ কাউকে শিশু ভরণপোষণ দেবেন না। তবে ‘কোকেন ক্লজ’ নামের একটি শর্ত সামনে এসেছে, যা নিয়ে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে।

কী এই ‘কোকেন ক্লজ’
নিকোল কিডম্যান ও কিথ আরবানের বিয়ে শেষ হওয়ার পর তাঁদের বিচ্ছেদের অঙ্গীকারনামায় একটি বিশেষ ধারা নিয়ে সংবাদ সামনে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ধারা ‘কোকেন ক্লজ’ নামে পরিচিত। এর শর্ত অনুযায়ী, আরবান যদি বিয়ের সময় সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত জীবন বজায় রাখেন, তাহলে তিনি প্রতি বছরের জন্য ছয় লাখ ডলার পাবেন। যেহেতু তাঁদের বিয়ের মেয়াদ ১৮ বছর, তাই এই শর্ত অনুযায়ী তাঁর পাওনা হতে পারে প্রায় ১১ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা)।

নিকোল কিডম্যান ও কিথ আরবান

কিথ আরবান ও তাঁর মাদক মুক্তির যাত্রা
আরবান মাদকাসক্তির সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়াই করেছেন। ২০০৬ সালে বিয়ের কয়েক মাস পরই তিনি তিন মাসের জন্য পুনর্বাসনকেন্দ্রে ছিলেন। ২০২৪ সালে এএফআই লাইফ অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড গালায় কিডম্যানকে সম্মাননা দেওয়ার সময় তিনি তাঁর সংগ্রামের কথা প্রকাশ করেছিলেন।
কিথ আরবান বলেন, ‘বিয়ের চার মাস পরই আমার আসক্তি আমাদের সম্পর্ককে বিপর্যস্ত করেছিল। তারপর রিহ্যাবে গিয়েছিলাম। নিক আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল।’

সন্তানদের ভবিষ্যৎ
তাঁদের দুই কন্যা সানডে রোজ (১৭) ও ফেইথ মার্গারেট (১৪)। আদালতে জমা দেওয়া অভিভাবকত্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, সন্তানেরা মূলত মায়ের সঙ্গেই থাকবে—বছরের ৩০৬ দিন। বাকি সময় বাবার কাছে কাটাবে। কিথ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।

আরও পড়ুন

নতুন সম্পর্কে কিথ
বিচ্ছেদের ঘোষণার অল্প সময় পরই খবর রটে যায় যে কিথ নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছেন। টিএমজেড ও ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়েছে, তিনি সংগীত–জগতেরই কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। যদিও এখনো তাঁর পরিচয় প্রকাশ্যে আসেনি। এক সূত্রের দাবি, নিকোল এ বিষয়টি অস্বীকার না করলেও বিস্মিত হয়েছেন।

অর্থ ও খ্যাতির অঙ্ক
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নিকোল কিডম্যান যেমন চলচ্চিত্রে, তেমনি কিথ আরবান সংগীতে একাধিক মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। তাঁদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি ডলার। এর মধ্যে নিকোলের ব্যক্তিগত সম্পদ প্রায় ৩৭৫ মিলিয়ন ডলার ও কিথের ১১৪ মিলিয়ন ডলার। শুধু অভিনয় ও সংগীত নয়, তাঁদের রিয়েল এস্টেট ব্যবসাও বেশ সমৃদ্ধ।

নিকোল কিডম্যান। ছবি: এএফপি

হলিউডে প্রভাব
হলিউডে কিডম্যান–আরবান দম্পতিকে অনেক সময় ‘আদর্শ দম্পতি’র প্রতীক হিসেবে দেখা হতো। হলিউডে তারকাদের সম্পর্ক ভাঙনের খবর একের পর এক আসছে, তখন এই বিচ্ছেদ নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টিএমজেড