বাজেট ৮–৯ কোটি, আয় শতকোটি টাকা
একটু একটু করে এগিয়ে চলেছে ভারতের মালয়ালম চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি। এই সময়ে পুরো ভারত তো বটেই, প্রবাসী দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মালয়ালম ভাষার সিনেমা। নিজস্ব গল্প আর উপস্থাপনায় তাক লাগিয়ে দিচ্ছে মালয়ালম ভাষার সিনেমা। স্থানীয়ভাবে নির্মিত কম বাজেটের সিনেমাগুলোও আকাশছোঁয়া সফলতা পাচ্ছে। এ তালিকায় চলতি বছরই যুক্ত হয়েছে একাধিক সিনেমা। যা ছিল ভারতের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে। এসব সিনেমা কোনো কোনোটি বাজেটের ১০ গুণের বেশি আয় করেছে।
‘মাঞ্জুমেল বয়েজ’
শুরুতেই বলা যায় ‘মাঞ্জুমেল বয়েজ’-এর কথা। সিনেমাটি এখন আলোচনায় রয়েছে। ইতিমধ্যে অল্প সময়ে শতকোটি আয় করে রেকর্ডও সিনেমাটির দখলে। আলোচিত এই সিনেমার বাজেট মাত্র ২০ কোটি রুপি। সেই সিনেমার আয় ২৪২ কোটির রুপির বেশি। সিনেমাটি নিয়ে আইএমডিবিতে সমালোচনায় বলা হয়েছে, মালয়ালম বড় একটা দর্শক সারভাইভাল থ্রিলার পছন্দ করেন। একই সঙ্গে স্থানীয় গল্প হওয়ায় দর্শকদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। গল্পটি দর্শকদের আবেগাপ্লুত করেছে। তেমনই একটি সিনেমা ‘মাঞ্জুমাল বয়েজ’।
সিনেমাটি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দুতে বলা হয়, বাজেট কম হলেও সিনেমাটি আন্তর্জাতিক মানের ছিল। এই সিনেমায় পরিচালকের সিনেমা–দর্শন উঠে এসেছে। চরিত্রগুলো তৈরি ও এগুলোর মধ্যে যে বন্ধন তৈরি হয়, তা দর্শকদের শেষ পর্যন্ত আটকে রাখে। একই সঙ্গে সিনেমার পরিচালনা, গল্প বলা, চিত্রগ্রহণ, অভিনয় দর্শকদের ভিন্ন স্বাদ দেয়। যে কারণে শেষ ২০ মিনিট পর্দা থেকে চোখ ফেরানো যায় না। পরিচালক চিদাম্বরমের এটি দ্বিতীয় সিনেমা। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এ সিনেমা যেন সবার গল্পই বলে।
‘প্রেমালু’
মুক্তির পর থেকেই আলোচনায় তরুণ দুই জুটির সিনেমা ‘প্রেমালু’। রোমান্টিক সিনেমাটির বাজেট ছিল মাত্র ৯ কোটি রুপি। সেই সিনেমার আয় দেখতে দেখতে ১৩৬ কোটি রুপির বেশি। সাদামাটা একটি গল্প হলেও মালয়ালম শিক্ষার্থীদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে রোমান্টিক গল্পটি। বেশির ভাগ তরুণ দর্শকই সিনেমার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে পেরেছেন।
গল্পটি এমন, শচীন কলেজের একটি মেয়েকে পছন্দ করে। কিন্তু বলার সাহস হয় না। এদিকে যখন ভালোবাসার কথা বলে, তখন জানতে পারে, মেয়েটি অন্য ছেলের সঙ্গে প্রেম করছে। পরে লন্ডনে যাওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সে কাজের উদ্দেশ্যে হায়দরাবাদে চলে আসে। এখানে এক ধনী পরিবারের মেয়ের সঙ্গে ঘটনাক্রমে দেখা হয়। প্রথম দেখায় রেণুকে পছন্দ করে শচীন। একসময় শচীন ধরে নেয়, তার প্রতি যত্নশীল রেণু তাকে পছন্দ করে। কিন্তু ঘটনা হয় উল্টো। এই প্রেমকাহিনি দর্শকদের আটকে রাখে। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন গিরিশ এডি।
সিনেমাটি কেন দর্শক দেখছেন? এ প্রসঙ্গে হিন্দুস্তান টাইমসে বলা হয়েছে, সিনেমাটি তরুণ প্রজন্মের দর্শকদের লক্ষ্য করে বানানো। তরুণদের মধ্যে প্রচুর শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য স্থানান্তরিত হয়ে ভারতের এক শহর থেকে অন্য শহরে চলে যান। তাঁদের গল্প তেমন একটা উঠে আসে না। যে কারণে গল্পটি তরুণদের বিনোদনের চাহিদা পূরণ করায় উপভোগ্য হয়েছে। এ ছাড়া সিনেমায় চরিত্রের অভিনয়, সংগীত, চিত্রনাট্য, পরিচালনাসহ কারিগরি বিষয়গুলো ভালো লেগেছে দর্শকদের। সিনেমার কমেডি ও বাস্তবতার গল্প দর্শক টেনেছে। সিনেমাটির কল্যাণে ২৪ বছর বয়সী নায়ক নাসলেন ও ২৩ বছর বয়সী নায়িকা মমিতা বাইজু এখন রীতিমতো তারকা।
‘ভারশাঙ্কালকু শেসাম’
গায়ক, অভিনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন বিনিথ শ্রীনিবাসন। ‘প্রেমাম’, ‘হৃদায়াম’সহ একাধিক সিনেমার সংগীত বিভাগে কাজ করে প্রশংসিত হয়েছেন। অভিনয় তাঁকে এনে দিয়েছিল প্রশংসা। এ বছর নতুন পরিচয়ে পর্দার পেছনে আসেন তিনি। পরিচালক হিসেবে কম বাজেট দিয়ে নির্মাণ শুরু করেন। বেছে নেন কমেডি ও ড্রামা ঘরানার গল্প। দুই বন্ধুর দুই ভিন্ন সময়ের গল্প। হঠাৎ এই বন্ধুদের কেরালায় দেখা হয়। সেই গল্পে এগিয়ে চলে ‘ভারশাঙ্কালকু শেসাম’ সিনেমা।
গত ১১ এপ্রিল মুক্তি পেয়েছে এই সিনেমা। সিনেমাটির বাজেট মাত্র আট কোটি রুপি। সিনেমাটি ইতিমধ্যে ১০ গুণের বেশি আয় করেছে। মাদ্রাজের দুটি বন্ধুত্বের গল্প দর্শকদের স্মৃতিকাতর করেছে। তরুণ বয়স পেরোনোর পর অনেক সময় দেখা যায়, বন্ধুত্বের বোঝা নিয়ে ভুল–বোঝাবুঝি হয়। হাস্যরসাত্মকভাবেই একটি সম্পর্কের গল্প বলা হয়েছে সিনেমায়। গল্পটি গভীরভাবে দর্শকদের অতীতে নিয়ে যায়—এভাবেই সিনেমাটির সাফল্য ব্যাখ্যা করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
আইএমডিবিতে এক সমালোচকের মন্তব্য, ‘সিনেমাটির গল্প দেখে মনে হয়, কোথাও এটি দেখেছি? দেখতে দেখতে সিনেমাটি একটি ভ্রমণে নিয়ে যায়।’
রবিন কৃষ্ণান নামের একজন লিখেছেন, ‘পরিচালক ভালোভাবেই রপ্ত করেছেন, কীভাবে হাসি আর আবেগের মধ্য দিয়ে সাধারণ দর্শকদের আটকে রাখতে হয়। চরিত্র বাছাইয়েও তিনি সফল।’
‘আব্রাহাম অজলার’
বছরের শুরুতেই আলোচনায় আসে মাত্র ছয় কোটি বাজেটের সিনেমা ‘আব্রাহাম অজলার’। মুক্তির প্রথম দিনেই চমকে দেয় সিনেমাটি। এক দিনেই বাজেটের পুরো টাকা উঠে আসে। তরুণ নির্মাতা মিধুন মানুয়েল থমাস বানিয়েছেন সিনেমাটি। সিনেমাটি নিয়ে দীর্ঘ একটা সময় দিতে হয়েছে। দর্শকেরা কীভাবে গল্পটি নেবেন, সেটাও গবেষণা করা হয়েছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিরিয়াল কিলারের গল্প নিয়ে হাজির হওয়া ছিল সফলতার একটি অংশ।
সিনেমায় নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন জয়রাম। তাঁর ব্যক্তি ও পেশাগত জীবনের চিত্র চরিত্রে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে বলা হয়েছে, ‘থ্রিলার সিনেমার মধ্যে থাকা রোমাঞ্চ দর্শক পছন্দ করেছে। প্রতিটি দৃশ্যে আলাদা গল্প দর্শকদের সিনেমাটিতে আটকে রেখেছে। যে কারণে গল্প মন্থর মনে হয়নি। মেডিকেল ক্রাইম ড্রামা দর্শকদের পছন্দের তালিকায় ছিল দীর্ঘ সময়। এ ছাড়া একটা ঘটনাই নয়, একের পর নতুন ঘটনা সিনেমাটিকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করেছে।’