কারা হচ্ছেন নতুন হ্যারি, রন আর হারমায়নি?

আরাবেলা স্ট্যানটন, ডমিনিক ম্যাকলাকলিন ও আলাস্টার স্টাউট। এইচবিও

এইচবিও ‘হ্যারি পটার’ টিভি সিরিজ বানানোর ঘোষণা দিয়েছিল ২০২৩ সালে। ‘হ্যারি পটার’-এর বই অবলম্বনে পূর্ণাঙ্গ একটি সিরিজ আসতে চলেছে, এ খবরে দারুণ খুশি ছিলেন ‘পটারহেড’রা। এরপর কেটে গেছে দুই বছরের বেশি সময়। অবশেষে এইচবিও ও ওয়ার্নার ব্রাদার্স জানিয়েছে কে কে অভিনয় করছে সিরিজটির কেন্দ্রীয় তিন চরিত্রে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্ল্যাটফর্মটির এক অফিশিয়াল ঘোষণায় এসব তথ্য জানানো হয়।

হ্যারি পটারের ভূমিকায় দেখা যাবে ডমিনিক ম্যাকলাকলিনকে। হারমায়নি গ্রেঞ্জার চরিত্রে আরাবেলা স্ট্যানটন ও রন উইসলি হবেন আলাস্টার স্টাউট। জে কে রাওলিংয়ের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম সিনেমা ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফারস স্টোন’ ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়ার পর তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। রাতারাতি তারকা হয়ে ওঠে ড্যানিয়েল রেডক্লিফ, এমা ওয়াটসন ও রুপার্ট গ্রিন্ট। হ্যারি, হারমায়নি ও রন চরিত্রে অভিনয় করে তারা। পরবর্তী সময় এই ত্রয়ীকে দেখা যায় ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের বাকি সাত সিনেমাতেও।

২০১১ সালে যখন ‘হ্যারি পটার’ ফ্র্যাঞ্চাইজির শেষে সিনেমা ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোস-পার্ট ২’ মুক্তি পায়। দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে থাকা হ্যারি-ভক্তদের প্রচণ্ড মন খারাপ হয়। অনেকেই ভেবেছিলেন, হয়তো নতুন কিস্তি আসবে, কিন্তু পরে আর তা হয়নি। তাই শেষ সিনেমা মুক্তির এক যুগ পরে যখন এইচবিও সিরিজ বানানোর ঘোষণা দেয়, সবাই নড়েচড়ে বসে। কিন্তু ঘোষণার পর দুই বছরেও যখন আর সিরিজটি নিয়ে নতুন খবর মিলছিল না, তখন ভক্তদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল বৈকি। তবে গতকালের ঘোষণায় সব জল্পনার অবসান হয়েছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে এইচবিও ‘হ্যারি পটার’ নিয়ে নতুন সিরিজের ঘোষণা দেয়। এরপরই শুরু হয় প্রধান তিন চরিত্রের জন্য শিল্পীর খোঁজ। অডিশনের জন্য ৩০ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়ে।

সিরিজের নির্বাহী প্রযোজক ফ্রানচেস্কা গার্ডিনার ও পরিচালক মার্ক মাইলড যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘কাস্টিং পরিচালক লুসি বিউভান ও এমিলি ব্রকমানের নেতৃত্বে আমরা আমাদের পরবর্তী হ্যারি, রন আর হারমায়নিকে খুঁজে পেয়েছি। এই তিনজন অভিনেতাই অসাধারণ প্রতিভাবান। আমরা অধীর আগ্রহে তাদের পর্দায় দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।’ বিবৃতিতে তাঁরা আরও বলেন, ‘হাজার হাজার শিশু-কিশোর অডিশন দিয়েছে। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। প্রতিভাবানদের খুঁজে পাওয়া সত্যিই আনন্দের।’

হ্যারি পটার চরিত্রের জন্য নির্বাচিত ডমিনিক ম্যাকলাকলিন অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার সিরিজ ‘গিফটেড’, কমেডি সিনেমা ‘গ্রো’-তে অভিনয় করেছেন। ‘গ্রো’-তে তাঁর সহ–অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন নেটফ্লিক্সের আলোচিত সিরিজ ‘ব্রিজারটন’-এর রোশুয়েল, ‘টেড লাসো’-এর জেরেমি সুইফট। রন উইসলি চরিত্রে আলাস্টার স্টাউটের হবে বড় পর্দার এটিই প্রথম কাজ। তবে এ তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হারমায়নি গ্রেঞ্জার চরিত্রের জন্য নির্বাচিত হয় আরাবেলা স্ট্যানটন। এই বয়সেই তার রয়েছে মঞ্চে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে সে লন্ডনের ওয়েস্টএন্ডে ‘মাটিল্ডা-দ্য মিউজিক্যাল’-এর ম্যাটিল্ডা চরিত্রে অভিনয় করে। তার আবেগপ্রবণ অভিনয়শৈলীতে দর্শকদের মুগ্ধ করে।

সিরিজটিতে আরও দেখা যাবে ‘দ্য ক্রাউন’, ‘কনক্লেভ’ অভিনেতা জন লিথগো, ‘মিশন: ইমপসিবল: দ্য ফাইনাল রেকনিং’-এর জ্যানেট ম্যাকটিয়ারসহ অনেককে।
ব্রিটিশ লেখিকা জে কে রাওলিংয়ের ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের সাতটি বই রয়েছে। সাতটি বই অবলম্বনে ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত আটটি সিনেমা বানানো হয়। সিনেমার পর্দার হ্যারি পটারের বিশাল জাদুর দুনিয়ার খুব কম জিনিসই ফুটে উঠেছে। এত কম সময় সিনেমা দেখে পটারপ্রেমীদের যে মন ভরত না, তা বলাই বাহুল্য। তাই এইচবিও থেকে যখন ঘোষণা আসে, সিরিজটি হবে সত্যিকার অর্থেই হ্যারি পটার বইয়ের পূর্ণাঙ্গ রূপান্তর, তখন পটারপ্রেমীদের মধ্যে আলোড়ন ওঠে।

এ ব্যাপারে এইচবিও ও প্রযোজনা সংস্থার আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এক দশকব্যাপী এ টেলিভিশন সিরিজে জাদু দুনিয়ার প্রতিটি কোনা ঘুরে দেখা হবে। নতুন সিরিজটি ভরা থাকবে সেই জাদুময়তার বিশদ বর্ণনা, প্রিয় সব চরিত্র আর দারুণ দৃশ্যে, যা গত পঁচিশ বছরে হ্যারি পটার–ভক্তদের হৃদয় জয় করে এসেছে।’
টিভি সিরিজ নির্মাণের সঙ্গে লেখিকা জে কে রাওলিং সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকবেন। নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সিরিজটি টেলিভিশনে প্রচারের উপযোগী করে তুলতে সাহায্য করবেন তিনি।

আরও পড়ুন

সিরিজটি লিখছেন ও শো রানারের দায়িত্ব পালন করছেন ফ্রানচেস্কা গার্ডিনার। একাধিক পর্ব পরিচালনা করবেন ও প্রযোজনা করছেন মার্ক মাইলড। এইচবিওর হয়ে এটি তৈরি হচ্ছে ব্রন্টে ফিল্ম অ্যান্ড টিভি ও ওয়ার্নার ব্রোস টেলিভিশন। নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে আছেন লেখিকা জে কে রাউলিং, নিল ব্লেয়ার, রুথ কেনলি-লেটস (ব্রন্টে ফিল্ম অ্যান্ড টিভি) এবং ডেভিড হেইম্যান (হেইডে ফিল্মস)।

তথ্যসূত্র: ভ্যারাইটি, ভ্যানিটি ফেয়ার