খেলা নিয়ে সর্বকালের সেরা ১০ সিনেমা

খেলাধুলা নিয়ে নির্মিত হয়েছে হলিউডের অনেক কালজয়ী সিনেমা। বক্স অফিসের সফলতা থেকে সেসব সিনেমা জয় করেছে দর্শকের হৃদয়। তবে খেলার সিনেমাগুলোতে কেবল খেলার মুহূর্ত নয়; বরং এতে প্রেম, সংগ্রাম, যুদ্ধ, অভিবাসন, অর্থনৈতিক বৈষম্যসহ জীবনের নানা দিকও ফুটে ওঠেছে। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য হলিউড রিপোর্টার প্রকাশ করেছে তাদের দৃষ্টিতে সেরা ২৫টি খেলাধুলা নিয়ে সিনেমার নাম। তাদের ছয়জন সমালোচক প্রায় ১০০টি সিনেমার মধ্য থেকে এই ২৫টি বেছে নিয়েছেন। সে তালিকার সেরা দশে কোন কোন সিনেমা আছে তা জেনে নেওয়া যাক।

হলিউড রিপোর্টারের চোখে খেলাধুলা নিয়ে সর্বকালের সেরা ১০ সিনেমাছবি: কোলাজ

১. ‘রেজিং বুল’
তালিকায় এক নম্বরে আছে সাবেক মিডলওয়েট চ্যাম্পিয়ন জেক লামোত্তার আত্মজীবনী ‘রেজিং বুল: মাই স্টোরি’ অবলম্বনে নির্মিত সিনেমা ‘রেজিং বুল’। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন প্রখ্যাত পরিচালক মার্টিন স্করসেজি। লামোত্তার চরিত্রে অভিনয় করেছেন রবার্ট ডি নিরো। এ ছাড়া অভিনয় করেছেন জো পেস্কি, ক্যাথি মরিয়ার্টি, ফ্র্যাঙ্ক ভিনসেন্ট। এই চরিত্রের জন্য রবার্ট ডি নিরো অস্কারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন। এটি শুধু বক্সিংয়ের গল্প নয়, বরং এক বক্সারের ভেতরের অস্থিরতা, সন্দেহ আর রাগ কীভাবে তার ব্যক্তিগত জীবন ও খেলায় প্রভাব ফেলে, সেটাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সিনেমাটি বানাতে খরচ হয়েছিল ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অস্কারে এটি আটটি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল, যার মধ্যে বেস্ট এডিটিং পুরস্কারও অন্তর্ভুক্ত। প্রথম দিকে বক্স অফিসে তেমন সাড়া ফেলেনি; আয় হয়েছিল ২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অনেকেই রক্তাক্ত দৃশ্যের জন্য সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি কাল্ট ক্ল্যাসিক হয়ে গেছে। ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেস এটিকে ‘সংস্কৃতি, ঐতিহাসিক ও নান্দনিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ’ সিনেমা হিসেবে সংরক্ষণ করেছে।

‘রেজিং বুল’ সিনেমার দৃশ্য
ছবি: আইএমডিবি

২. ‘হুপ ড্রিমস’
‘হুপ ড্রিমস’ ১৯৯৪ সালের একটি আমেরিকান তথ্যচিত্র, পরিচালনা করেছেন স্টিভ জেমস এবং প্রযোজনা করেছেন ফ্রেডেরিক মার্কস, স্টিভ জেমস ও পিটার গিলবার্ট। ছবিতে শিকাগোর দুই আফ্রিকান-আমেরিকান মাধ্যমিকের ছাত্র, উইলিয়াম গেটস ও আর্থার এজির জীবন ও তাদের পেশাদার বাস্কেটবল খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্নের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। গল্পটি শুরু হয় ১৯৮৭ সালে, যখন গেটস ও এজি শিকাগোর দরিদ্র আফ্রিকান-আমেরিকান পাড়া থেকে সেন্ট জোসেফ হাইস্কুলে ভর্তি হয়। চলচ্চিত্রটিতে তাদের খেলাধুলার সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের ওঠানামা, ইনজুরি, পরিবারের আর্থিক সংকট এবং স্বপ্নের পথে বাধার গল্প উঠে এসেছে। প্রাথমিকভাবে ১৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের পরিকল্পনা থাকলেও, এটি নির্মাণ করা হয় ১৭১ মিনিট। পাঁচ বছর ধরে এর শুটিং করা হয়, যা থেকে তৈরি হয় ২৫০ ঘণ্টার ফুটেজ। ১৯৯৪ সালে সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এটির প্রিমিয়ার হয়। বক্স অফিসে নির্মাতারা আশাবাদী ছিলেন না, তবে এটি সমালোচক ও দর্শক উভয়ের কাছেই প্রশংসা পায় এবং বিশ্বব্যাপী ১১ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করে। ২০০৫ সালে এটি মার্কিন জাতীয় চলচ্চিত্র রেজিস্ট্রিতে সংরক্ষিত হয় এবং ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ডকুমেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন এটিকে সর্বকালের সেরা তথ্যচিত্র ঘোষণা করে।

‘হুপ ড্রিমস’ সিনেমার দৃশ্য
ছবি: আইএমডিবি

৩. ‘হোয়েন উই ওয়্যার কিংস’
কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘হোয়েন উই ওয়্যার কিংস’। ১৯৭৪ সালে জর্জ ফোরম্যানকে হারিয়ে ৩২ বছর বয়সে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হওয়া তার গল্পই উপজীব্য। এটি পরিচালনা করেছেন নির্মাতা লিওন গাস্ট। তথ্যচিত্রটি নির্মাণে সময় লেগেছিল ২২ বছর। ছবিটি ১৯৯৬ সালে সেরা তথ্যচিত্রের জন্য অস্কার জিতেছিল। বেলজিয়ান সিন্ডিকেট অব সিনেমা ক্রিটিকসের গ্র্যান্ড প্রিক্সের জন্যও মনোনীত হয়েছিল এটি।

‘হোয়েন উই ওয়্যার কিংস’ তথ্যচিত্রের দৃশ্য
ছবি: আইএমডিবি
আরও পড়ুন

৪. ‘বুল ডারহাম’
স্পোর্টস-রোমান্টিক কমেডি ‘বুল ডারহাম’ মুক্তি পায় ১৯৮৮ সালে। এটি পরিচালনা করেন রন শেলটন। ছবির নির্মাতা নিজেও একজন বেসবল খেলোয়াড় ছিলেন। তাঁর মাইনর-লিগ খেলার অভিজ্ঞতার ওপর নির্মিত হয়েছে ছবিটি। বাণিজ্যিক দিক থেকে সিনেমাটি সফলতা অর্জন করে, যা উত্তর আমেরিকায় ৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করে। সমালোচকেরা এটিকে সর্বকালের সেরা স্পোর্টস সিনেমার মধ্যে স্থান দিয়েছেন। স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড এটিকে ১ নম্বর সিনেমা, মুভিং আর্টস ফিল্ম জার্নাল ৩ এবং রটেন টমেটোর ৫৩টি সেরা-পর্যালোচিত স্পোর্টস মুভির তালিকায় ১ নম্বরে এটিকে স্থান দিয়েছে। বাণিজ্যিক সফলতার সঙ্গে ছবিটি পুরস্কারেও সমাদৃত হয়। সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের জন্য অস্কারে মনোনীত হয়, গোল্ডেন গ্লোবে সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়নের সঙ্গে এটি রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা, বোস্টন সোসাইটি অব ফিল্ম ক্রিটিকস শেলটনের চিত্রনাট্যকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট ২০০৮ সালে ছবিটিকে শীর্ষ ১০ স্পোর্টস ফিল্মের মধ্যে পাঁচ নম্বর স্থানে অন্তর্ভুক্ত করে।

‘বুল ডারহাম’ সিনেমার দৃশ্য
ছবি: আইএমডিবি

৫. ‘ওজে: মেড ইন আমেরিকা’
তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয় ২০১৬ সালে, যা ইএসপিএন ফিল্মসের ৩০ ফর ৩০ সিরিজের অন্তর্ভুক্ত। এটি পরিচালনা করেছেন এজরা এডেলম্যান। পাঁচ পর্বের মিনি সিরিজটি সিনেমা হলেও মুক্তি পায়। ২০১৬ সালে তথ্যচিত্রটির প্রিমিয়ার হয় সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এবং পরে নিউইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলেসে থিয়েটারে প্রদর্শিত হয়। এতে প্রখ্যাত আমেরিকান ফুটবলার, অভিনেতা ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ওজে সিম্পসনের জীবন ও কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক তুলে আনা হয়। এটি শুরু হয় তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ারের মধ্য দিয়ে, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় উদীয়মান তারকা হিসেবে এবং শেষ হয় ২০০৭ সালের ডাকাতির জন্য কারাবাসে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। এ ছাড়া তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে তাঁর টেলিভিশন ও অভিনয় ক্যারিয়ার, নিকোল ব্রাউন সিম্পসনের সঙ্গে সম্পর্ক, পারিবারিক সহিংসতা, নিকোল ও রনাল্ড গোল্ডম্যানের হত্যার মামলা, বিচারপ্রক্রিয়া এবং লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের বৃহত্তর সামাজিক ও বর্ণগত প্রেক্ষাপট। নির্মাতা এডেলম্যান ১৮ মাস ধরে ৭২টি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন, যার মধ্যে রয়েছেন প্রসিকিউশন ও প্রতিরক্ষা দল, সিম্পসনের বন্ধুরা, পরিবারের সদস্য, সহকর্মী ফুটবল খেলোয়াড় এবং পুলিশি ও নাগরিক অধিকার কর্মীরা। তথ্যচিত্রটি সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস, স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড, দ্য নিউইয়র্ক টাইমসসহ বহু সমালোচক এটিকে মাস্টারওয়ার্ক হিসেবে অভিহিত করেছেন। এটি ৮৯তম অস্কারে সেরা তথ্যচিত্র ফিচার ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতে। ২০২৫ সালে রোলিং স্টোন এটিকে ২১তম শতাব্দীর সেরা ১০০ চলচ্চিত্রের মধ্যে ১১ নম্বরে স্থান দিয়েছে।

‘ওজে: মেড ইন আমেরিকা’র একটি দৃশ্য
ছবি: আইএমডিবি

৬. ‘ব্রেকিং অ্যাওয়ে’
১৯৭৯ সালে মুক্তি পায় কমেডি-ড্রামা চলচ্চিত্র ‘ব্রেকিং অ্যাওয়ে’, যা পরিচালনা ও প্রযোজনায় ছিলেন পিটার ইয়েটস। ছবির কাহিনি লিখেছেন স্টিভ টেসিচ। গল্পের কেন্দ্রবিন্দু যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা রাজ্যের ব্লুমিংটন শহরের চার বন্ধু—ডেভ, মাইক, সাইরিল ও মুচার—যাঁরা মাধ্যমিক শেষ করে জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পান না। চারজনের মধ্যে একজন সাইক্লিংপ্রেমী ডেভ, ইতালীয় সাইক্লিস্টদের প্রতি তাঁর রয়েছে গভীর আগ্রহ। ছবিতে তাঁর ও বন্ধুদের সঙ্গে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধনী পরিবারের ছাত্রদের দ্বৈরথ উঠে আসে। ছবিতে ডেভের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডেনিস ক্রিস্টোফার, আর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন ড্যানিয়েল স্টার্ন, ডেনিস কোয়াড, জ্যাকি আর্ল হেলি, বারবারা বারি ও পল ডুলি। ছবিটি কম বাজেটের হলেও অভিনয় ও চরিত্র নির্মাণের কারণে দর্শক ও সমালোচকদের মন জয় করেছে। বিশেষ করে ডেনিস ক্রিস্টোফার ও পল ডুলির অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। ‘ব্রেকিং অ্যাওয়ে’ ১৯৭৯ সালে অস্কার জিতেছে সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যে। ছবিটি সেরা চলচ্চিত্র ও সেরা সহ-অভিনেত্রী হিসেবেও মনোনয়ন পেয়েছিল। এ ছাড়া এটি সেরা কমেডি/মিউজিক্যাল চলচ্চিত্র ক্যাটাগরিতে গোল্ডেন গ্লোব জেতে। ২০০৬ সালে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের তালিকায় এটি আমেরিকার ১০০টি সবচেয়ে অনুপ্রেরণামূলক চলচ্চিত্রের মধ্যে অষ্টম স্থান অর্জন করে।

‘ব্রেকিং অ্যাওয়ে’ সিনেমার দৃশ্য
ছবি: আইএমডিবি

৭. ‘এইট মেন আউট’
বেসবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা চলচ্চিত্রের মধ্যে একটি ‘এইট মেন আউট’, যা ১৯১৯ সালের পেশাদার বেসবল দল শিকাগো হোয়াইট সক্সের স্ক্যান্ডাল নিয়ে তৈরি। ছবিটি পরিচালনা করেছেন জন সেলস। এর কাহিনি এতই বিস্তৃত ও জটিল যে এটি সহজেই আট পর্বের একটি সীমিত সিরিজের গল্প হয়ে উঠতে পারত। ছবিটি বেসবলের সেই সময়ের উদীয়মান খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত চাহিদার মধ্যে সংঘাতের গল্প উঠে এসেছে। ১৯১৯ সালের পর, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিবেশ, খেলোয়াড়দের প্রতিভা ও স্বপ্ন, আর ব্যবসায়িক চাপ—সবকিছু মিলিয়ে সিনেমাটি বাস্তবসম্মত ও ইতিহাসভিত্তিক প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করে। ছবিতে নির্মাতা জন সেলস নিজেই ক্রীড়া সাংবাদিক রিং লার্ডনারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

‘এইট মেন আউট’ সিনেমার দৃশ্য
ছবি: আইএমডিবি

৮. ‘রকি’
‘রকি’ চলচ্চিত্র মুক্তি পায় ১৯৭৬ সালে। বিশ্ব সিনেমার অন্যতম অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প হিসেবে এটি বিবেচিত। ছবিটি পরিচালনা করেছেন জন জি অ্যাভিল্ডসেন। এর চিত্রনাট্য লেখার সঙ্গে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিলভেস্টার স্ট্যালোন। এই ছবিতেই স্ট্যালোনের তারকাখ্যাতির সূচনা হয়। অখ্যাত বক্সার রকি বালবোয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। জীবনের নানা ব্যর্থতা আর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেই দিন কাটে তার। একদিন ভাগ্যক্রমে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অ্যাপোলো ক্রিডের বিপক্ষে লড়ার সুযোগ পায় সে। এই সুযোগই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। রকি কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে রিংয়ে নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং প্রমাণ করে, সে শুধুই এক সাধারণ বক্সার নয়; বরং এক সত্যিকারের লড়াকু মানুষ। মাত্র এক মিলিয়ন ডলার বাজেটে নির্মিত এই ছবিটি মুক্তির পর অপ্রত্যাশিত সাফল্য পায়—বিশ্বব্যাপী আয় করে প্রায় ২২৫ মিলিয়ন ডলার। ‘রকি’ সে বছরের অন্যতম সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্রে পরিণত হয় এবং সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক ও সেরা সম্পাদনা বিভাগে অস্কার জয় করে। পরবর্তী সময়ে ছবিটির সাতটি সিকুয়াল তৈরি হয়, যার মধ্যে রয়েছে ‘রকি টু’, ‘রকি থ্রি’, ‘রকি ফোর’ ও ‘ক্রিড’ সিরিজ।

‘রকি’ সিনেমার দৃশ্য
ছবি: আইএমডিবি

৯. ‘ব্রিং ইট অন’
২০০০ সালের কিশোরভিত্তিক কমেডি চলচ্চিত্র ‘ব্রিং ইট অন’ মূলত প্রতিযোগিতামূলক চিয়ারলিডিং বা উৎসাহ দলের জগৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র টরেন্স শিপম্যান, যার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ক্রিস্টেন ডানস্ট। টরেন্স তাঁর স্কুলের চিয়ারলিডিং দল ‘টোরোস’-এর অধিনায়ক। টরেন্সের দল টোরোস অনেক দিন ধরে প্রতিযোগিতায় জিতে আসছিল, কিন্তু একসময় তারা জানতে পারে, তাদের সব নাচ আর রুটিন আসলে নকল করা হয়েছে আরেক দল কম্পটন ক্লোভার্স থেকে, যাদের নেতৃত্বে আছে গ্যাব্রিয়েল ইউনিয়ন। ছবিটি একদিকে যেমন মজাদার, অন্যদিকে চিয়ারলিডিংয়ের কঠিন পরিশ্রম, প্রতিযোগিতা দেখানো হয়েছে।

‘ব্রিং ইট অন’ সিনেমার দৃশ্য
ছবি: আইএমডিবি
আরও পড়ুন

১০. ‘দ্য লোনলিনেস অব দ্য লং ডিসটেন্স রানার’
১৯৬২ সালের ব্রিটিশ চলচ্চিত্র ‘দ্য লোনলিনেস অব দ্য লং ডিসটেন্স রানার’ পরিচালনা করেছেন টনি রিচার্ডসন। ছবিটি নির্মিত হয়েছে লেখক অ্যালান সিলিটোর একই নামের ছোটগল্প অবলম্বনে। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র কলিন—নটিংহ্যামের এক দরিদ্র এলাকা থেকে আসা এক কিশোর, যে চুরির অপরাধে আটক হয়ে পাঠানো হয় কিশোর সংশোধনাগারে। সেখানে প্রতিষ্ঠানের প্রধান তার দৌড়ানোর প্রতিভা লক্ষ করে এবং মনে করে, কলিনকে প্রশিক্ষণ দিলে সে ধনী পরিবারের ছাত্রদের বিরুদ্ধে দৌড় প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে পারে, এমনকি একদিন অলিম্পিয়ানও হতে পারে। কিন্তু কলিনের চরিত্রের বিশেষত্ব এখানেই—সে সহজে সমাজের নিয়মে বাঁধা পড়ে না। তার দৌড় কেবল জয় বা পরাজয়ের জন্য নয়; বরং স্বাধীনতা আর নিজের পরিচয় খোঁজার প্রতীক।

‘দ্য লোনলিনেস অব দ্য লং ডিসটেন্স রানার’ সিনেমার দৃশ্য
ছবি: আইএমডিবি

টম কোর্টেনি অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এক তরুণের অন্তর্দ্বন্দ্ব, প্রতিবাদ ও একাকিত্ব। ছবিতে সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনযাপন, সংগ্রাম ও বিদ্রোহ উঠে এসেছে বাস্তব ও কৌতুকপূর্ণ ভঙ্গিতে। অ্যালান সিলিটোর তীক্ষ্ণ সংলাপ, টনি রিচার্ডসনের সৃজনশীল সম্পাদনা আর ছবির বিদ্রোহী মনোভাব—সব মিলিয়ে এটি হয়ে উঠেছে ব্রিটিশ নিউ ওয়েভ সিনেমার এক অনন্য সৃষ্টি।