৬০ পেরিয়ে জীবনের সহজ সমীকরণ জানালেন ব্র্যাড পিট

ব্র্যাড পিটরয়টার্স

প্রায় চার দশকের ক্যারিয়ার, তবু পর্দায় ব্র্যাড পিট–জাদু এখনো ভোলার নয়। চলতি বছরও তিনি নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করেছেন ‘এফ ওয়ান’ সিনেমা দিয়ে। আজ ১৮ ডিসেম্বর এই হলিউড তারকার জন্মদিন। নিজের বয়স, ক্যারিয়ারসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন অভিনেতা। জন্মদিন উপলক্ষে জেনে নেওয়া যাক সেসব কথার চুম্বক অংশ।

সংযত
বয়স ৬০ পেরিয়েছে, ক্যারিয়ারও কম সময়ের নয়—দীর্ঘ এই সময়ে কতটা বদলেছেন ব্র্যাড পিট? সম্প্রতি জিকিউকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, জীবনের এই অধ্যায়ে এসে নিজেকে তিনি ‘সংযত’ ও ‘নিরাপদ’ অনুভব করছেন।


সাক্ষাৎকারে ব্র্যাড পিটকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কীভাবে তিনি এই মানসিক অবস্থানে পৌঁছালেন। উত্তরে পিট বলেন, ‘ভুল যা–ই হোক না কেন, সেখান থেকে শেখাটাই আসল। এরপর সামনে এগিয়ে যেতে হয়। এই শেখার প্রক্রিয়াই শেষ পর্যন্ত পরবর্তী সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়।’

ব্র্যাড পিট আরও বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু বিষয় আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাঁর ভাষ্যে, ‘আমার বয়সে এসে আপনি বুঝতে পারেন, কাদের সঙ্গে থাকা জরুরি—যাঁদের আপনি চেনেন, যাঁদের ভালোবাসেন, আর যাঁরা আপনাকে ভালোবাসেন। বন্ধু, পরিবার—এই তো সব। এরপর আমরা আমাদের কাজগুলো তৈরি করতে থাকি। পুরো বিষয়টা আসলে খুবই সহজ এক সমীকরণ।’

৬০ পেরিয়ে ব্র্যাড পিট জীবনকে সহজ ও অর্থপূর্ণ করে তোলার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করলেন। তিনি জীবনের অতিমাত্রায় জটিলতা এড়িয়ে চলা ও সুখী থাকার জন্য মনের শান্তি বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। প্রযুক্তি ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা সহজভাবে মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন।

খ্যাতির চাপ ও ব্যক্তিগত জীবন
সাক্ষাৎকারে ব্র্যাড পিট খোলাখুলিভাবে কথা বলেছিলেন জনসমক্ষে থাকা জীবন নিয়ে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত জীবন সব সময়ই খবরের শিরোনামে থাকে। প্রায় ৩০ বছর ধরে। কিংবা বলা যায়, আমার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো না কোনো সংস্করণ তো সব সময়ই আলোচনায়।’

আরও পড়ুন

খ্যাতিকে ব্র্যাড পিট বিভ্রান্তি হিসেবেই দেখেন, যার সঙ্গে তাঁকে মানিয়ে নিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা সব সময়ই একধরনের বিরক্তির বিষয় ছিল—কখনো বেশি, কখনো কম। আমি যখন সত্যিই যেসব কাজ করতে চাই, তখন এর সঙ্গে লড়াই করেই এগোতে হয়। আপনি যদি এটাকে গুরুত্ব দেন, তাহলে এটা সময় নষ্টের একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়, একধরনের অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা,’ বলেন তিনি।

ব্র্যাড পিট। রয়টার্স

তবে এত কিছুর মধ্যেও এখন তিনি মানসিক শান্তির জায়গায় পৌঁছেছেন বলে জানান অভিনেতা। তিনি বলেন, ‘আমার জীবন এখন অনেকটাই গোছানো। বন্ধুদের সঙ্গে, প্রিয় মানুষদের সঙ্গে, পরিবারকে নিয়ে এবং আমি কে, সেটি জানার জায়গা থেকে জীবনটা বেশ নিরাপদ লাগে। এসবের পাশে খ্যাতি যেন শুধু একটা মাছি—চারপাশে একটু ঘোরাফেরা করে, এর বেশি কিছু নয়।’

ক্যারিয়ারের নতুন উচ্চতায়
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে চলতি বছর নিজেকে নতুন করে ফিরে পেয়েছেন ব্র্যাড পিট। তাঁর অভিনীত সিনেমা ‘এফ ওয়ান’ বক্স অফিসে আয় করেছে ৬৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি; যা তাঁর ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ আয়। ছবিটি গত সপ্তাহ থেকে স্ট্রিম হচ্ছে অ্যাপল টিভি প্লাসে।

‘এফ ওয়ান’–এ ব্র্যাড পিট। ছবি: আইএমডিবি

৩০ বছর আগে দুর্ঘটনায় ফর্মুলা ওয়ানের রেস থেকে ছিটকে পড়েন সনি হেইস (ব্র্যাড পিট)। একসময়ের প্রতিভাবান রেসার এখন ভবঘুরে আর পাঁড় জুয়াড়ি। নিউইয়র্কে মাঝেমধ্যে তাঁকে ট্যাক্সি চালাতেও দেখা যায়; কিন্তু স্টিয়ারিং হুইল হাতে পেলে এখনো হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। ঘুম থেকে উঠেই চলে যান ডেটোনা সার্কিটে, সেখানে অংশ নেন ২৪ ঘণ্টার রেসে। গাড়ির সিটে বসার পর শূন্য থেকে যখন নিমেষেই গাড়ির স্পিড ১৮০–তে উঠে যায়, তখন দর্শকেরাও যেন সেই সেকেন্ড থেকে ঢুকে পড়েন রেসিংসের টানটান উত্তেজনার দুনিয়ায়। এমন গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন জোসেফ কোসিনস্কি।

নিজে কখনো রেসের ড্রাইভার হতে চেয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি হেসে বলেন, ‘আমি যদি একটু কম বয়সী হতাম, তাহলে হয়তো সত্যিই ওই পথে হাঁটার চেষ্টা করতাম।’

এরপর ব্র্যাড পিট রেসিংয়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘এই অনুভূতি ভাষায় বোঝানো কঠিন। এর আগে কখনো এমন অনুভব করিনি—ডাউনফোর্স কীভাবে কাজ করে, উচ্চগতিতে বাঁক নেওয়ার সময় গাড়ি কীভাবে রাস্তায় লেগে থাকে—সবকিছুই অবিশ্বাস্য! এটা সত্যিই দারুণ!’