যৌন হয়রানির মামলার বাদী, কে এই আলোচিত অভিনেত্রী
‘জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছি। সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হলো কারও সঙ্গে বেশি কথাও বলতে পারছি না। অনেকেই হয়তো ভাববে বানানো গল্প।’ গত সপ্তাহে সেঠ মেয়ার্সের শোতে হাজির হয়ে নিজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে এভাবেই বলেন ব্লেইক লাইভলি। অভিনেত্রীর নতুন সিনেমা ‘অ্যানাদার সিম্পল ফেভার’ মুক্তি পেয়েছে সম্প্রতি। আলোচনাটা তাই সিনেমা নিয়েই হওয়া সমীচীন ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে অভিনেতা জাস্টিন বালডোনির বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির মামলা এবং তার পরের নানা ঘটনা ৩৭ বছর বয়সী অভিনেত্রীর সময়টা বদলে দিয়েছে।
গত বছরের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা ছিল অল্প বাজেটে নির্মিত ‘ইট এন্ডস উইথ আস’। ছবিটি নির্মাণ করেন জাস্টিন বালডোনি, পর্দায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ও করেন। অন্যদিকে ছবির প্রধান চরিত্রে দেখা যায় ব্লেইক লাইভলিকে, এটির অন্যতম প্রযোজকও ছিলেন তিনি। তবে গত বছরের শেষে ছবিটির দুই তারকা আলোচনায় আসেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। প্রথমে বালডোনির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন ব্লেইক।
বালডোনিও পাল্টা মামলা করেন। পরে অভিনেতা ও নির্মাতার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেন ব্লেইক। কয়েক দিন ধরে হলিউড তাই কার্যত উত্তপ্ত এই মামলা ও পাল্টা মামলা নিয়ে। অভিনেত্রীর অভিযোগ, সিনেমার শুটিংয়ে বালডোনি আপত্তিকর আলোচনা করেছেন ও চিত্রনাট্যের বাইরে যৌনদৃশ্য যোগ করার পরিকল্পনা করেছেন। এ ছাড়া নানাভাবে তাঁর সুনামহানির চেষ্টা করেছেন। এক বিবৃতিতে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বালডোনির আইনজীবী। এই ঘটনার পর হলিউডে শুটিং সেটে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। ট্যালেন্ট এজেন্সি বালডোনির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে।
মামলাটি নিয়ে নতুন অগ্রগতির খবর পাওয়া গেছে গতকাল শুক্রবার। সিএনএন জানিয়েছে, মামলাটিতে ব্লেইক লাইভলি আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। লাইভলির আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আগামী বছর যখন মামলাটি বিচারে যাবে, তখন তিনি আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। ২০২৬ সালের মার্চে মামলার বিচার শুরু হওয়ার কথা। দুই পক্ষই জানিয়েছে, আপস করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
মার্কিন অভিনেতা অ্যানি লাইভলির মেয়ে ব্লেইক। ১৯৯৮ সালে বাবার পরিচালিত ‘স্যান্ডম্যান’ দিয়ে অভিষেক। ২০০৫ সালে কমেডি-ড্রামা সিনেমা ‘দ্য সিস্টারহুড অব দ্য ট্রাভেলিং প্যান্টস’ দিয়ে পরিচিতি পান। তিন বছর সিনেমাটির সিকুয়েলও আলোচিত হয়। তবে ২০০৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত প্রচারিত সিরিজ গসিপ গার্ল ব্লেইকের পরিচিতি আরও বাড়িয়ে দেয়। ২০১৫ ও ২০১৬—এ দুই বছরে তিন ভিন্নধর্মী সিনেমা ‘দ্য এজ অব অ্যাডালিন’, ‘ইন শ্যালোজ’ ও ‘ক্যাফে সোসাইটি’ দিয়ে সমালোচকদের কাছেও প্রিয় হয়ে ওঠেন অভিনেত্রী। ২০১৮ সালে ব্লেইক অভিনীত ব্ল্যাক কমেডি মিস্ট্রি সিনেমা `আ সিম্পল ফেভার' ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়; ১ মে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে অ্যামাজন প্রাইমে।
প্রথম কিস্তির মতো সিকুয়েল ততটা আলোচিত হয়নি। তবে মামলার কারণে সিনেমাটির প্রচার নিয়েও বিপাকে পড়েছেন অভিনেত্রী। চলতি বছর সাউথ বাই সাউথওয়েস্ট উৎসবে সিনেমাটির প্রিমিয়ারে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী। তখন তাঁর ও বালডোনির সমর্থকেরা উৎসবে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ করেন। এর পর থেকেই প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক তিনি, দেখা যায়নি এবারের মেট গালাতেও।
ব্লেইকের জন্য একমাত্র স্বস্তির খবর টাইম সাময়িকীর ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকায় জায়গা পাওয়া। কিছুদিন আগেই টাইম ১০০ গালায় দেওয়া বক্তব্যে ব্লেইক লাইভলি এক আবেগঘন ভাষণে তাঁর মা উইলি এলেইন ম্যাকঅ্যালপিনকে শ্রদ্ধা জানান। পাঁচ মিনিটের সেই বক্তব্যে অভিনেত্রী জানান, তাঁর জন্মের আগেই একবার প্রাণনাশের চেষ্টা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন তাঁর মা।
‘আমার জীবনে সবচেয়ে বড় প্রভাব রেখেছেন আমার মা, উইলি এলেইন ম্যাকঅ্যালপিন, যিনি আজ রাতে আমার সঙ্গে এখানে আছেন। তিনি চিরকাল আশাবাদী, সব সময় আমাকে বার্তা পাঠান, হাসিমুখে বলেন, “জীবন তো একটা চেরির বাটি” তিন সন্তান থাকার সময়, আমার জন্মের অনেক আগে, মায়ের এক সহকর্মী তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কখনো ন্যায়বিচার পাননি। আজও তাঁর বেঁচে থাকার কৃতিত্ব তিনি দেন সেই নারীকে, যিনি একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন রেডিওতে, মা গাড়িতে বাড়ি ফিরতে ফিরতে তাঁর কথা শুনেছিলেন।’ বলেন লাইভলি।
লাইভি-বালডোনির মামলার শুনানির প্রায় এক বছর দেরি আছে। এর মধ্যে অভিনয় নিয়ে কথা হবে, মুক্তি পাবে নতুন সিনেমা; কিন্তু ব্লেইক যে সুময়ের অপেক্ষায়, সেটা আসতে হয়তো আরও সময় লাগবে।