২০২৫ সালে বিনোদন দুনিয়ায় হইচই ফেলে দেওয়া ২০ ঘটনা

২০২৫ সাল বিশ্ব বিনোদনজগতের জন্য ছিল এক রূপান্তরের সাক্ষী। পর্দার সুপারহিরোদের বক্স অফিস দাপট থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অভাবনীয় উত্থান—সবই যেন এ বছর এক নতুন সংজ্ঞায় ধরা দিয়েছে। একদিকে যখন ডিজনির মতো ঐতিহ্যবাহী স্টুডিওগুলো এআই প্রযুক্তির সঙ্গে লড়তে লড়তে শেষে সখ্য গড়ল, অন্যদিকে টম ক্রুজ বা ডোয়াইন জনসনের মতো মহাতারকাদের পেছনে ফেলে বক্স অফিসের দখল নিল ভিডিও গেম নয়তো গেমের চরিত্র। রাজনীতির মারপ্যাঁচে জনপ্রিয় শো বন্ধ হওয়া থেকে শুরু করে পর্দার পেছনের তারকাদের ব্যক্তিগত জীবনের ভাঙা–গড়ার গল্পে বছরজুড়ে সরগরম ছিল ইন্টারনেটের দুনিয়া। জেনে নেওয়া যাক বিনোদনজগতের মোড়–ঘোরানো ২০টি আলোচিত ঘটনা।

২০২৫ সালের আলোচিত ২০ ঘটনা। কোলাজ

ওয়ার্নার ব্রাদার্স কিনে নিল নেটফ্লিক্স
ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি ‘দখল’ করা নিয়ে নেটফ্লিক্স ও প্যারামাউন্টের মধ্যকার লড়াই করপোরেট–জগতের সাধারণ কোনো ঘটনা ছিল না। ডিসেম্বরের শুরুতে যখন তা তুঙ্গে ওঠে, তখন হলিউডসহ সারা বিশ্ব বুঝতে পেরেছিল যে বড় কোনো পরিবর্তনের সময় ঘনিয়ে এসেছে।

লড়াইটা কেবল এইচবিও, ওয়ার্নার ব্রাদার্স বা সুপারহিরোদের বিশাল ভান্ডার কার দখলে থাকবে—তা নিয়ে ছিল না; এটি ছিল বিনোদনজগতের ভবিষ্যৎ রূপরেখারও প্রশ্ন। নেটফ্লিক্সের টেড সারানডোস চেয়েছিলেন এমন এক জগৎ, যেখানে হাতে গোনা কয়েকটি বৈশ্বিক টেক-প্ল্যাটফর্মের আধিপত্য থাকবে এবং স্টুডিওগুলো কাজ করবে কেবল সেই স্ট্রিমিং জায়ান্টদের জন্য। অন্যদিকে প্যারামাউন্টের লক্ষ্য ছিল পুরোনো ঘরানার স্টুডিও, ঐতিহ্যবাহী টিভি চ্যানেল এবং স্ট্রিমিং সার্ভিসকে একীভূত করে চিরাচরিত হলিউডকে টিকিয়ে রাখা।

ওয়ার্নার ব্রাদার্স কিনে নিল নেটফ্লিক্স
প্রথম আলো গ্রাফিকস

এই দুটি ভিন্ন মতাদর্শের লড়াই স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোকে ভাবিয়ে তুলেছে। সৃজনশীল জগতের কর্মী থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারীরা এক রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন। কারণ, মাঝামাঝি আর কোনো পথ আর খোলা নেই, হয় আপনাকে বিশাল বড় কোম্পানি হতে হবে, না হলে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তবে এই পুরো বিতর্কের একমাত্র সুবিধাভোগী সম্ভবত ওয়ার্নার ব্রাদার্সের প্রধান ডেভিড জাসলাভ।

খরচ কমানো আর মানসম্মত কনটেন্ট কমিয়ে দেওয়ার জন্য যিনি হলিউডে সমালোচিত ছিলেন, তবে হঠাৎ করেই দেখা গেল তাঁর কোম্পানিটিই হয়ে উঠেছে সবার আকর্ষণের কেন্দ্রে। শেষ পর্যন্ত অবশ্যই সবাইকে পেছনে ফেলে ৭২ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের ডিসকভারির চলচ্চিত্র ও স্ট্রিমিং ব্যবসা কিনে নিচ্ছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়ায় ৮ লাখ ৪২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। দীর্ঘ প্রতিযোগিতার পর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কমকাস্ট ও প্যারামাউন্ট-স্কাইড্যান্সকে পেছনে ফেলে চূড়ান্ত বিডার হিসেবে এগিয়ে গেছে নেটফ্লিক্স।

মার্ভেলকে টেক্কা দিল ডিসি
বহু বছর ধরে সুপারহিরো সিনেমার জগতে এক অলিখিত নিয়ম ছিল, মার্ভেল মানেই বক্স অফিসের রেকর্ড ভাঙা সাফল্য। ডিসি সে তুলনায় আড়ালেই থাকত। কিন্তু ২০২৫ সালে যেন পাশার দান উল্টে গেল। মার্ভেলের ঝুলিতে ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা’ আর ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর’-এর মতো বড় প্রজেক্ট থাকলেও ডিসি সব ছাপিয়ে গেছে তাদের নতুন ‘সুপারম্যান’ দিয়ে। জেমস গানের পরিচালনায় নতুনরূপে ‘ম্যান অব স্টিল’ মুক্তির প্রথম সপ্তাহান্তেই ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার আয় করে।

বিশ্বজুড়ে এর আয় দাঁড়ায় প্রায় ৬১ কোটি ৬০ লাখ ডলারে; যা মার্ভেলের ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর’ (৫২ কোটি ২০ লাখ), ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ (৪১ কোটি ৫০ লাখ) এবং ‘থান্ডারবোল্টস*’ (৩৮ কোটি ২০ লাখ)—সব কটিকেই পেছনে ফেলে দিয়েছে। মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্স শুরু হওয়ার পর এই প্রথম বক্স অফিসে মার্ভেলের আধিপত্য ম্লান হলো।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা অভিনেত্রী টিলি নরউড। ইনস্টাগ্রাম থেকে

টিলি নরউড যখন আতঙ্কের নাম
হলিউড এবার এমন এক নতুন আতঙ্কের দেখা পেল, যার কাজের সময় ক্ষুধা পায় না, ঘুমানোর দরকার পড়ে না। এমনকি পারিশ্রমিক নিয়েও দরদাম করে না। কারণ, তার কোনো বাস্তব অস্তিত্বই নেই। লন্ডনভিত্তিক কোম্পানি ‘পার্টিকেল-সিক্স’-এর তৈরি এআই-অভিনেত্রী তিলি নরউড। তিলি যখন পরীক্ষাগার থেকে বের হয়ে নামী ট্যালেন্ট এজেন্সিদের নজর কাড়তে শুরু করল, তখনই বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে।

প্রতিবাদে ফেটে পড়েন তারকারা। অভিনয়শিল্পীদের ইউনিয়ন স্যাগ-আফট্রা সাফ জানিয়ে দেয়, ‘এটি কোনো অভিনয়শিল্পী নয়।’ যদিও নির্মাতারা দাবি করেছেন যে টিলি কাউকে প্রতিস্থাপন করতে আসেনি, বরং এটি গল্প বলার একটি নতুন মাধ্যম মাত্র। তবু টিলির এজেন্সি পাওয়ার এই চেষ্টা হলিউডের সৃজনশীল কর্মীদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইকে নতুন করে উসকে দিয়েছে।

আরও পড়ুন

হলিউড পাড়ি জমাল লন্ডনে!
২০২৫ সালের মধ্যে লন্ডন হয়ে উঠেছে সেই শহর, যা একসময় ছিল লস অ্যাঞ্জেলেস। লস অ্যাঞ্জেলেসের স্টুডিওগুলো যখন খাঁ খাঁ করছে, লন্ডনের স্টুডিওগুলোতে তখন বুকিং এর শিডিউল খালি নেই। এর পেছনে রয়েছে ব্রিটিশ সরকারের আকর্ষণীয় কর ছাড়, দক্ষ কর্মী ও অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশ। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের চেয়ে হলিউড কর্মীরা লন্ডনের পরিবেশকেই বেশি পছন্দ করছেন।

‘ফিল্ম লন্ডন’-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে লন্ডনে ৯৫০ কোটি পাউন্ড সমপরিমাণ নির্মাণ বিনিয়োগ আসবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মঘট-পরবর্তী মন্দা, অভিবাসন জটিলতা আর লাগামছাড়া শুল্ক বৃদ্ধির কারণে হলিউড যেন তার মুকুটটি লন্ডনের জন্য ছেড়ে দিয়েছে।

জিমি কিমেল। এএফপি ফাইল ছবি

জিমি কিমেল ভার্সেস ডোনাল্ড ট্রাম্প
লেট নাইট টক শো বরাবরই আমেরিকার রাজনীতির যুদ্ধক্ষেত্র। তবে ২০২৫ সালে এর প্রভাব ছিল আরও প্রকট। সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি আসে জুলাই মাসে, যখন স্টিফেন কোলবার্ট ঘোষণা করেন যে সিবিএস তাঁর জনপ্রিয় শো ‘দ্য লেট শো’ বন্ধ করে দিচ্ছে। কোলবার্ট একে ‘আর্থিক সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করলেও ট্রাম্পের প্রতি তাঁর কড়া সমালোচনাই যে এর পেছনের মূল কারণ—তা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না।
কোলবার্টের বিদায়ের পর আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন জিমি কিমেল।

সেপ্টেম্বরে একটি বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে এবিসি চ্যানেল তাঁর শো সাময়িকভাবে স্থগিত করেছিল। তবে দর্শকদের প্রবল প্রতিবাদ আর ডিজনি প্লাসের সাবস্ক্রিপশন বাতিলের হিড়িকে মাত্র তিন দিন পরেই তাঁকে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। ডিসেম্বর নাগাদ তাঁর চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এটি প্রমাণ করে, দর্শকদের সমর্থন থাকলে রাজনীতিবিদেরা চাইলেও সব শো বন্ধ করে দিতে পারেন না।

সিডনি সুইনির জিনস বিতর্ক
শুরুটা হয়েছিল আমেরিকান ইগলের একটি সাধারণ জিনসের বিজ্ঞাপন দিয়ে। সিডনি সুইনিকে নিয়ে সেই বিজ্ঞাপনের একটি পাঞ্চলাইন ছিল, ‘সিডনি সুইনি হ্যাজ গ্রেট জিনস’। ‘গ্রেট জিনস’ এই শব্দবন্ধ নিয়েই শুরু হয় আপত্তি। এটা আসলে মজা করে ‘জিনস’ হিসেবে বলা হয়েছিল কিন্তু এ নিয়েই শুরু হয় প্রবল বিতর্ক। আপাতদৃষ্টে এই নির্দোষ বিজ্ঞাপনটি মুক্তির পরেই এক বিচিত্র সাংস্কৃতিক যুদ্ধে রূপ নেয়।

নেটিজেনদের একাংশ এর শব্দের মারপ্যাঁচে বর্ণবাদ খুঁজে পান। কারণ, এই বিজ্ঞাপনের এক জায়গায় সিডনি সুইনি বলছিলেন, ‘জিনস মা-বাবার কাছ থেকে সন্তানের মধ্যে আসে, যা চুলের রং, ব্যক্তিত্ব এমনকি চোখের রংও নির্ধারণ করে। আমার জিনসের রং নীল।’ শব্দের এই দ্বৈত অর্থ ব্যবহারের (genes/jeans) কারণে এই নীল চোখের অভিনেত্রীকে নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক—বিশেষ করে বর্ণ, সৌন্দর্যের মানদণ্ড টেনে সমালোচনা হয়।

এই বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে মেগান কেলির মতো ব্যক্তিত্বরাও জড়িয়ে পড়েন। দীর্ঘ সময় চুপ থাকার পর ডিসেম্বরে সিডনি মুখ খোলেন। তিনি জানান, ঘৃণা বা বিভাজনের কোনো ইচ্ছা তাঁর ছিল না; এমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখে তিনি নিজেও বিস্মিত। এ ঘটনা প্রমাণ করেছে যে বর্তমান সময়ে একজন তারকার নিজের ইমেজের ওপর নিয়ন্ত্রণ কতটা কমে গেছে। ইন্টারনেটের দুনিয়া এখন যেকোনো সাধারণ বিষয়কেও আদর্শিক রূপ দিয়ে দিতে পারে।

সিডনি সুইনি। এএফপি

কোল্ডপ্লে কনসার্টে ধরা পড়া সেই ‘নিষিদ্ধ’ চুম্বন
প্রেমিকাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়া ততক্ষণ পর্যন্তই ঠিক, যখন আপনি অন্য কারো সঙ্গে কোনো সম্পর্কে নেই। কোল্ডপ্লে কনসার্টের বিশাল স্ক্রিনে ধরা পড়া চুম্বন বিশ্ববাসীর সঙ্গে  যখন জীবনসঙ্গীও দেখে ফেলেন; তা আর কোনো স্বাভাবিক ঘটনা থাকে না। ম্যাসাচুসেটসের জিলেট স্টেডিয়ামে কোল্ডপ্লের কনসার্ট চলাকালীন সময় ক্যামেরার এক যুগল নিবিড়ভাবে আলিঙ্গন করে চুমু খাচ্ছেন—আপাতদৃষ্টে নির্দোষ ঘটনা। কিন্তু তারপরই শুরু হয় আসল নাটক।

যুক্তরাষ্ট্র কোল্ডপ্লে ব্যান্ডের কনসার্ট চলাকালে ক্যামেরায় ধরা পড়া এ যুগল আলোচনায় আসেন
ছবি: এক্স থেকে নেওয়া

ধরা পড়ার পর তাদের চোখেমুখে যে আতঙ্ক আর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা দেখা গেছে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছিল এই দৃশ্য জনসমক্ষে আসা তাদের কাম্যছিল না। ‘ইন্টারনেট গোয়েন্দা’রা দ্রুতই খুঁজে বের করেন যে তারা দুজনেই একই কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। আরও চমকপ্রদ তথ্য হলো, নারীটি ছিলেন সেই প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ কর্মকর্তা, আর কোম্পানির প্রধান ছিলেন ওই ব্যক্তি। এই একটি ঘটনাই বছরজুড়ে ভাইরাল ভিডিওর তালিকায় শীর্ষে ছিল।

হলিউডে প্রেসিডেন্টের ফোনকল!
২০২৫ সালে হলিউড এক নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলো—সরাসরি প্রেসিডেন্টের ফোনকল। নভেম্বরের শেষে প্যারামাউন্ট দীর্ঘদিনের পড়ে থাকা ‘রাশ আওয়ার ৪’ সিনেমাটি পরিবেশনার দায়িত্ব নিতে রাজি হয়, কারণ খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে এর জন্য তদবির করেছিলেন! ব্রেট র‍্যাটনার অ্যামাজন প্রাইম মেলানিয়া ট্রাম্পকে নিয়ে ৪ কোটি ডলার খরচ করে তথ্যচিত্র বানিয়েছেন। আর এটিই শিল্পজগতে তার 'বিরল এক্সেস' নিশ্চিত করেছে। কারণ এর মাধ্যমে যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত ব্রেট র‍্যাটনারের জন্য ফেরার পথ প্রশস্ত হয়, যাকে কিনা শিল্পসমাজ রীতিমতো বর্জন করেছিল।

একই সঙ্গে ট্রাম্প সারা বছর ধরে লেট নাইট শোগুলোর ওপর চড়াও হয়েছেন। কেবল এখানেই থেমে থাকেননি ‘আমেরিকানবিরোধী’ বিনোদনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। তাই বছরের শেষে হলিউডের কাছে বার্তাটি পরিষ্কার—প্রশাসন কেবল তাদের সংস্কৃতিই দেখছে না, বরং তারা এটি নিয়ন্ত্রণও করতে চায়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ফাইল ছবি: এএফপি

মামলার পরে বিনিয়োগ: ডিজনির ভোলবদল
জুন মাসে ডিজনি এআই কোম্পানি মিডজার্নির বিরুদ্ধে মামলা করে। ডিজনির অভিযোগ ছিল, মিডজার্নি তাদের অনুমতি ছাড়াই ডিজনির চরিত্র, সিনেমার দৃশ্য ও আর্টওয়ার্ক দিয়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং সেগুলোর মতো ছবি তৈরি করছে। অনেকের কাছেই সেটাকে বেশ দেরিতে নেওয়া পদক্ষেপ বলে মনে হয়েছিল। কারণ, এআই বহু বছর ধরেই সৃজনশীল মানুষের কাজ অনায়াসে কপি করে আসছিল। মামলার সঙ্গে দেওয়া এক বিবৃতিতে ডিজনির শীর্ষ আইন কর্মকর্তা সোজাসাপ্টা বলেন, ‘পাইরেসি তো পাইরেসিই।’ এই মামলায় ইউনিভার্সালও ডিজনির পাশে দাঁড়ায়, যাতে হলিউডে এআই ব্যবহারের সীমা নিয়ে একটা স্পষ্ট নিয়ম তৈরি হয়।

কয়েক মাস যেতে না যেতেই পরিস্থিতি পুরো উল্টে যায়। ডিজনি ওপেনএআই-এ ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে এবং জানায়, তারা গ্রাহকদের এআই টুল ব্যবহার করে নিজেদের চরিত্রের নানা সংস্করণ তৈরি করার সুযোগ দেবে। নভেম্বরে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এক কলে ডিজনির সিইও বব আইগার বলেন, এআইয়ের মাধ্যমে ডিজনি প্লাস ব্যবহারকারীদের আরও গভীরভাবে যুক্ত করা যাবে, এমনকি দর্শকেরাই এআই দিয়ে নিজেদের তৈরি কনটেন্ট বানাতে পারবেন। বার্তাটা স্পষ্ট ছিল—এআই যখন ডিজনির কনটেন্ট ব্যবহার করে তখন তা পাইরেসি, কিন্তু নিজেরা যখন তা নিয়ন্ত্রণ করে মুনাফা করার সুযোগ পায়, তখন তা হয়ে যায় ‘প্রযুক্তিগত উন্নয়ন’!

আরও পড়ুন

ছাঁটাইয়ের বছর!
২০২৫ সালে হলিউডে যাঁরা কর্মী ছাঁটাই করেনি, এমন কোম্পানির নামের তালিকা করাই বরং সহজ। জুন মাসে ডিজনি শত শত কর্মীকে চাকরি থেকে বাদ দেয়। জুলাইয়ে ওয়ার্নার ব্রাদার্স মোশন পিকচার গ্রুপ ঘোষণা দেয়, তারা তাদের মোট কর্মীর প্রায় ১০ শতাংশ ছাঁটাই করবে। সেপ্টেম্বর মাসে লায়ন্সগেট আরও ৫ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করে। তারা এর আগের বছরেও ৮ শতাংশ কর্মী কমিয়েছিল। অক্টোবর মাসে বড় ধাক্কা নিয়ে হাজির হয় প্যারামাউন্ট। স্কাইড্যান্সের সঙ্গে একীভূত হবার আগে তারা প্রায় দুই হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করে। তবে শুধু বড় বড় প্রতিষ্ঠানেই কর্মী ছাঁটাই হয়নি। অ্যানোনিমাস কনটেন্ট, ফিফথ সিজন এবং ব্লুমহাউসের মতো ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোও টিকে থাকার জন্য তাঁদের কর্মী কমাতে বাধ্য হয়ে। বছরের শেষে তাই কৌতুক করে বলা হচ্ছে, সবাই কাজ হারালেও অন্তত হলিউডের থেরাপিস্টদের কাজের অভাব ছিল না!

জিটিএ ৬ বিনোদনজগতের নতুন সম্রাট
২০২৫ সালে বিনোদনজগৎ কেবল সিনেমা বা সংগীতনির্ভর করেই ছিল না। গেমিং দুনিয়ার ‘গ্র্যান্ড থেফট অটো ৬’-এর উন্মাদনায় মাত হয়েছে পুরো বিশ্ব। দীর্ঘ এক দশকের অপেক্ষার পর এই গেমের মুক্তি কেবল গেমারদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, এটি ছিল একটি বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক মহা–উৎসব। মুক্তির প্রথম ২৪ ঘণ্টায় সব রেকর্ড ভেঙে এটি কয়েক শ কোটি ডলার আয় করে, যা হলিউডের বড় বড় ব্লকবাস্টারকেও ম্লান করে দিয়েছে। আধুনিক পপ-কালচারের মধ্যেও গেমও যে এক শক্তিশালী অংশ, জিটিএ ৬-এর উন্মাদনা সেটিই প্রমাণ করল।

‘মিশন: ইম্পসিবল-দ্য ফাইনাল রেকনিং’ সিনেমার পোস্টার। আইএমডিবি

ব্যর্থ বড় তারকারা
বছরের পর বছর ধরে বলা হচ্ছিল, সিনেমাজগতের তারকাদের খ্যাতি ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে মনে হলো, আলোটা বুঝি এবার নিভেই গেল! ডোয়াইন জনসনও দর্শকদের টেনে আনতে পারেননি। তার সিনেমা ‘দ্য স্ম্যাশিং মেশিন’ যুক্তরাষ্ট্রে আয় করেছে মাত্র ১ কোটি ১০ লাখ ডলার। জেনিফার লরেন্সের ‘ডাই মাই লাভ’ থেমে গেছে ৫৫ লাখ ডলারেই।

জুলিয়া রবার্টসের ‘আফটার দ্য হান্ট’ মাত্র ৩২ লাখ ডলার আয় করে মুখ থুবড়ে পড়ে। এমনকি গ্লেন পাওয়েল—যাকে মিলেনিয়াল প্রজন্মের টম ক্রুজ বলা হয়, তিনিও ব্যর্থ হন। তাঁর সিনেমা ‘দ্য রানিং ম্যান’ উত্তর আমেরিকায় ৪ কোটি ডলারও আয় করতে পারেনি। অথচ সিনেমাটির বাজেট ছিল ১০ কোটি ডলারের বেশি।

আরও পড়ুন

টম ক্রুজের এ বছরের ‘মিশন: ইম্পসিবল’-এর নতুন কিস্তি যুক্তরাষ্ট্রে ২০ কোটি ডলারের ঘরই ছুঁতে পারেনি, যা  ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য খুবই হতাশাজনক। কারণ, সাধারণত এসব সিনেমা অনেক বেশি আয় করে। ব্র্যাড পিটের ‘এফ-ওয়ান’ (১৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার) কিছুটা আশা দেখালেও এ বছরের সবচেয়ে বড় হিট কোনো রক্তমাংসের মানুষকে বলা হচ্ছে না।

জেসন মোমোয়া আর জ্যাক ব্ল্যাক নেপথ্যে থাকলেও দর্শক টেনেছে ব্লক দিয়ে বানানও সেই চৌকো আকৃতির অ্যানিমেটেড মুরগি, যার জোরে ‘আ মাইনক্রাফট মুভি’ সিনেমাটি যুক্তরাষ্ট্রে আয় করেছে ৪২ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

‘ওয়েপনস’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

হরর সিনেমার জয়জয়কার
চলতি বছর বক্স অফিসে হলিউডের একমাত্র স্বস্তির জায়গা ছিল ‘ভয় আর আতঙ্ক’। অর্থাৎ কেবল এ ঘরানাই হলিউডের বক্স অফিসকে একটু স্বস্তি দিয়েছে। যখন বড় বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি আর পরিচিত সিনেমার রিবুটগুলো দর্শক টানতে হিমশিম খাচ্ছিল, তখন দুটি মৌলিক হরর সিনেমা কোটি কোটি ডলারের টিকিট বিক্রি করে তাক লাগিয়ে দেয়।
রায়ান কুগলারের ভ্যাম্পায়ার ছবি ‘সিনার্স’ মাত্র ৯ কোটি ডলার বাজেটে তৈরি হয়ে বিশ্বজুড়ে ৩৬ কোটি ৭৮ লাখ ডলার আয় করেছে। শুধু তা-ই নয়, সিনেমাটি অস্কারের দৌড়েও শামিল হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে ওয়ার্নার বাদ্রার্স তাদের নিউ লাইন ডিভিশনের মাধ্যমে আরও জোরালোভাবে বিনিয়োগ করে। ‘ওয়েপনস’ সিনেমার জন্য ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার খরচ করে, যার মধ্যে ১ কোটি ডলারই ছিল নির্মাতা জ্যাক ক্রেগারের পারিশ্রমিক। আশার কথা, ঝুঁকিটি কাজে লেগেছে। ১৭ স্কুলছাত্রের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে তৈরি এই রোমাঞ্চকর সিনেমাটি বিশ্বজুড়ে ২৬ কোটি ৮২ লাখ ডলার আয় করেছে। এই সাফল্যের রেশ ধরে এখন সিনেমাটির প্রিকুয়েল নির্মাণের পরিকল্পনাও চলছে।

বিশ্ব মাতাচ্ছে অ্যানিমেটেড ব্যান্ড ‘হান্ট্রিক্স’
২০২৫ সালের সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত হিটের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে নেটফ্লিক্স ও সনি পিকচার্সের ‘কে-পপ ডেমন হান্টার্স’। এটি মূলত ‘হান্ট্রিক্স’ নামে এক কাল্পনিক গার্ল গ্রুপের গল্প, যারা সবার সামনে শীর্ষ সংগীত ব্যান্ডের তারকা আর রাতে তারা যুদ্ধ করে অশুভ শক্তির শয়তানের সঙ্গে। কাগজে-কলমে এটি একটি কে-পপ ভক্তদের উন্মাদনার ট্রিবিউট সিনেমা মনে হলেও বাস্তবে এটি বিশ্বের সংগীতপ্রেমীদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।

সিনেমার গান ‘গোল্ডেন’ বিলবোর্ড হট হান্ড্রেড তালিকার শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে। ইংরেজি ও কোরিয়ান ভাষায় এই গান গাওয়ার ভিডিওতে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এমনকি এ বছর মেসির থ্যাঙ্কসগিভিং ডে প্যারেডেও জায়গা করে নিয়েছে এই অ্যানিমেটেড ব্যান্ডটি।

‘নে ঝা-২’ সিনেমার দৃশ্য
ছবি: আইএমডিবি

‘নে ঝা ২’: হলিউডকে হটিয়ে চীনা ছবির বিশ্বজয়
২০২৫ সালে বক্স অফিসের সব হিসাবনিকাশ উল্টে দিয়েছে চীনের ফ্যান্টাসি অ্যানিমেশন ‘নে ঝা ২’ । হলিউডের দাপটকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এই সিনেমাটি বিশ্বজুড়ে ২২০ কোটি ডলারের (২.২ বিলিয়ন) বেশি আয় করেছে, যা একে ইতিহাসের সর্বোচ্চ আয়কারী অ্যানিমেটেড সিনেমায় পরিণত করেছে। ডিজনির ‘ফ্রোজেন’ বা ‘ইনসাইড আউট ২’-এর রেকর্ড ভেঙে দিয়ে নে ঝা এখন ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম’ বা ‘টাইটানিক’-এর মতো সর্বকালের সেরা পাঁচটি সিনেমার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। চীনের লোকগাথা বা মাইথোলজিকে আধুনিক প্রযুক্তিতে পর্দায় তুলে ধরে এই সিনেমাটি প্রমাণ করেছে, বিশ্ব বিনোদনের নিয়ন্ত্রণ এখন আর কেবল পশ্চিমের হাতে নেই।

২০২৫ সালের সবচেয়ে বড় ‘ফ্লপ’
ব্যর্থ সিনেমার ভিড়ে এ বছর সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের নাম ‘দ্য আল্টো নাইটস’। ৪৫ মিলিয়ন ডলার বাজেটের এই সিনেমাটি বিশ্বজুড়ে আয় করেছে মাত্র ৯ মিলিয়ন ডলার। ডিজনির ‘স্নো হোয়াইট’ নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও তা আলোচনায় ছিল, কিন্তু রবার্ট ডি নিরো অভিনীত এই সিনেমাটি যেন মুক্তি পাওয়ার পরপরই হারিয়ে গেছে।
সিনেমাটি ১৯৫০-এর দশকের নিউইয়র্কের কুখ্যাত দুই মাফিয়া ডন—ভিটো জেনোভেস এবং ফ্রাঙ্ক কস্টেলোর সত্য লড়াইয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। মজার ব্যাপার হলো রবার্ট ডি নিরো এখানে এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ডনের দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

গল্পে দেখা যায়, ভিটো জেনোভেস যখন ফ্রাঙ্ক কস্টেলোকে সরিয়ে দিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের একচ্ছত্র অধিপতি হতে চান, তখন শুরু হয় এক রক্তক্ষয়ী সংঘাত। নামী পরিচালক ব্যারি লেভিনসন এবং দক্ষ চিত্রনাট্যকার থাকা সত্ত্বেও ধীরগতির গল্প আর দুর্বল নির্মাণের কারণে দর্শকেরা এটি গ্রহণ করেনি। ফলে বড় বাজেটের এই গ্যাংস্টার ড্রামাটি এ বছরের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য হচ্ছে।

‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’–এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

ওটিটি ও স্ট্রিমিং বিপ্লব
২০২৫ সালে বিনোদনজগতের বড় একটি অংশ দখল করে ছিল ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর অভাবনীয় সাফল্য ও নতুন সব রেকর্ড। এই বিপ্লবের কেন্দ্রে ছিল নেটফ্লিক্সের হিট সিরিজ ‘স্কুইড গেম’-এর প্রত্যাবর্তন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মুক্তি পাওয়া এই সিরিজের নতুন সিজন স্ট্রিমিং দুনিয়ায় ভিউয়ারশিপের আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। পাশাপাশি দর্শকদের তুমুল উত্তেজনার কেন্দ্রে ছিল জনপ্রিয় সিরিজ ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’। এই সিরিজের শেষ সিজনের নির্মাণ এবং এটি নিয়ে বছরজুড়ে চলা আলোচনা প্রমাণ করেছে যে ভালো ফ্র্যাঞ্চাইজি কনটেন্টের আবেদন আজও ফুরিয়ে যায়নি।

তবে এ বছরের স্ট্রিমিং বিপ্লবে সবচেয়ে বড় চমক ছিল হলিউড বা ইংরেজি কনটেন্টের বাইরে বিভিন্ন দেশের স্থানীয় কনটেন্ট এবং ভিডিও গেম থেকে অনুপ্রাণিত সিনেমার জয়জয়কার। বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় ও তুর্কি সিরিজগুলোর (যেমন ‘কুরুলুস ওসমান’) বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা ওটিটির চিরাচরিত চিত্র বদলে দিয়েছে।

একইসাথে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোতে এখন দাপট দেখাচ্ছে ভিডিও গেম থেকে অনুপ্রাণিত সিরিজ ও অ্যানিমেশন। ‘আর্কেন’ বা ‘দ্য লাস্ট অব আস’-এর মতো সিরিজের ব্যাপক সাফল্য স্ট্রিমিং জগৎকে এক নতুন দিশা দেখিয়েছে। দর্শকেরা এখন কেবল মৌলিক গল্পের ওপর নির্ভর না করে জনপ্রিয় ভিডিও গেমের জগৎকে পর্দার রুপালি জগতে দেখার প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

টেইলর সুইফট ও ট্রাভিস কেলসি
ছবি: টেইলর সুইফটের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে

রাজকীয় বিয়ে ও বাগ্‌দান
২০২৫ সালে বিনোদনজগতের সবচেয়ে আলোচিত ও ঝলমলে ইভেন্ট ছিল অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ও লরেন সানচেজের বিয়ে। জুন মাসে ইতালির ভেনিস শহরে প্রায় ৫ কোটি ডলার খরচ করে তিন দিনব্যাপী বিয়ের উৎসব চলে। আলোচিত এই বিয়েতে অপরাহ  উইনফ্রে থেকে শুরু করে বিল গেটস পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও তারকারা উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে পপ তারকা টেইলর সুইফট ও এনএফএল তারকা ট্রাভিস কেলসির বাগ্‌দানের খবরটি ছিল এ বছরের সবচেয়ে বড় ‘ইন্টারনেট ব্রেকিং’ মুহূর্ত। আগস্ট মাসে তাদের এই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পোস্টটি ইনস্টাগ্রামে ৩ কোটি ৮০ লাখের বেশি লাইক পেয়ে রেকর্ড গড়েছে। বিনোদন ও ক্রীড়া জগতের এই মহামিলন বছরজুড়েই ভক্তদের মধ্যে উন্মাদনা ধরে রেখেছে।

নাড়িয়ে দেওয়া বিচ্ছেদ
২০২৫ সালটি ছিল বড় সব তারকা জুটির বিচ্ছেদের বছর। সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি আসে যখন নিকোল কিডম্যান ও কিথ আরবান দীর্ঘ ১৯ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার ঘোষণা দেন। সেপ্টেম্বরে তাদের এই বিচ্ছেদের খবর ভক্তদের হতবাক করে দিয়েছিল। একইভাবে প্রায় এক দশকের সম্পর্ক এবং দীর্ঘ পাঁচ বছরের বাগ্‌দান শেষে কেটি পেরি ও অরল্যান্ডো ব্লুম চূড়ান্ত বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন।

নিকোল কিডম্যান ও কিথ আরবান। ছবি: রয়টার্স

বিচ্ছেদের এই মিছিলে আরও যুক্ত হয়েছেন হিউ জ্যাকম্যান ও ডেবোরা-লি ফার্নেস, যাঁরা ২৭ বছরের দীর্ঘ পথচলা শেষে এ বছর তাঁদের আইনি বিচ্ছেদ সম্পন্ন করেছেন। এ ছাড়া দুই দশক পর আবার এক হওয়া জনপ্রিয় জুটি বেন অ্যাফ্লেক ও জেনিফার লোপেজের (বেনিফার) আনুষ্ঠানিক ডিভোর্সও এ বছরই চূড়ান্ত হয়েছে। এই আলোচিত জুটিগুলোর বিচ্ছেদ আবার মনে করিয়ে দিয়েছে, রুপালি জগতের সব প্রেম রূপকথার মতো সুখের হয় না।

‘অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড ওম্যান’–এ ব্রিজিত বার্দো। আইএমডিবি

যাঁদের হারালাম
২০২৫ সালে বিনোদনজগৎ তার বেশ কয়েকজন কিংবদন্তি অভিভাবককে হারিয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে চলচ্চিত্র প্রেমীদের শোকাতুর করেছে। বছরের সবচেয়ে বড় শোকের সংবাদটি ছিল হলিউড তারকা রবার্ট রেডফোর্ডের প্রয়াণ। নব্বই বছর বয়সে তাঁর চলে যাওয়া কেবল একজন অভিনেতার বিদায় নয় বরং হলিউডের ‘সানড্যান্স’ যুগের এক বিশাল অধ্যায়ের সমাপ্তি। তাঁর পরপরই আমরা হারিয়েছি অস্কারজয়ী অভিনেত্রী ডায়ান কিটনকে, যাঁর স্টাইল এবং অভিনয় কয়েক দশক ধরে বিশ্ব সিনেমাকে সমৃদ্ধ করেছে।
বছরের শেষে বিদায় নিলেন, ফরাসি চলচ্চিত্রজগতের চিরসবুজ মহাতারকা ব্রিজিত বার্দো। তাঁর চলে যাওয়া কেবল একজন অভিনেত্রীর বিদায় নয়, বরং বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম আবেদনময়ী ও ‘ফরাসি নিউ ওয়েভ’ যুগের এক বিশাল অধ্যায়ের সমাপ্তি।

দ্য হলিউড রিপোর্টার অবলম্বনে