করোনায় মারা গেলেন কিম কি দুক

কিম কি দুকইনস্টাগ্রাম

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বিশ্বখ্যাত কোরিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা কিম কি দুক। আজ শুক্রবার লাটভিয়ার একটি হাসপাতলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। কান, ভেনিস ও বার্লিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার জিতেছিল তাঁর সিনেমা।

করোনায় মারা গেলেন কিম কি দুক
ইনস্টাগ্রাম

গত ২০ নভেম্বর লাটভিয়া গিয়েছিলেন কিম। বাড়ি কিনে সেখানেই স্থায়ী হতে চেয়েছিলেন। নিরিবিলি ওই জায়গায় লেখালেখি ও সিনেমার কাজ এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। ডেডলাইন, লা রিপাবলিকাসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছে।

শুটিং সেটে অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কিম
ইনস্টাগ্রাম

‘ক্রোকোডাইল’, ‘দ্য আইল’, ‘রিয়েল ফিকশন’, ‘অ্যাড্রেস আননোন’, ‘স্প্রিং, সামার, ফল, উইন্টার...অ্যান্ড স্প্রিং’, ‘সামারিতান গার্ল’, ‘টাইম’, ‘ব্রিদ’, ‘ড্রিম’, ‘রাফ কাট’, ‘পিয়েতা’, ‘আরিরাং’, ‘ওয়ান ওন ওয়ান’, ‘স্টপ’, ‘মেড ইন চায়না’, ‘হিউম্যান’, ‘স্পেস’, ‘টাইম অ্যান্ড হিউম্যান’ কিম কি দুকের উল্লেখযোগ্য সিনেমা। তাঁর সর্বশেষ ছবি ‘ডিজলভ’ মুক্তি পায় ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। সিনেমাটিকে তুলনা করা হয় তাঁর আগে বানানো ছবি ‘সামারিতান গার্ল’–এর সঙ্গে।

কিম পরিচালিত সিনেমার একটি দৃশ্য

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিমের অর্জনও অসামান্য। ৬৯তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা ছবি হয়েছিল তাঁর ‘পিয়েতা’ ছবিটি। এই ছবির জন্য বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো ও নামকরা এই চলচ্চিত্র উৎসবে কিম কি দুক পেয়েছিলেন গোল্ডেন লায়ন। এই উৎসবের ৬১তম আসরে ‘থ্রি আয়রন’ ছবির জন্য সিলভার লায়ন বা সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছিলেন কিম। ৪৫তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সামারিতান গার্ল’ সিনেমাটি কিমকে দেয় সেরা পরিচালকের পুরস্কার। এটি এই উৎসবের দ্বিতীয় সেরা পুরস্কার।

২০১১ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘আরিরাং’ ছবির জন্য ‘আঁ সার্তে রিগা’ পুরস্কার দেওয়া হয় কিমকে
ইনস্টাগ্রাম

২০১১ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবের আঁ সার্তে রিগা বিভাগে দেখানো হয় ‘আরিরাং’ ছবিটি এবং জিতে পুরস্কার। ‘স্প্রিং, সামার, ফল, উইন্টার...অ্যান্ড স্প্রিং’ কিমের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছবি। চলচ্চিত্র সমালোচক রজার ইবার্টও সর্বকালের সেরা ছবির তালিকায় রেখেছেন একে। কিম কি দুক পরিচালিত দুটো ছবি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে অস্কারে সেরা আন্তর্জাতিক সিনেমা বিভাগে পাঠানো হয়। সেই ছবি দুটির একটি ‘স্প্রিং, সামার, ফল, উইন্টার...অ্যান্ড স্প্রিং’ ও অন্যটি ‘পিয়েতা’।

কিম কি দুক
ইনস্টাগ্রাম

কিম কি দুক ১৯৬০ সালের ২০ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার বোংঘোয়ায় জন্ম নেন। ১৯৯০ সাল থেকে চার বছর তিনি প্যারিসে চারুকলা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৯৩ সালে দেশে ফিরে শুরু করেন চিত্রনাট্য লেখার কাজ। ১৯৯৫ সালে কোরিয়ান ফিল্ম কাউন্সিল কর্তৃক আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায় চিত্রনাট্যকার হিসেবে পুরস্কার পান। এটিই চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট কিমের প্রথম পুরস্কার। তাঁর প্রথম ছবি ‘ক্রোকোডাইল’ মুক্তি পায় ১৯৯৬ সালে। স্বল্প বাজেটের ছবিটি দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।

কিম কি দুকের সিনেমার একটা দৃশ্য
ইনস্টাগ্রাম

২০০০ সালে ‘দ্য আইল’ ছবিটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা কুড়ানো কিমের প্রথম ছবি। ভেনিস ও টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবেও এ ছবি দেখানো হয়। একই বছর মুক্তি পাওয়া কিমের ‘রিয়েল ফিকশন’ ছবিটি ২৩তম মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রণ পায়। কিম কি দুক এশিয়ার তাঁর প্রজন্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্মাতাদের একজন।