কান্ট্রি মিউজিকের কিংবদন্তি কেনি রজার্স মারা গেছেন

হাইস্কুলে পড়ার সময় ‘দ্য স্কলার্স’ গ্রুপে গাইতেন কেনি। পুরোনো অ্যালবাম থেকে ইনস্টাগ্রামে নিজেই শেয়ার করেছিলেন এই ছবি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
হাইস্কুলে পড়ার সময় ‘দ্য স্কলার্স’ গ্রুপে গাইতেন কেনি। পুরোনো অ্যালবাম থেকে ইনস্টাগ্রামে নিজেই শেয়ার করেছিলেন এই ছবি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

আজ শনিবার মারা গেলেন কান্ট্রি মিউজিকের কিংবদন্তি সংগীততারকা কেনি রজার্স। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বাড়িতে স্বাভাবিকভাবে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সময় পরিবারের নিকটাত্মীয় ও প্রিয়জনেরা তাঁকে ঘিরে ছিলেন।’ বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কেনি রজার্সের মৃত্যুর খবর।

৩টি গ্র্যামি বিজয়ী এই সংগীতশিল্পী ১৯৭০ ও ১৯৮০–এর দশকে বিশ্বসংগীতের সবচেয়ে জনপ্রিয় নামগুলোর একটি। তাঁর কিঞ্চিৎ কর্কশগলাই (হাস্কি) তুলকালাম ঘটিয়ে দিয়েছিল সংগীতাঙ্গনে। দ্য গ্যাম্বলার, কাওয়ারর্ড অব দ্য কান্ট্রি, লুসিলি (১৯৭৭) গানগুলোর আবেদন যেন চিরন্তন। দশকের পর দশক গানগুলো শুনেছে বিশ্বের মানুষ। আজও ইউটিউবে প্রতিটি গানের নিচে কোটি কোটি ‘ভিউ’ জানিয়ে দেয়, গানগুলো আছে, থাকবে। পরিবারের পক্ষ থেকে তাই কেনি রজার্সের মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, মার্কিন সংগীতে কেনির অবদান অবিশ্বাস্য।

কেনি রজার্স একাধারে সংগীতশিল্পী, গীতিকার, অভিনয়শিল্পী, রেকর্ডের প্রযোজক ও উদ্যোক্তা। জীবদ্দশায় তিনি পাঁচবার বিয়ে করেছেন। তিনি পাঁচ সন্তান রেখে গেছেন।

যমজ দুই ছেলের জন্মদিনে তোলা হয়েছিল এই ছবিটি। এখন জাস্টিন আর জর্ডানের বয়স ১৫। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
যমজ দুই ছেলের জন্মদিনে তোলা হয়েছিল এই ছবিটি। এখন জাস্টিন আর জর্ডানের বয়স ১৫। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

কেনি রজার্সের জন্ম ১৯৩৮ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে। ছোটবেলা থেকেই গানের সঙ্গে তাঁর সখ্য। শুরু করেছিলেন ব্যান্ড দলের সঙ্গে। তবে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেছেন নিজের একক গান দিয়ে। লিওনেল রিচির লেখা ‘লেডি’ গেয়ে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন কেনি। তরুণ বয়সে কেনি রজার্সের সেই অসাধারণ ভরাট গলার ‘লেডি’ গানটি শুনে মুগ্ধ হয়ে সে সুরে কণ্ঠ মেলাননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

কেনি রজার্সের বই, লাক অর সামথিং লাইক ইট। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
কেনি রজার্সের বই, লাক অর সামথিং লাইক ইট। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

যৌবনে গানের সুরের মোহন মায়ায় ঘর ছেড়েছিলেন বলেই হয়তো পরিণত বয়সে এসে পেছনে রেখে আসা সংসারের মায়া তাঁকে গভীরভাবে ডেকেছিল। ৭৭ বছর বয়সে গান নিয়ে শেষ সফরের পর তিনি ফিরেছিলেন পরিবারের কাছে পাকাপাকিভাবে। ২০১৫ সালে বলেছিলেন, ‘এবার সত্যিই আমি আমার স্ত্রী-সন্তানদের কাছে ফিরতে চাইছি। তাঁরা যে আমার কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ, সেটি জানতে অনেক দেরি হয়ে গেল আমার। অথচ কখনোই তাঁদের সেভাবে কাছে থেকে দেখা হয়নি। এবার অবসর নিয়ে সেই অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে চাই।’

স্ত্রী ওয়ান্ডা মিলারের সঙ্গে কেনি রজার্স। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
স্ত্রী ওয়ান্ডা মিলারের সঙ্গে কেনি রজার্স। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

‘ইউএসএ টুডে’ ও ‘পিপল’ ম্যাগাজিনের জরিপে সর্বকালের সেরা জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন কেনি রজার্স৷ তাঁর দুটো অ্যালবাম ‘দ্য গ্যাম্বলার’ আর ‘কেনি’ ঠাঁই করে নিয়েছে কান্ট্রি মিউজিকের সর্বকালের সেরা ২০০ অ্যালবামের তালিকায়। আর কেনির নিজের সবচেয়ে পছন্দের গান ছিল ‘দ্য গ্যাম্বলার’ অ্যালবামের ‘গ্যাম্বলার’ গানটি৷ গ্যাম্বলার এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে পরবর্তী সময়ে টেলিভিশনের জন্য নির্মিত একটি ছবিতে অভিনয়ও করেন এই সংগীততারকা, নাম, ‘কেনি রজার্স অ্যাজ দ্য গ্যাম্বলার’। এ ছাড়া অসংখ্যবার দেখা দিয়েছেন টেলিভিশনের ছোট পর্দায়।

অন্যান্য সংগীততারকার মতো কেনির বেশির ভাগ গানেও উঠে এসেছে ভালোবাসার কথা। যেমন ‘শি বিলিভস ইন মি’ গানটিতে তিনি এক পুরুষের আত্মতৃপ্তির কথা জানিয়েছেন। ভালোবাসার মানুষটি তাঁকে বিশ্বাস করে তাই সেই পুরুষটি ভীষণ খুশি। তবে প্রেমের মুদ্রার অপর পাশটিও আড়ালে যায়নি। ‘লুসিলি’ গানেই তিনি প্রেমে এক নারীর প্রতারণার গল্প শুনিয়েছেন৷

স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে কেনি রজার্স। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে কেনি রজার্স। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

নতুন যাঁরা প্রেমে পড়তে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য একটা উপদেশমূলক গানও গেয়েছেন কেনি। ১৯৮০ সালে রিলিজ পাওয়া তাঁর সেই গানের কথা ‘ডোন্ট ফল ইন লাভ উইথ এ ড্রিমার’।

কেনি রজার্স আজ থেকে বিশ্বসংগীতের ইতিহাসের একটা বড় অধ্যায়ের নাম, খসে পড়া জ্বলজ্বলে এক তারার নাম।