গ্রেগরি পেক: অসাধারণ এক অভিনেতা

গ্রেগরি পেক (৫ এপ্রিল ১৯১৬–১২ জুন ২০০৩)
গ্রেগরি পেক (৫ এপ্রিল ১৯১৬–১২ জুন ২০০৩)

২০০৩ সালের আজকের দিনে ৮৭ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন হলিউডের কিংবদন্তি শিল্পী গ্রেগরি পেক। হলিউড এ পর্যন্ত যত শিল্পী উপহার দিয়েছে, তার মধ্যে গ্রেগরি পেকের নাম থাকবে শীর্ষ তালিকায়।
৬ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার গ্রেগরি পেক তাঁর অসাধারণ কণ্ঠ ও বাকভঙ্গিমার কারণে জয় করে নিয়েছিলেন দর্শকমন। এই তো সেদিন লোকান্তরিত হওয়া মোহাম্মদ আলীও ছিলেন একই উচ্চতার এবং তাঁরা দুজনেই ভিয়েতনাম যুদ্ধের ব্যাপারে ছিলেন প্রতিবাদী। বাংলাদেশের দর্শক তাঁর গানস অব নাভারন, স্পেলবাউন্ড, মবিডিক ছবিগুলোর কথা মনে রাখবে। আর বিশেষভাবে মনে রাখবে রোমান হলিডে ছবির কথা। সেই ছবিতে অড্রে হেপবার্ন অভিনয় করেছিলেন রাজকুমারী চরিত্রে, সাংবাদিক ছিলেন গ্রেগরি পেক। এক রাতে ঘটে যাওয়া অসাধারণ সব ঘটনার সবকিছুই সাংবাদিক ধরে রাখলেন তাঁর বুকে, পত্রিকার জন্য দিলেন না কোনো খবর। এক অপূব৴ কাহিনি সেটা।

রোমান হলিডে ছবিতে অড্রে হেপবার্ন ও গ্রেগরি পেক
রোমান হলিডে ছবিতে অড্রে হেপবার্ন ও গ্রেগরি পেক


তবে টু কিল এ মকিংবার্ড ছবিটি পেক নিজের পছন্দতালিকার শীর্ষস্থানে রেখেছিলেন। অ্যাটিকাস ফিঞ্চ নামে এক আইনজীবীর চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছিলেন পেক। ১৯৬২ সালে এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য অস্কার জয় করেছিলেন তিনি। এর আগেও আরও চারবার—দ্য কিজ অব দ্য কিংডম (১৯৪৫), দ্য ইয়ারলিং (১৯৪৬), জেন্টলম্যানস অ্যাগ্রিমেন্ট (১৯৪৭) আর টুয়েল্ভ ও ক্লক (১৯৪৯) ছবিগুলোর জন্য পেয়েছিলেন মনোনয়ন। কিন্তু সেগুলোর জন্য হাতে আসেনি পুরস্কার।
১৯৬৩ সালে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে সেরা অভিনেতার নাম ঘোষণা করার জন্য উপস্থাপক ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা মঞ্চে ডেকে নেন টু উইমেন–খ্যাত সোফিয়া লরেনকে। সেবার মনোনয়ন পান হলিউডের পাঁচ সেরা অভিনেতা—বার্ট ল্যাংকাস্টার, জ্যাক লেমন, মার্চেলো মাস্ত্রেয়োনি, পিটার ওটুল ও গ্রেগরি পেক। গ্রেগরি পেক এ বছর পুরস্কারের আশা করেননি। কিন্তু সোফিয়া লরেন যখন গ্রেগরি পেকের নাম ঘোষণা করলেন, তখন উদ্ভাসিত হলো পেকের মুখ। হলভর্তি মানুষের করতালি যেন থামছিলই না।
আরেকটি কথা না বললেই নয়। অড্রে হেপবার্নকে খুব পছন্দ করতেন পেক। ১৯৯৩ সালের ২০ জানুয়ারি যখন অড্রে হেপবার্ন মারা যান, তখন তাঁর শেষকৃত্যানুষ্ঠানে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পেক আবৃত্তি করেন একটি কবিতা, ‘আই সিম টু হ্যাভ লাভড ইউ ইন নাম্বারলেস ফর্মস, নাম্বারলেস টাইমস.../ইন লাইফ আফটার লাইফ, ইন এজ আফটার এজ, ফরএভার।’
কবিতাটির রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ‘অনন্তপ্রেম’ নামের এই কবিতার প্রথম পঙ্ক্তি ‘তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শতরূপে শতবার, জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।’
চলচ্চিত্রপ্রেমীরা গ্রেগরি পেককেও সে রকম ভালোবাসেন।