পুরস্কারগুলো কবর দিয়েছেন রোজামুন্ড পাইক

রোজামুন্ড পাইক।
রয়টার্স

অভিনেত্রী রোজামুন্ড পাইকের বাড়ির তাকগুলো খালি। পুরস্কারের স্মারকগুলো বাগানে পুঁতে রেখেছেন তিনি। এলেন ডিজেনারেসের অনুষ্ঠানে গিয়ে এই অভিনেত্রী জানালেন, ঘরে এসব পুরস্কার নাকি উদ্ভট লাগে। বিরক্ত লাগে। মেহমান এসে এটা–ওটা জিজ্ঞেস করে! এসব ভেবে একেবারে নিজের বাগানে সেসব পুঁতে রেখে এসেছেন তিনি।
সবে গোল্ডেন গ্লোব জিতেছেন পাইক। সেটারও ঠাঁই হয়েছে বাগানে। এমনকি প্রাইম টাইম এমি ও ব্রিটিশ ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডের ঠিকানাও বাগান। এমন উদ্ভট কাণ্ডের মানে কী? রোজামুন্ড বলেছেন, এটা খুব গভীর মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। একে বলে ইমপোস্টার সিনড্রোম। নিজের অর্জন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগলে এমন হয়।

এলেনের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ঘরে এসব পুরস্কার সাজিয়ে রাখতে খুব অস্বস্তি লাগে। সবাই যখন বাড়িতে আসবে, তখন তারা কী বলবে এই পুরস্কার দেখে? তারা বলবে, “ওয়াও। এটা আপনার পুরস্কার!” এটা ভাবতেই আমার কেমন উদ্ভট লাগে। তাই আমি ওসব পুরস্কার কিছুদিন দেখিয়ে আমার বাগানে কবর দিয়ে দিই।’ পাইকের কাছে এটা একটা মজার ব্যাপারও বটে। কারণ, তাঁর এই বাড়ি কেউ যখন কিনবে, তখন দেখবে, এখানে অনেক অমূল্য রত্ন লুকানো আছে। তারা হয়তো ভাববে, এগুলো কোনো গুপ্তধন। কিন্তু পরে বুঝতে পারবে, এটা কতগুলো পুরস্কারের ট্রফি। তারা চিন্তা করবে। ভাববে, এমন হলো কেন?

রোজামুন্ড পাইক
সংগৃহীত

চলচ্চিত্রজগতে নারী অভিনয়শিল্পীদের পরীক্ষার জায়গাটা কঠিনই। আর তা যদি হয় হলিউডের মতো প্রতিযোগিতাপূর্ণ ইন্ডাস্ট্রি, তাহলে তো কথাই নেই। সে পরীক্ষায় উতরে যেতে সময় লাগেনি ৪২ বছর বয়সী ব্রিটিশ অভিনেত্রী রোজামুন্ড পাইকের। এক ছবি ‘গন গার্ল’ দিয়েই দর্শক-সমালোচক—সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বক্স অফিসও জমজমাট। রোজামুন্ডের অভিনয়ের প্রশংসার ঝাঁপি যে খুলেছে, আর বন্ধই হচ্ছে না। পুরস্কারের বন্যাও বইতে শুরু হয়েছে। বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনয়শিল্পী বিভাগে জিতে নিয়েছেন এক গাদা পুরস্কার। গোল্ডেন গ্লোব, প্রাইম টাইম এমিসহ সেসব এখন কবরে।


গন গার্ল দিয়ে অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিলেন রোজামুন্ড পাইক। ভাগ্যিস, অস্কার পাননি। তাহলে অস্কারের কপাল পুড়ত! পাইকের বাগানে এত দিনে কবর হয়ে যেত অস্কারের। দুবার মনোনয়ন পাওয়ার পর এই প্রথম গোল্ডেন গ্লোব পেয়েছেন এই ব্রিটিশ অভিনেত্রী। নেটফ্লিক্সের আই কেয়ার আ লট ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি পুরস্কারটি জেতেন। তাঁকে দেখা যাবে টিভি সিরিজ দ্য হুইল অব টাইম–এ।

বন্ড গার্ল থেকে গন গার্ল। ২০০২ সালে ‘ডাই অ্যানাদার ডে’ সিনেমা দিয়ে অভিনয়ে পা রাখেন ব্রিটিশ এই অভিনয়শিল্পী। সেই ছবিতে জেমস বন্ডরূপী পিয়ার্স ব্রসন্যানের সঙ্গে ধুন্দুমার তলোয়ার লড়াই করে তাক লাগিয়েছিলেন। ঠিক দুই বছর পরে জনি ডেপের সঙ্গে অভিনয় করেন ‘দ্য লিবারটাইন’ ছবিতে। ২০০৬–এ ‘প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস’ একে একে ‘জনি ইংলিশ’, ‘র‍্যাথ অব দ্য টাইটানস’, ‘জ্যাক রিচার’ ছবিগুলো দিয়ে পায়ের নিচে মাটি শক্ত করেন। তবে খুব জনপ্রিয়তা পাননি, আর তাতেই যেন ভাগ্য খুলে যায় তাঁর। ‘গন গার্ল’ ছবিটির জন্য এমি চরিত্রে এমন কাউকে চাওয়া হচ্ছিল, যিনি খুব একটা পরিচিত শিল্পী নন। রিজ উইদারস্পুন বাদ পড়ে গিয়েছিলেন সে কারণেই। ছবিটি প্রযোজনা করেছে রিজের নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক স্ট্যান্ডার্ড। তবে পরিচালক ডেভিড ফিনচারের মতই মেনে নেন তিনি।

রোজামুন্ড পাইক
সংগৃহীত

জ্যাক রিচার ছবিতে রোজামুন্ডকে দেখেই ফিনচার তাঁকে নির্বাচন করেন গন গার্ল-এর জন্য। পরে পাঁচ ঘণ্টার আড্ডায় ফিনচার জানতে পারেন, সিনেমার এমির মতোই রোজামুন্ডও মা-বাবার একমাত্র সন্তান। ‘ক্রেজি এমি আর অ্যামেজিং এমি—দুটো চরিত্রেই সে দারুণ মানিয়ে যাবে।’ ভেবেছিলেন ফিনচার। হয়েছেও তা–ই।
তবে পর্দার এমির সঙ্গে আর কোনো মিল নেই রোজামুন্ড পাইকের। ব্যক্তিগত জীবনটা পর্দার আড়ালেই রাখতে চান তিনি। স্বামী রবিন ইউনিয়াক এই জগতের কেউ নন, তিনি পেশায় একজন গণিতবিদ। দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁদের সংসার।

রোজামুন্ড পাইক