মঞ্চে দাঁড়িয়ে মেয়ের জন্য কাঁদলেন বাবা

অস্কারটি প্রয়াত মেয়েকে উৎসর্গ করেন পরিচালক থমাস ভিন্টারবার্গ
ছবি: সংগৃহীত

অস্কারে সেরা আন্তর্জাতিক ভাষার সিনেমা বিভাগে পুরস্কার জিতেছে ডেনমার্কের ছবি ‘অ্যানাদার রাউন্ড’। সিনেমাটির শুটিং শুরু করার চার দিনের মাথায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান পরিচালক থমাস ভিন্টারবার্গের মেয়ে আইডা। সে সময় শুটিং বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। তবে মেয়েকে স্মরণীয় করে রাখতে সিনেমাটির কাজ শেষ করেছিলেন থমাস। অস্কারে স্বীকৃতি পেয়ে ছবিটি সত্যিই স্মরণীয় হয়ে রইল।

অস্কারের মঞ্চে উঠে সেই গল্প বিশ্বকে জানানোর আগে থমাস ধন্যবাদ জানান একাডেমি কর্তৃপক্ষ ও সিনেমাটিকে যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদের। শৈশব থেকেই থমাসের ইচ্ছা ছিল একদিন তিনি অস্কারের এ মঞ্চে উঠবেন। তারপর কেটে গেছে ৪৭ বছর। থমাস বলেন, ‘এই পুরস্কার আমার কাছে স্বপ্নের চেয়েও বেশি। এই স্বপ্ন আমি দেখে আসছি পাঁচ বছর বয়স থেকে। তখন থেকেই আমি রেলস্টেশন, রাস্তা, স্কুল, টয়লেটে বসে অস্কার বক্তৃতায় কী বলব, সেই প্রস্তুতি নিতাম। আজ আমি সেই স্বপ্নের মুহূর্তে পৌঁছে গেছি।’

মেয়ের কথা বলতে গিয়ে আবেগী হয়ে পড়েন থমাস ভিন্টারবার্গের
ছবি: সংগৃহীত

অস্কারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্ত্রী হেলেনকে পরিচয় করিয়ে দেন থমাস, কৃতজ্ঞতা জানান নির্মাতা দলের সদস্যদের, যাঁরা তাঁর নিয়ন্ত্রণহীন জীবনের সেই দুঃসময়ে পাশে ছিলেন, সিনেমাটি শেষ করতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। ‘অ্যানাদার রাউন্ড’ ছবিতে দেখানো হয়েছে মানুষের জীবনকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সিনেমাটি নির্মাণ করতে গিয়ে পরিচালক নিজেই জীবনের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। অস্কার জয়ের প্রতিক্রিয়ায় বিষাদের সুরে থমাস বলেন, ‘আমরা এমন একটি সিনেমা বানাতে চেয়েছিলাম, যার বিষয়বস্তু ছিল জীবনকে উপভোগ করা। কিন্তু শুটিংয়ের চার দিনের মাথায় একটা অঘটন ঘটে যায়। এক সড়ক দুর্ঘটনা মেয়েটাকে চিরদিনের জন্য কেড়ে নেয়।’

বিগত কান চলচ্চিত্র উৎসবে (বাঁ থেকে) আইডা, থমাস ও হেলেন
ছবি: সংগৃহীত

ছবিটা নির্মাণের সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে আছেন নির্মাতা থমাসের মেয়ে আইডা। একটা উপন্যাস পড়ে প্রথম তিনি জানতে পারেন ড্যানিশ তরুণদের মদ্যপানের কথা। তিনি বাবার সঙ্গে সেটি শেয়ার করেছিলেন। মেয়ের কাছ থেকে সেই গল্প শুনেই থমাস এ নিয়ে একটি সিনেমা বানানোর কথা ভাবেন। চিত্রনাট্য তৈরি করে মেয়েকে দেখান। মেয়ে আফ্রিকা থেকে চিঠি লিখে বাবাকে জানিয়েছিল, চিত্রনাট্যটি তাঁর খুব ভালো লেগেছে। আইডা থাকতে চেয়েছিল পুরো সিনেমার সঙ্গে। ভেজা চোখ নিয়ে আইডার বাবা পরিচালক থমাস বলেন, ‘আমরা আইডাকে মিস করি, ভালোবাসি। আমরা তার স্মৃতি ধরে রাখতে সিনেমার কাজ শেষ করেছিলাম। ছবিটা আমাদের অর্থ দিয়েছে, স্বীকৃতিও দিল। মেয়েটা বেঁচে থাকলে আজ করতালি আর চিৎকার করে বাবাকে অভিবাদন জানাত। আইডা, তোমার সঙ্গে একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। তুমি আমাদের মাঝে আছ। এই পুরস্কারটা তোমার জন্য।’

ছবির প্রধান চার অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে পরিচালক (মাঝে)
ছবি: সংগৃহীত