রুপালি পর্দায় সেব্রেনিৎসা গণহত্যা
অস্কারের জমকালো আসর বসছে কিছুদিন পরেই। সেখানে সিনেমাপ্রেমীদের তুমুল আগ্রহ থাকে এর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বিভাগ নিয়ে। এই বিভাগে প্রতিযোগিতার জন্য ৯৭টি দেশ থেকে একটি করে সিনেমা পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছে পাঁচটি সিনেমা। তার মধ্যে একটি বসনিয়া–হার্জেগোভিনার সিনেমা ‘হয়্যার আর ইউ গোয়িং, আইডা’।
আইডা নামে এক নারীর সংগ্রাম নিয়ে ছবির গল্প। জীবনের মায়া ত্যাগ করে গণহত্যার কবল থেকে স্বামী ও দুই সন্তানকে বাঁচাতে মরিয়া ছিলেন এই নারী। বসনিয়া–হার্জেগোভিনাতে অংশগ্রহণ করা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী দলে অনুবাদক হিসেবে কাজ করেন আইডা। দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে সেব্রেনিৎসা শহরে আইডা থাকেন। যুগোস্লাভিয়া ভেঙে যাওয়ার পরে সেব্রেনিৎসাতে সার্ব বাহিনী নির্বিচার হামলা চালিয়ে শহর দখল করে নেয়। সার্ব বাহিনীর হামলায় হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে জীবন বাঁচাতে দিগ্বিদিক পালাতে থাকে। আইডার পরিবারসহ কয়েক হাজার মানুষ পালিয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে আশ্রয় নেয়। এসব মানুষকে ফিরিয়ে নিতে সার্ব বাহিনী কৌশলের আশ্রয় নেয়। আইডা এই দুঃসংবাদের আঁচ পেয়ে স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকার পথ খুঁজতে থাকেন।
১৯৯৫ সালে বসনিয়াতে সার্ব বাহিনীর গণহত্যা ইতিহাসের ঘৃণিত ও বর্বর একটি অধ্যায়। জাতিগত নিধনের সেই গণহত্যার চিত্র পর্দায় তুলে ধরেছেন পরিচালক জাসমিলা জাবনিক। অসাধারণভাবে ছবিটি চিত্রায়িত করেছেন তিনি। বেশির ভাগ সময়েই ছিল না আবহ সংগীত। সিনেমাটি ধীর লয়ের নয়, এক বসায় দেখে ওঠা যায়। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, এই সিনেমার ভাগ্যে যেতে পারে এবারের অস্কার।
আইডা চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাসনা ডুরিচিস। বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও সে দেশের টিভি সিরিজেই তাঁকে নিয়মিত দেখা যায়। দুই যুগের ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো তাঁর প্রতি বড় ধরনের সফলতা হাতছানি দিচ্ছে। প্রায় দুই ঘণ্টা ব্যাপ্তির এই সিনেমার বড় অংশজুড়েই ছিল তাঁর উপস্থিতি। অভিনয়ের পাশাপাশি অভিনয় নিয়ে পড়ানও এই অভিনেত্রী। ছবিটিতে আইডার পরিবারকে প্লট হিসেবে নিলেও নির্মাতা সার্ব বাহিনীর গণহত্যার ভয়াবহতা স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সিনেমাটি ইতিমধ্যে বাফটা ও ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা সিনেমা হিসেবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। গোল্ডেন লায়নের দৌড়েও এগিয়ে ছিল।