সালমা হায়েকের মুখোমুখি

মাত্র হাত দুয়েক দূরে বসে আছেন সালমা হায়েক। বসে বসেই দূরে কাকে যেন উড়ন্ত চুমু ছুড়ে দিলেন। ডাকলেন গলা উঁচিয়ে। পরনে আঁটসাঁট লাল-কালো ফুলেল পোশাক। পায়ে উঁচু কালো হিল। ছেলেদের হৃৎকম্প বাড়িয়ে দেয় বলেই নাকি এই হিলের আরেক নাম ‘কিলার হিল’। অন্য সময় হলে মনে হতো, নির্ঘাত স্বপ্ন দেখছি।
কান চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চ বলেই নিশ্চিত রইলাম, এটা স্বপ্ন নয়, সত্যি। ডেসপ্যারাডো, মিদাক অ্যালি, ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মেক্সিকো কিংবা ফ্রিদা। কত ছবিতে কত-না রূপে দেখেছি তাঁকে। আন্তোনিও বান্দেরাসের সঙ্গে ডেসপ্যারাডো ছবিতে সালমার ঝড়-তোলা শয্যাদৃশ্য এখনো তাঁর অনুরাগীদের চোখে লেগে আছে।
আকৈশোরের এই প্রিয় অভিনেত্রীর সঙ্গে দুটো কথা বলার সুবর্ণ সুযোগ এখন সামনে। এ সুযোগ যাতে ফসকে না যায়, সে জন্য সতর্ক হয়ে আছি। অভাবনীয়ভাবে সুযোগটা চলে এল একেবারে শুরুতেই। নিজের হৃৎপিণ্ডের শব্দ ততক্ষণে নিজের কানে এসে বাজতে শুরু করেছে। সেই হৃৎকম্পন নিয়েই সালমা হায়েককে প্রশ্ন, ‘আপনি কি জানেন বাংলাদেশ নামের একটি দেশে আপনার বহু অনুরাগী আছে?’
সালমা শুনলেন। জবাবে কী বলবেন, কয়েক মুহূর্ত হয়তো ভাবলেন। তারপর মুখ খুললেন, ‘আমি জানতাম না। তবে এখন জেনে খুবই ভালো লাগল। তথ্যটা জানানোর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।’
‘ডেসপ্যারাডো, ফ্রম ডাস্ক টিল ডন, ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মেক্সিকো—এসব ছবি তো অসম্ভব ভালো লেগেছে বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমীদের।’
এ কথার জবাবে এবারে সালমা হাসলেন। তাঁর মেক্সিকান ধাঁচের ইংরেজিতে বললেন, ‘আমি আশা করছি, আমার নতুন এই ছবিটা তাদের আরও বেশি ভালো লাগবে।’
‘টেল অব টেলস দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। সামুদ্রিক ড্রাগনের হৃৎপিণ্ডের স্বাদ কেমন ছিল?’
এবারে সালমা মোটেই কোনো সময় নিলেন না। তাঁর ত্বরিত জবাব, ‘খুবই জঘন্য। আমার মনে হয়, এই বিশেষ দৃশ্যটা নিয়ে আরও কথা বলা দরকার। দাঁড়াও বলছি। পরিচালকের ইচ্ছে ছিল ওটা যেন সত্যিকারের হৃৎপিণ্ডের মতো দেখায়। শুধু বাইরে থেকে নয়, ভেতরের দিকটাতেও। ওটা খেতে গিয়ে বহু কষ্টে আমি বমি আটকিয়েছি। আমার কপাল ভালো যে আমার মেয়ে ভালেন্তিনা সেখানে ছিল। ওর বুদ্ধিতেই পরে আমি ক্যামেরাকে ফাঁকি দিতে পেরেছি। সামনের অংশটায় কামড় দিয়ে আস্তে করে পেছনে ফেলে দিয়েছি।’
বলেই মজার একটা ভঙ্গি করলেন সালমা। পুরো সংবাদ সম্মেলনকক্ষে হাসির ঝড় উঠল। কে বলবে দুনিয়াজোড়া সাড়া জাগানো এই অভিনেত্রীর বয়স এখন ৪৮। রূপে আর উচ্ছলতায় এখনো সালমা হায়েক যেন ডেসপ্যারাডো ছবির সেই উচ্ছল তরুণী।
সালমা হায়েকের সঙ্গে কাল কান চলচ্চিত্র উৎসবে আরও এসেছিলেন টেল অব টেলস (ইল রাক্কোন্তো দেই রাক্কোন্তি) ছবির পরিচালক মাত্তেয়ো গাররোনে, অভিনেতা ভিনসেন্ট ক্যাসেল, জন সি রেইলি এবং ছবির বাকি কলাকুশলীরা।
সাগর-দানবের হৃৎপিণ্ড
আগের দিন সালে দিবুসি হলে দেখেছি মাত্তেয়ো গাররোনে পরিচালিত টেল অব টেলস (ইল রাক্কোন্তো দেই রাক্কোন্তি)। ছবিটি নিয়ে উৎসবে ব্যাপক আগ্রহ আর উত্তেজনা ছিল।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে সালমা হায়েক l ছবি: প্রথম আলো
কান চলচ্চিত্র উৎসবে সালমা হায়েক l ছবি: প্রথম আলো


সে উত্তেজনা বৃথা যায়নি। টেল অব টেলস নামের এই বিচিত্র রূপকথায় সালমা হায়েকের চরিত্র এক সন্তান-প্রত্যাশী রানির, যিনি সন্তান লাভের বাসনায় সাগর-দানবের হৃৎপিণ্ড ভক্ষণ করেন। তারপর তাঁর গর্ভে আসে সন্তান। মাত্তেয়ো গাররোনের পুরো ছবিই এ রকম বিচিত্র ঘটনায় ভরপুর।
উৎসবের আরও কিছু
সালমা হায়েকের পর পরই কাল কানে দেখা দিয়েছেন হলিউড অভিনেত্রী শার্লিজ থেরন এবং টম হার্ডির মতো তারকারা। শার্লিজ থেরন এসেছেন তাঁর ছবি ম্যাড ম্যাক্স: ফিউরি রোড-এর প্রচারণায়। গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ছবিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার।
প্রতিযোগিতা বিভাগের ছবির মধ্যে কাল উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে জাপানি পরিচালক হিরোকাজু কোরিদার উমিমাচি ডায়েরি এবং হাঙ্গেরির পরিচালক লাসলো নেমেসের সান অব সাউল। ধ্রুপদি ছবির বিভাগে ছিল দ্য থার্ডম্যান-এর প্রদর্শনী।
আজ প্রদর্শিত হবে ইয়োরগোস লানথিমোসের দ্য লবস্টার এবং উডি অ্যালেনের ইরর্যাশনাল ম্যান-এর মতো বহুল প্রতীক্ষিত দুটো ছবি।