গানের আতিয়া, অভিনয়ের টাপুর

আতিয়া আনিসা ও রোদেলা টাপুর। কোলাজ
মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়ে মাত করেছেন তরুণ কণ্ঠশিল্পী আতিয়া আনিসা ও অভিনয়শিল্পী রোদেলা টাপুর। গানে ও অভিনয়ে পুরস্কার বাগিয়েছেন তাঁরা।

‘এখনো মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি। প্রথমবার এসেই সেরা গায়িকার সম্মাননা আমার জন্য অনেক সম্মানের।’ মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০২২-এ প্রথমবার মনোনয়ন পেয়েই পুরস্কার পাওয়া নিয়ে বললেন তরুণ কণ্ঠশিল্পী আতিয়া আনিসা।
‘পরাণ’ সিনেমায় ‘চল নিরালায়’ গানের জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের ২৪তম আসরে সেরা গায়িকার পুরস্কার পেয়েছেন ঢাকার মেয়ে আতিয়া। পুরস্কার পাওয়ার পর তাঁকে নিয়ে শ্রোতাদের আগ্রহও বেড়েছে। একের পর এক টিভি চ্যানেল থেকে ডাক পাচ্ছেন তিনি।

আরও পড়ুন

গানটির গীতিকার জনি হক, সহশিল্পী অয়ন চাকলাদার ও সিনেমার পরিচালক রায়হান রাফীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান আতিয়া।

আতিয়া আনিসা। ছবি : ফেসবুক থেকে

দুই যুগ ধরে আতিয়া আনিসার বাবা আনোয়ার উল্লাহর অডিও ক্যাসেট, সিডির দোকান ছিল। সংগীত অনুরাগী বাবার অনুপ্রেরণায় গানে নাম লিখিয়েছেন আতিয়া। মেয়ের প্রাপ্তিতে আনোয়ার উল্লাহ বলেন, ‘মেয়ের এই প্রাপ্তিতে আমি খুবই আনন্দিত। আমি চাই, আমার মেয়ে আরও গান করবে।’

গত বৃহস্পতিবার চরকিতে মুক্তিপ্রাপ্ত ওয়েব সিনেমা ‘পুনর্মিলনে’-তে ‘পুড়ে গেলাম’ শিরোনামে একটি গানে পাওয়া গেছে তাঁকে। গানটি আলাদাভাবে এখনো মুক্তি না পেলেও সিনেমার দর্শকেরা গানের প্রশংসা করেছেন। আতিয়া বলছেন, তিনি সিনেমাটি দেখেছেন, সিনেমাটির মতো গানটিও ভালো লেগেছে তাঁর।

সংগীতশিল্পী হাবিব ওয়াহিদের সঙ্গে আতিয়ার দুটি গান প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। পাশাপাশি ‘জীবন জুয়া’ নামে একটি অমনিবাস সিনেমায় ‘মন পাখিরে’ শিরোনামে নতুন একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন, সিনেমাটি প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
মাত্র পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারে প্লেব্যাকে আলোচিত হয়েছেন আতিয়া। ২০১৭ সালে চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠে অংশ নেন, এতে চিশতি বাউলের ‘বেহায়া মন’ গান পরিবেশন করে আলোচিত হন তিনি। পরের বছর ভারতের রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা’তেও অংশ নেন।

বাপ্পা মজুমদারের হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন আতিয়া আনিসা। পাশে আরমীন মূসা
প্রথম আলো

‘যদি একদিন’ সিনেমায় ‘চুপকথা’ গান দিয়ে প্লেব্যাকে অভিষেক ঘটে আতিয়ার। এরপর একে একে ‘শাহেনশাহ, ‘পাপ-পুণ্য, ‘দিন—দ্য ডে, ‘পরাণ, ‘পায়ের ছাপ’ ও ‘শত্রু’, ‘আন্তঃনগর’, ‘ফ্লোর নম্বর সেভেন’, ‘মিশন হান্টডাউন’, ‘পুনর্মিলনে’-তে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।

আতিয়ার কোন গানটি প্রিয়—এমন প্রশ্নের জবাবে আতিয়া বলেন, ‘প্রতিটা গানই আমার পছন্দের। কোনোটাকেই বাদ দিতে পারব না। তবে “চল নিরালায়” গানের জন্য আমি এত সম্মান পেয়েছি; সেই গান তো রয়েছেই।’
আতিয়ার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করছেন।

রোদেলা টাপুর

বাবা পরিচালক সতীর্থ রহমান ও মা অভিনেত্রী গোলাম ফরিদা ছন্দাকে দেখেই অভিনয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছেন রোদেলা টাপুর। মাত্র ছয় বছর বয়সে বাবার পরিচালনায় অভিনয়ে নাম লেখান তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমা ‘দেশান্তর’-এ অভিনয় করে পরিচিতি পেয়েছেন। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে মনোনয়ন পান, প্রথমবার পুরস্কারও পেয়েছেন টাপুর। পড়াশোনার সুবাদে ভারতের পাহাড়ঘেরা শহর কালিম্পংয়ে থাকেন টাপুর। সেখানকার ডক্টর গ্রাহামস হোমস স্কুলের একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন তিনি।

পুরস্কার হাতে রোদেলা টাপুর
প্রথম আলো

গত সোমবার সন্ধ্যায় হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা-মায়ের জন্যই আমি এই জায়গায় এসেছি। সিনেমাটিতে অভিনয়ের জন্য চিত্রনাট্য পড়া, সংলাপ দেওয়াসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন বাবা-মা। পরিচালক আশুতোষ সুজন আঙ্কেলর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

১৯৪৭ সালের দেশভাগের প্রেক্ষাপটে লেখা নির্মলেন্দু গুণের উপন্যাস ‘দেশান্তর’ অবলম্বনে একই নামে সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন আশুতোষ সুজন। সুজন জানালেন, সিনেমাটি করার সময় চরিত্রের জন্য কম বয়সী শিল্পীকে দরকার ছিল। তবে পাচ্ছিলেন না। পরে টাপুর ও টুপুরের খোঁজ পান। দুজনের মধ্যে টাপুরকে নির্বাচিত করেন।
মাত্র ছয় বছর বয়সে বাবার পরিচালনায় অভিনয়ে নাম লেখান টাপুর। এরপর টিভি নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছেন তিনি। তবে দেশান্তর দিয়ে সব ছাপিয়ে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নেন টাপুর। তিনি বলেন, ‘এই সিনেমায় জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। পরিচালকের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়েছি।’

অভিনয় দিয়ে পরিচিতি পেলেও টাপুর নির্মাতা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান। পাশাপাশি ভিএফএক্স সম্পাদনা ও অভিনয়ও চালিয়ে যাবেন। ‘বাবাকে দেখে নির্মাণে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তাঁর কাছেই অনুপ্রেরণা পেয়েছি।’
টাপুর ও বোন টুপুর বছরের বেশির ভাগ সময়ই ভারতে থাকেন, বছরে তিন মাসের মতো ছুটি পান। ছুটিতে দেশে এলে কাজ করেন। স্কুলের দিনগুলো কেমন কাটে, জিজ্ঞাসা করলে টাপুর বললেন, ‘এখানকার আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা, ভালোই লাগে। তবে বাংলাদেশকে মিস করি।’