চলেই গেলেন রূপসজ্জাশিল্পী আবদুর রহমান

রূপসজ্জাশিল্পী আবদুর রহমান
ছবি সংগৃহীত

শীত তাঁর পছন্দের ঋতু। তিন দিন আগেও বলেছিলেন, ‘এবারের শীতটা আনন্দ নিয়ে কাটাতে চাই’ তা আর হলো না। আসন্ন শীতে ঠান্ডা লেগে যায় এবং এই সূত্রেই ক্রমে আরও শারীরিক অসুস্থতা দেখা হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা খারাপ দেখে চিকিৎসকদের পরামর্শে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবুও শেষ রক্ষা হলো না রূপসজ্জাশিল্পী আবদুর রহমানের।

দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী এই রূপসজ্জাশিল্পী আজ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন তাঁর ভাগনে মোহাম্মদ হালিম।

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন আবদুর রহমান। ছবি সংগৃহীত

গতকাল দুপুরের দিকে হঠাৎ ফোন দিয়ে হালিম প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মামার শরীর খারাপ। তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন। তিন দিন আগে আবদুর রহমান হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শ্বাস নিতে তাঁর কিছুটা কষ্ট হচ্ছিল। ডায়াবেটিসসহ বেশ কিছু রোগের ওষুধ নিয়মিত খেতে হতো, সেগুলোও খেতে পারছিলেন না। এমনকি ফলের রস, স্যালাইনসহ কোনো রকম খাবার খেতে না পেরে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে চেতনাও হারিয়ে ফেলেন। শেষ দুই দিন কাউকে চিনতেও পারেননি।
মোহাম্মদ হালিম বলেন,‌ ‘কাল হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু কোনোভাবে ফেরানো যায়নি। ভোর ৫টা ২০–এর দিকে মামা মারা গেছেন। মামার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। মামা দীর্ঘদিন ধরে মেকআপশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। এই সময়ে কেউ কষ্ট পেলে ক্ষমা করে দেবেন।’

নাটকের শুটিংয়ের সময় আবদুর রহমান ও অন্যরা। ছবি সংগৃহীত

আবদুর রহমান বিয়ে করেননি। কখনো একা বাসা ভাড়া নিয়ে, কখনো তিন বোনের বাসায় থাকতেন। এর আগে সাভারে একটি বৃদ্ধাশ্রমেও ছিলেন। তবে প্রায় দুই বছর ধরে তিনি ভাগনের কামরাঙ্গীরচরের বাসায় ছিলেন। সেখানেই ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের বায়তুল মনোয়ার মসজিদে বাদ জোহর জানাজা নামাজ পড়ানো হবে। পরে তাঁকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।

প্রায় পাঁচ যুগ ধরে ‘ঘুড্ডি’, ‘মাটির ময়না’, ‘মেঘলা আকাশ’, ‘নাগবউ’সহ প্রায় ২০০ ছবির রূপসজ্জাকারী হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১০ সালে ‘মনের মানুষ’ এবং ২০১৬ সালে ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এ ছাড়া প্রযোজক সমিতিসহ আরও অনেক পুরস্কার আছে তাঁর ঝুলিতে। ১৯৬২ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি মঞ্চনাটকের রূপসজ্জা দিয়ে ক্যারিয়ারে পা রাখেন। টিভিতে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতেন তিনি। স্বাধীনতার পর আবদুর রহমান চলচ্চিত্রে রূপসজ্জার কাজ শুরু করেন।

রূপসজ্জাশিল্পী আবদুর রহমান
ছবি সংগৃহীত

তিনি নারায়ণ ঘোষ মিতা, সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, কাজী জহির, হুমায়ূন আহমেদ, কলকাতার গৌতম ঘোষ, বাসু চ্যাটার্জিসহ অনেক গুণী নির্মাতার সঙ্গে কাজ করেছেন। শিল্পীদের মধ্যে ভারতের শাবানা আজমি, সাবিত্রী চ্যাটার্জি, লাবণী সরকার, প্রসেনজিৎসহ অনেকের রূপসজ্জা করেছেন। দেশের নায়ক রাজ রাজ্জাক, কবরী, শাবানা থেকে শুরু করে প্রায় সবারই মেকআপ করেছেন এই শিল্পী। দেশের চলচ্চিত্র ও নাট্যাঙ্গনের সুপরিচিত এই রূপসজ্জাকারীর জন্ম ১৯৪৬ সালের ২২ জুলাই।