ভালোবাসা বেঁচে থাকে বন্ধুত্বে...
‘আসলে আমরা যতটা না স্বামী-স্ত্রী, তার চেয়ে অনেক বেশি বন্ধু। একসঙ্গে জীবন যাপন করতে গিয়েও সেই যে প্রথম থেকে শুরু হওয়া বন্ধুত্ব, তুই-তুকারি সম্পর্ক—এটা এখনো আমাদের মধ্যে আছে। সব ছাপিয়ে এই বন্ধুত্বের সম্পর্কটাই আমাদের সারা জীবন থাকুক, এটাই শুধু চাওয়া।’ ভালোবাসার গল্পে বন্ধুত্বটাকে এভাবেই গুরুত্ব দিলেন পুতুল। সাজিয়া সুলতানা পুতুল ২০০৬ সালের ক্লোজআপ তারকা। ক্লোজআপ ভালোবাসার দিনে ভালোবাসার গল্পে তিনি এই কথা বলেন।
ক্লোজআপ–প্রথম আলো ডিজিটালের আয়োজনে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের প্রথম দিন ছিলেন ক্লোজআপ তারকা সাজিয়া সুলতানা পুতুল ও তাঁর স্বামী সৈয়দ রেজা আলী। প্রথম আলোর ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে পাঠক ভালোবাসার গল্প সিজন ৫–এ প্রথম দেখতে পাবেন এই তারকা জুটিকে।
অনুষ্ঠানে এই জুটির প্রথম দেখা হওয়া, প্রথম কথা বলা এবং বিয়ের আয়োজনের কথাসহ সম্পর্কের মজার রসায়ন নিয়ে গল্প করেন এই দম্পতি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নীল হুরেজাহান।
প্রথম দেখার দিনের কথা বলতে গিয়ে সৈয়দ রেজা আলী বলেন—‘আমি তখন অস্ট্রেলিয়ায় থাকতাম। সেখানে ব্যাংকে চাকরি করতাম। তবে সংগীতের প্রতি আমার প্রবল আগ্রহ ছিল। বাংলাদেশে যখনই সংগীতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো আমি স্টেজে শিল্পীর সঙ্গে গিটার বাজাতাম। সেভাবেই ২০১৯–এর ভালোবাসা দিবসের পরদিন, মানে ১৫ ফেব্রুয়ারি একটা অনুষ্ঠানে পুতুলের সঙ্গে স্টেজে গিটার বাজাতে গিয়ে প্রথম পরিচয়। তারপর ধীরে ধীরে বন্ধুত্বের দিকে এগোয় সম্পর্ক। প্রথম দিকে তো আমরা এত ভালো বন্ধু ছিলাম এবং দুজনেরই পণ ছিল আমরা কখনো বিয়ে করব না। কিন্তু কখন যে পণ ভেঙে বিয়ে করে ফেললাম!’
নিজেদের বিয়ের গল্পের কথা জানাতে গিয়ে পুতুল জানান—‘আমাদের বিয়ে হয় ২০২১–এর ৩ এপ্রিল। খুব অদ্ভুতভাবে বিয়ে হয়। কারণ, দুপুরে খাবার টেবিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিয়ে হবে। সন্ধ্যায় হুলস্থুল করে বিয়ে পড়ানো হয়। কারণ, পরদিন থেকে লকডাউন শুরু। তিন ঘণ্টার মধ্যে বিয়ের যাবতীয় আয়োজন করা হয়। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে আগ থেকেই অনেক স্নেহ করতেন। তাঁরা চাচ্ছিলেন, এত সুন্দর বন্ধুত্বটা যেন টিকে থাকে। আর আমাদের ভালো লাগার বিষয়টি তো ছিলই।’
বিয়ের পর টোনাটুনির সংসার কেমন ছিল সঞ্চালকের এমন জানতে চাওয়ায় পুতুল জানান—রেজা আর আমার যে গানবাড়ি আছে, ওটাকে বিয়ের সময় দুই পরিবার মিলে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছিল আমাদের সংসার হিসেবে। কিন্তু আমরা দুজনই পরিবারের সবাইকে নিয়ে থাকতে খুব পছন্দ করি। মা-বাবা, ভাইয়ের সঙ্গে মিলেমিশে একসঙ্গে থাকার অন্য রকম এক অনুভূতি। এমন আনন্দের সংসার রেখে একা একা আসলে আমাদের সংসার করা হয়নি। সবাই মিলেমিশে একসঙ্গেই রয়েছি। এত আদর আর ভালোবাসার একটা জীবন পেয়েছি। এটা সৃষ্টিকর্তার একটা আর্শীবাদ বলব।’
১৩ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের আগের দিন পুতুল এবং রেজা দম্পত্তির সঙ্গে জমে উঠে এই আড্ডা। বন্ধুত্ব-বিয়ে এবং আরও মধুর বন্ধুত্বের পর এখন তাঁরা হয়েছেন মা-বাবা। গীতলীনা নামে পুতুল-রেজা দম্পত্তির আছে সাড়ে সাত মাসের এক কন্যাশিশু। গীতলীনাকে নিয়ে সংসার এখন আরও সুন্দর। আরও মধুর। সাধারণত বিয়ে-প্রেম এর পর সন্তান হওয়ার পর ভালোবাসায় কিছুটা ভাটা পড়ে মা-বাবার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে।
এই দম্পতির ক্ষেত্রে এমন কিছু কী হয়েছে? সঞ্চালকের এমন জানতে চাওয়ায় চটপটে পুতুলের জবাব—‘আমার তো মনে হয় মা-বাবা হওয়ার পর আমাদের ভালোবাসার টান আরও বেড়েছে। সাধারণত দায়িত্বের মধ্য দিয়ে ভালোবাসা আরও বেশি বোঝা যায়। আমার মেয়ে হওয়ার পর নতুন মা হিসেবে পুরো পরিবার এবং রেজার কাছ থেকে খুব সহায়তা পেয়েছি। এই ভালোবাসা আসলে পরিমাপের বিষয় নয়।’
একে অপরের দোষ–গুণ কতটা ইতিবাচকভাবে চোখের দিকে তাকিয়ে বলা যায়, তা এই লাইভ শো দেখলে দর্শক খুব সহজেই বুঝে যাবেন। পুতুল তাঁর গানের জগতে সুন্দর ভাগ্য ফিরিয়ে এনেছে এমনটাই মনে করেন সৈয়দ রেজা আর রেজার কারণে বিয়ে এবং সন্তান হওয়ার পরও নিজের গান ও লেখার জগতটাকে আগের মতো সুন্দর চালিয়ে নিতে পারছেন বলে দুজন দুজনকে ধন্যবাদ দেন।
অনুষ্ঠানের শেষে প্রতিটি সম্পর্কে সততা-স্বচ্ছতা এবং প্রিয়জনদের সময় থাকতে মূল্যায়ন করাকেই একটা সুন্দর সম্পর্কের মূল ভিত্তি বলে মনে করেন এই দম্পতি।