আজ থেকে চরকিতে ‘আদিম’

‘আদিম’ সিনেমার দৃশ্যছবি: পরিচালকের সৌজন্যে

মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অফিশিয়াল শাখায় বাংলাদেশ থেকে প্রথম পুরস্কার পায় ‘আদিম’ সিনেমাটি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে অর্জনের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য এই পুরস্কার। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়ার দর্শক সমালোচক ও আয়োজকদের কাছে সিনেমার পরিচালক বাহবা পেয়েছিলেন। এই অর্জনে পরবর্তী সময়ে সিনেমাটি নিয়ে দেশের দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়। সেই সিনেমাটি আজ বৃহস্পতিবার রাত আটটায় মুক্তি পাচ্ছে ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকিতে।  

আরও পড়ুন

‘আদিম’ নিয়ে মস্কো উৎসবের আয়োজকেরা সিনেমাটির পরিচালক যুবরাজ শামীমকে চলচ্চিত্র সমালোচকদের কেউ কেউ তুলনা করেছিলেন কোরিয়ান প্রয়াত নির্মাতা কিম কি দুকের সঙ্গে। কারণ, স্বাধীন ঘরানার সিনেমা বানিয়ে ক্যারিয়ারের শুরুতে মস্কোতে আলোচনা তৈরি করেছিলেন কিম কি দুকের সিনেমা। একইভাবে ২০২২ সালে মস্কোতে আলোচনা আসে নির্মাতা শামীমের ‘আদিম’। পরের বছর পরিচালককে উৎসবের জুরি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। মস্কোতে যা সচরাচর দেখা যায় না।

‘আদিম’-এর যাত্রা শুরু কীভাবে? ২০১৭ সালে সিনেমাটি নির্মাণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন পরিচালক। সিনেমার চরিত্রকে কাছ থেকে দেখতে দিনের পর দিন বস্তিতে কাটিয়েছেন পরিচালক। বস্তির বাসিন্দাদের মধ্য থেকেই সিনেমার শিল্পী খুঁজেছেন। সেই সিনেমাটি এবার দর্শকদের সামনে আনতে পারায় খুশি পরিচালক যুবরাজ শামীম।

‘আদিম’–এর পোস্টার। চারকির সৌজন্যে

তিনি জানান, সিনেমা দেখার জন্য প্রচুর দর্শক অপেক্ষা করছেন। আগামী মাসে সেসব দর্শকের কাছে সিনেমাটি পৌঁছাবে, এই ভেবে তিনি খুশি। চরকির কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন শামীম। কারণ, বিকল্প ধারার বা ইনডিপেনডেন্ট সিনেমার প্রচার নিয়ে অনেক সময় পরিচালকদের বিপাকে পড়তে হয়।

যুবরাজ শামীম বলেন, ‘“আদিম”-এর এখন একটা জায়গা হলো। চরকির মতো একটা প্ল্যাটফর্মে সিনেমা থাকবে, এটা আমাদের জন্য ভালো লাগার। বিশ্বের যেকোনো দেশের দর্শক এখন সিনেমাটি দেখার সুযোগ পাবেন। একজন পরিচালক হিসেবে চরকি আমাকে এই সুযোগ দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বড় সংখ্যায় দর্শকদের আমরা ধরতে পারব। এটা আমাকে আস্থা ও সম্ভাবনার জায়গায় নিয়ে গেছে।’

সিনেমার নির্মাণকাজ শুরুর পর শুটিংয়ে নানা বাধাবিপত্তি পেরোতে হয়েছে এই পরিচালককে। অর্থাভাবে কখনো শুটিং বন্ধও থেকেছে। শেয়ার বিক্রি করে অর্থের সংস্থান করে সিনেমার কাজ চালিয়ে গেছেন নির্মাতা। তারপরও ঝক্কির যেন শেষ নেই। পোস্টের কাজ করতে গিয়েও অর্থসংকটে পড়েন। তাঁর সিনেমায় ৫৩ জন শেয়ার রয়েছেন। যাঁদের অর্থায়নে সিনেমাটি নির্মিত।

যুবরাজ শামীম বলেন, ‘সিনেমাটির হলে মুক্তি ও চরকিতে বিক্রি করে যে অর্থ পেয়েছি, সেখানে আমি নির্মাতা ও প্রযোজক হিসেবে নিজেকে সফল বলব। কারণ, আমার সিনেমা ব্যবসাসফল। এরই মধ্যে আমি যাঁদের কাছ থেকে ধার করে সিনেমাটির শুটিং করেছিলাম, তাঁদের অনেকের টাকা ফিরিয়ে দিয়েছি। বাকিদের অর্থ ফেরত দেব। স্বাধীনভাবে সিনেমা নির্মাণ নিয়ে ভাবতে পারছি, এটাও আমার প্রাপ্তি। বাড়তি প্রাপ্তি ছিল দেশ-বিদেশের উৎসবে অংশগ্রহণ করা। আদিম নিয়ে ছয়টি দেশে ঘুরেছি। যার সব অর্থ দিয়েছে সেসব চলচ্চিত্র উৎসব।’

যুবরাজ শামীম
ছবি: তানভীর আহম্মেদ

২০২২ সালে ৪৪তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে স্পেশাল জুরি পুরস্কার ও নেটপ্যাক জুরি পুরস্কার জয় করে নির্মাতা যুবরাজ শামীমের ‘আদিম’। এরপর বাইরের আরও কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি পুরস্কৃত ও প্রশংসিত হয়েছে।

পরে এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের (ডিইউএফএস) আয়োজনে ‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র ১৪৩০’ উৎসবে প্রদর্শিত হয় ‘আদিম’। সেখান থেকে হীরালাল সেন পদক-১৪৩০ জয় করে সিনেমাটি। এটি ছিল বাংলাদেশ থেকে প্রথম পুরস্কার। ‘দেশ-বিদেশ থেকে আমি অনেক প্রশংসা পেয়েছি। এখন অপেক্ষা দেশের দর্শকেরা সিনেমাটি কীভাবে নেন, সেটা দেখার জন্য। কারণ, সিনেমা হলে খুব বেশি সময় না চলায় অনেকেই সিনেমা দেখতে পারেননি। এবার সব শ্রেণির দর্শকদের হাতের মুঠোয় সিনেমাটি। চরকি থেকে সিনেমাটি দেখে দর্শক কী বলেন, সেটা নিয়ে ভাবছি।’
‘আদিম’ সিনেমার প্রধান চরিত্র ল্যাংড়ার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বাদশা। ৩৫ জনের মধ্য থেকে তাঁকে বাছাই করা হয়। সিনেমার বাকি চরিত্রের মধ্যে সোহাগী খাতুন, দুলাল মিয়া, সাদেককেও বস্তিতেই খুঁজে পেয়েছেন নির্মাতা। নির্মাতা জানান, ছবির প্রয়োজনেই বস্তির বাসিন্দাদের দিয়ে অভিনয় করিয়েছেন, তাঁদের জীবনের গল্প তাঁরাই ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন। পরে সেটাই হয়েছে। সিনেমাটি যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা সবাই অপেশাদার এই অভিনয়শিল্পীদের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন।