‘আবার প্রলয়’–এর পোস্টার। আইএমডিবি

অনিমেষ দত্তকে ভোলেননি দর্শক। সেই যে কলকাতা পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের বেপরোয়া অফিসার। তাঁর কাজের ধরন একটু আলাদা। তিনি কোনো আইনকানুনের ধার ধারেন না। অপরাধ দমনে আক্ষরিক অর্থেই যা খুশি তা–ই করেন। পুলিশ বিভাগে তাঁর দুর্নাম নাকি সুনাম বেশি, বলা মুশকিল। ডাকাবুকো এই অফিসার আবার ঘরে ভিন্ন মানুষ—স্ত্রীর ভয়ে কাবু। দাপুটে অভিনয়, সঙ্গে কমেডির মিশেল মিলিয়ে সাধারণ দর্শকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন অনিমেষ দত্ত। ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘প্রলয়’-এর সিকুয়েল পরিচালক রাজ চক্রবর্তী আনলেন এক দশক পর। তো কেমন হলো অনিমেষ দত্তর প্রত্যাবর্তন?

২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘প্রলয়’ ছিল সিনেমা, ‘আবার প্রলয়’ তিনি রাজ চক্রবর্তী বানিয়েছেন ওয়েব সিরিজ হিসেবে। এটি তাঁর প্রথম সিরিজও বটে।

রাজ চক্রবর্তী মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমা বানান। প্রথম সিরিজেও তিনি সে ছাপ রেখেছেন। কমেডি, লার্জার দ্যান লাইফ মুহূর্ত আর অ্যাকশন মিলিয়ে সাধারণ দর্শকের উপভোগের যথেষ্ট মসলা মজুত রাখার চেষ্টা করেছেন। এমনকি তিনি ভেঙেছেন ওয়েবের প্রচলিত রীতিও। সাধারণত চলচ্চিত্র হয় প্লটনির্ভর, সিরিজ চরিত্রনির্ভর। কিন্তু ‘আবার প্রলয়’-এ উল্টোটাই করেছেন তিনি। পুরো সিরিজে অনেক চরিত্র, কারও সম্পর্কেই ভালোভাবে জানানোর সুযোগ হয় না। শেষ পর্যন্ত এটা সিরিজের বড় দুর্বলতা। কারণ, অনেক দক্ষ অভিনয়শিল্পীরা থাকলেও তাঁদের ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেননি পরিচালক।

সিরিজের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক অবশ্যই অনিমেষ দত্ত চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়। পুরো সিরিজটি একা টেনেছেন তিনি। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলে তাঁর অভিনয়, কমেডি, অ্যাকশন দেখে নিশ্চিতভাবেই তালি দিতেন দর্শক।

‘আবার প্রলয়’–এ ঋত্বিক ও কৌশানী। ফেসবুক থেকে

বেশির ভাগ বাংলা সিরিজই শহরকেন্দ্রিক। সেখান থেকে ‘আবার প্রলয়’ এক ধরনের তাজা বাতাস নিয়ে আসে। সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় শুটিং লোকেশনগুলো একধরনের মুক্তির আনন্দ দেয়। ‘আবার প্রলয়’-এ সারাক্ষণই কিছু না কিছু ঘটতে থাকে। ফলে দর্শককে চোখ সরাতে দেয় না। এটিও সিরিজের বড় প্রাপ্তি।

পরিচিত পাত্রপাত্রীদের সঙ্গে এই সিরিজে দেখা গেছে একঝাঁক নতুন অভিনয়শিল্পীকে। যাঁদের প্রত্যেকেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন। অনিমেষে দত্তর সহকারী পুলিশ কর্মকর্তা দেবাশীষ মণ্ডলসহ, স্থানীয় পুলিশ অফিসার চরিত্রের অভিনেতারাও ভালো করেছেন। তবে বিনোদ বিহারী চরিত্রে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও একটু জায়গা পেতে পারতেন।

গৌরব চক্রবর্তী, ঋত্বিক চক্রবর্তীরা নিজেদের চরিত্রে ভালো করেছেন। কলকাতার বিভিন্ন সিনেমা, সিরিজে ‘পাশের বাড়ির ছেলে’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া গৌরবকে এই সিরিজে ভিন্ন রূপে দেখেছেন দর্শক। তবে সবচেয়ে চমকে দিয়েছেন কৌশানী চক্রবর্তী। বাণিজ্যিক সিনেমার এই অভিনেত্রী মোহিনী মা চরিত্রে বলা যায় বাজিমাত করেছেন। তাঁর ক্যারিয়ারে এটা সেরা অভিনয় বললেও ভুল হবে না। তবে অনেক অভিনয়শিল্পীই স্থানীয় উচ্চারণ রপ্ত করতে যে রীতিমতো সংগ্রাম করেছেন, তা সিরিজটি দেখলে বোঝা যায়।

‘আবার প্রলয়’–এ পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ফেসবুক থেকে

তবে অনেক ইতিবাচক দিক থাকলেও ‘আবার প্রলয়’ খুব উপভোগ সিরিজ হয়ে উঠতে পারেনি। তার বড় কারণ দুর্বল চিত্রনাট্য। কয়েক পর্ব পরেই আপনি বুঝে যাবেন, কে খলনায়ক। আগের ‘প্রলয়’-তে কমেডি, চিত্রনাট্যের গাঁথুনিকে পরিচালক যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, ‘আবার প্রলয়’ তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি। সিরিজে অনিমেষ দত্তই সব, এটাই ‘আবার প্রলয়’-এর আরেকটি বড় দুর্বলতা।

তিনি ছাড়া অন্য চরিত্রগুলোকে সেভাবে জানতে পারেন না দর্শক। কোনো চরিত্রকে মানুষ আরও বেশি পছন্দ করে, যখন সে বড় চ্যালেঞ্জর মুখোমুখি হয়। কিন্তু পুরো সিরিজে অনিমেষকে কেউ সেভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতেই পারে না।

‘আবার প্রলয়’ যেভাবে শেষ হয়েছে, তাতে সিকুয়েলের আভাস স্পষ্ট। আশা করা যায়, পরেরবার অনিমেষ দত্তর প্রত্যাবর্তন আরও উপভোগ্য হবে।  

আবার প্রলয়
পরিচালক
: রাজ চক্রবর্তী
চিত্রনাট্য: রাজ চক্রবর্তী
অভিনয়: পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, জুন মালিয়া, কৌশানী মুখোপাধ্যায়, গৌরব চক্রবর্তী।
স্ট্রিমিং: জিফাইভ
পর্ব সংখ্যা: ১০