অ্যানি থেকে নাতাশা, বর্ণের ফেরা

আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ। অভিনেত্রীর সৌজন্যে

তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল যেন ‘রিভিউ বুক’। ‘সাড়ে ষোলো’ নিয়ে দর্শকের লেখা ফেসবুকে শেয়ার করেছেন আফিয়া তাবাসসুম। বর্ণ নামেই তাঁকে চেনেন দর্শক। বেশির ভাগ রিভিউতেই উঠে এসেছে, সিরিজটির নাতাশা চরিত্রে তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা। ১৬ আগস্ট হইচইয়ে মুক্তি পাওয়া ইয়াসির আল হকের সিরিজটিতে ছিলেন আফরান নিশো, ইন্তেখাব দিনার, জাকিয়া বারী মম, ইমতিয়াজ বর্ষণ, কাজী নওশাবা আহমেদের মতো অভিনয়শিল্পীরা। এত তারকার ভিড়েও নজর কেড়েছেন বর্ণ।

আরও পড়ুন

গতকাল শুক্রবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তরুণ এই অভিনেত্রী জানালেন, সিরিজটিতে তিনি অভিনয় করেছেন কোনো রিহার্সাল ছাড়াই! ‘আসলে শেষ মুহূর্তে আমি চূড়ান্ত হয়েছি, তখন রিহার্সালের সময় ছিল না,’ বলছিলেন বর্ণ। তিনি জানালেন, স্ক্রিন টেস্টের সময় চরিত্রটি নিয়ে তাঁর ধারণা ছিল। তাই মাথার মধ্যে আগে থেকেই একধরনের প্রস্তুতি ছিল। সেটাই অভিনয়ের সময় কাজে লেগেছে।

‘সাড়ে ষোলো’-এর গল্প
সিরিজটিতে নাতাশা চরিত্রটির বেশ কয়েকটি স্তর ছিল—কখনো সে অসহায়, কখনো শক্তিশালী, কখনো আবার ধূসর। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি অন্তরঙ্গ দৃশ্যে দেখা গেছে তাঁকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখা দর্শকের রিভিউতে একটি কমন বিষয় উঠে এসেছে—সব দৃশ্যেই সাবলীল ছিলেন বর্ণ।

‘সাড়ে ষোলো’ সিরিজে বর্ণ। ছবি : ফেসবুক থেকে

এই অভিনেত্রী বলেন, জটিল চরিত্র বলেই ‘নাতাশা’কে এত পছন্দ তাঁর—‘বাস্তব জীবনের সঙ্গে মিলে যায়, এমন চরিত্রগুলো আমার খুব পছন্দ। বাস্তবে প্রতিটি মানুষের একটি ধূসর দিক থাকে। নাতাশা এমন একটি মেয়ে যে তার ধূসর দিকগুলো লুকিয়ে রাখতে চায় না। দেশে ওর মতো হাজারো মেয়ে সংগ্রাম করছেন। এ ব্যাপারটাই চরিত্রটি নিয়ে আমাকে আগ্রহী করে তোলে। নাতাশার চরিত্রটি একরৈখিকভাবে চলে না, এটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আবেগের দৃশ্যগুলো করতে একটু সমস্যা হয়েছে।’

পর্দায় উপস্থিতির সময়ের দিক থেকে সাড়ে ‘ষোলো’ই তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় সিরিজ। কোনো রিহার্সাল ছাড়া এমন একটি কাজ যে করতে পেরেছেন, সে জন্য আফরান নিশো, ইন্তেখাব দিনার, জাকিয়া বারী মমসহ সব সহকর্মী আর পরিচালকের কাছে কৃতজ্ঞ বর্ণ।

‘রেহানা’র পর
‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এ অ্যানি চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন বর্ণ। এরপর দীর্ঘ বিরতি। চলতি বছর চরকির ‘মারকিউলিস ও হইচইয়ের ‘সাড়ে ষোলো’—পরপর দুই সিরিজে দেখা গেল তাঁকে। রেহানার মতো এত প্রশংসিত সিনেমা কি তাঁর জন্য চাপ তৈরি করেছিল? পরের কাজ বাছতে এ জন্যই কি এতটা সময় লাগল?

আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ। অভিনেত্রীর সৌজন্যে

বর্ণ বলেন, ‘ঠিক চাপ নয়, ভালো কাজের জন্যই এই বিরতি। চাইলে অনেক কিছু করা যায় কিন্তু সেসব তো লোকে ভুলে যাবেন। ভালো কিছু করলে কিন্তু মানুষ চরিত্রটি নিয়ে কথা বলবেন। তবে সব সময় যে এভাবেই কাজ হবে, তা–ও নয়। পেশাদার শিল্পীদের জন্য অর্থও গুরুত্বপূর্ণ।’

ঘটনাচক্রে অভিনয়ে
অভিনেত্রী হবেন, ছোটবেলা থেকে এমন কোনো ইচ্ছা ছিল না। বাবার চাকরির সুবাদে বড় হয়েছেন দেশের বিভিন্ন মফস্‌সল শহরে। এইচএসসির পর মনে হলো, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়বেন। তাই কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম কিনলেন। সুযোগও পেলেন। তবে বাংলায় নম্বর কম থাকায় পছন্দের বিষয়ে সুযোগ মিলল না। ছোটবেলায় টুকটাক নাচ শিখেছেন, বাড়িতে সাংস্কৃতিক আবহ ছিল। তাই ভর্তি হয়ে গেলেন থিয়েটার ও পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগে। কিন্তু বিধি বাম! মা–বাবার আদরে বড় হওয়া মেয়েটি অচেনা শহরে একলা পড়তে এসেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন। প্রায় ছয় মাসের বিরতি। শিক্ষাবর্ষ নষ্ট করবেন না বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে ভর্তি হলেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য বিভাগে।

আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ। অভিনেত্রীর সৌজন্যে

জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তত দিনে বদলে গেছে। বর্ণ ঠিক করলেন, সিনেমাটোগ্রাফার হবেন। ছবি তোলা শিখতে আলোকচিত্রী কৌশিক ইকবালের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করলেন। এরপরই ঘটল ঘটনাটি। একদিন নির্ধারিত মডেলের অনুপস্থিতিতে বর্ণকেই দাঁড় করিয়ে দেওয়া হলো ক্যামেরার সামনে। ছবিগুলো ভালো আসায় কৌশিক ইকবাল বিভিন্ন সংস্থায় পাঠালেন।

আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ। অভিনেত্রীর সৌজন্যে

এভাবেই বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবে কাজ শুরু। ক্যামেরার পেছন থেকে বর্ণ চলে এলেন সামনে। এরপর রেহানার কাস্টিং ডিরেক্টর ইয়াসির আল হক তাঁকে ছবিটির জন্য খুঁজে নেন। সেই ইয়াসিরের নির্মাণে অভিষেক হলো সাড়ে ষোলো দিয়ে, সেখানেও আছেন বর্ণ।

এরপর কী
পড়াশোনা পুরোপুরি শেষ হয়নি, থিসিস বাকি আছে। বর্ণ অবশ্য ঠিক করে ফেলেছেন, অভিনয়কেই পেশা হিসেবে নেবেন। থিয়েটার ও পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েও পড়তে পারেননি। অভিনয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও নেই। ভবিষ্যতে অভিনয়ের চ্যালেঞ্জ সামলাবেন কীভাবে? বর্ণ জানান, তিনি দেশি-বিদেশি প্রচুর সিনেমা ও সিরিজ দেখেন। এর মধ্যে কোনো চরিত্র পছন্দ হলে সেটা নিজে নিজে করার চেষ্টা করেন। এই যেমন উদাহরণ দিয়ে বললেন কোরীয় সিরিজ ‘রিপ্লাই ১৯৮৮’-এর কথা।

ইয়াসির আল হক ও আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ। অভিনেত্রীর সৌজন্যে

তিনি জানালেন, আশির দশকের শেষের দিকে কোরিয়ার সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে নির্মিত সিরিজটি তাঁর খুব পছন্দের। একটা ছোট পাড়ার গল্প নিয়ে সিরিজটি বর্ণের আরও ভালো লাগার কারণ, তিনি নিজে ছোট এক মফস্‌সলে বড় হয়েছেন। ‘রিপ্লাই ১৯৮৮’-এ মেজ বোনের চরিত্রে অভিনয় করা কো লি হে-রির ভক্ত বনে গেছেন তিনি।

আলাপের শেষের দিকে জানালেন, নাতাশা চরিত্রটি নিয়ে আলোচনা হওয়ার পর বেশ কয়েকটি চিত্রনাট্য পেয়েছেন তিনি। সব ঠিকঠাক মিলে গেলে এখন থেকে নিয়মিত অভিনয়ে পাওয়া যাবে তাঁকে।