বাসরঘরে অনাহূত অতিথি, এরপর...

‘ধুম ধাম’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

বীর পোদ্দার (প্রতীক গান্ধী) পশুচিকিৎসক, কোয়েল চাড্ডা (ইয়ামি গৌতম ধর) সাধারণ তরুণী, অন্তত তাঁর পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী। পারিবারিক আয়োজনে তাঁদের বিয়ে হয়। এক বিলাসবহুল হোটেলে আয়োজন করা হয় ফুলশয্যার। এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল, এরপরই শুরু হয় ঝামেলা। সে এক মহা গন্ডগোল বটে, বাসরঘরে হাজির হয় অনাহূত দুই অতিথি, বিয়ের রাত পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে। এরপর শুরু হয় ছোটা, সেই যে শুরু আর থামাথামি নেই, চলে সিনেমার শেষ পর্যন্ত।

একনজরে
সিনেমা: ‘ধুম ধাম’
ধরন: অ্যাকশন-কমেডি
পরিচালনা: ঋষভ শেঠ
অভিনয়: প্রতীক গান্ধী, ইয়ামি গৌতম ধর, আইজাজ খান, পবিত্র সরকার
স্ট্রিমিং: নেটফ্লিক্স
দৈর্ঘ্য: ১০৮ মিনিট

এ পর্যন্ত শুনে আপনার হয়তো বেশ সিরিয়াস বিষয় মনে হচ্ছে। ঘটনা যে সিরিয়াস, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই; তবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে হাস্যরসের মাধ্যমে। মুম্বাইয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় ডাকাতিতে যুক্ত হন পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা। ঘটনাচক্রে পুরো দৃশ্য রেকর্ড হয়ে যায় পাশের এক দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরায়। দোকানটি আবার বীরের মামার। তো মামা পুরো বিষয় সিসিটিভি ফুটেজে দেখে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে হাজির হন থানায়।

চেয়ারে বসে আছেন তিনি, পকেটে পেনড্রাইভ; যাতে সেই ঘটনার ফুটেজ আছে। কিন্তু মামা অবাক হয়ে দেখেন, সিসিটিভির ফুটেজে যাঁদের ডাকাতি করতে দেখা গেছে, তাঁরাই এ থানার পুলিশ সদস্য! এরপর কী হয়, তা বলে না দিলেও চলে, মামা রুদ্ধশ্বাসে ছুটতে শুরু করেন। পিছু নেয় পুলিশ, একপর্যায়ে মামা ধরা পড়েন। কিন্তু পেনড্রাইভ মেলে না! কোথায় গেল মহামূল্য সেই পেনড্রাইভ? সেই পেনড্রাইভের খোঁজেই বীর ও কোয়েলের বাসরঘরে হাজির হয় সেই অনাহূত অতিথি!

‘ধুম ধাম’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

এ–ই হলো ‘ধুম ধাম’-এর গল্প। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। সাসপেন্স সিনেমা, তবে পুরোটাই নির্মাতা ফুটিয়ে তুলেছেন কমেডির মোড়কে। তাই এ সিনেমায় টেনশনের চেয়ে কমেডি বেশি। সিনেমাটি মূলত বীর আর কোয়েলের না হওয়া বাসর রাতের গল্প। পারিবারিকভাবে তাঁদের বিয়ে হয়, কেউই কাউকে চেনেন না। কারও সঙ্গে কারও মিলও নেই। বীর রক্ষণশীল, কোয়েল উল্টো, একটা পর্যায়ে তাঁদের অমিল এতটাই প্রকট হয় যে বিচ্ছেদের কথাও ভাবতে শুরু করেন দুজন। কিন্তু রাত যত বাড়তে থাকে, বীর আর কোয়েলের সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়।

বিনোদনের জন্য ‘ধুম ধাম’ বেশ ভালো, একবার দেখার জন্য তো অবশ্যই। ‘ধুম ধাম’ কমেডি সিনেমা হিসেবেও ভালো। প্রতীক গান্ধী ও ইয়ামি গৌতম ধরের কমিক টাইমিংও দুর্দান্ত। প্রতীক যে কমেডি চরিত্র পেলে বলেকয়ে ছক্কা হাঁকান, সে প্রমাণ আগে রেখেছেন। তবে এ ধরনের সিনেমায় ইয়ামিকে খুব একটা দেখা যায় না, তাঁর প্রশংসা একটু বেশি প্রাপ্য।

‘ধুম ধাম’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

তবে ‘ধুম ধাম’ চলনসই থেকে খুব ভালো সিনেমা হয়ে ওঠেনি মোটাদাগে দুটি কারণে। প্রথমত, কমেডি কাজ করলেও এ ছবিতে রোমাঞ্চ ব্যাপারটা একেবারেই নেই। পুরো রাতের জার্নিতে আরও অনেক বেশি রোমাঞ্চ, টেনশন, ঘটনা যোগ করা যেত। এটাও না হয় মানা গেল, কিন্তু সিনেমাটিতে যেভাবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নিয়ে বার্তা দিয়েছেন নির্মাতা, সেটা ‘লেকচার’-এর মতো শুনিয়েছে। আজকাল সিনেমায় কেউ আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিশাল মনোলগ বলে ‘বার্তা’ দেওয়ার চেষ্টা করেন না।

বিনোদননির্ভর এ সিনেমায় জোরপূর্বক এ ‘বার্তা’ দেওয়ার চেষ্টা না করলেও পারতেন পরিচালক। তবে প্রতি সপ্তাহে যেসব একঘেয়ে থ্রিলার মুক্তি পাচ্ছে, সেগুলোর চেয়ে ‘ধুম ধাম’ খারাপ নয়।

আরও পড়ুন

ভারতে তুলনামূলকভাবে অ্যাকশন-কমেডি কম হয়েছে, এটা বিবেচনায় নিলে প্রযোজক আদিত্য ধর ও নির্মাতা ঋষভ শেঠকে ধন্যবাদ জানাতে হয়।

‘ধুম ধাম’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

তবে দুনিয়াজুড়ে যেসব অ্যাকশন-কমেডি সিনেমা জনপ্রিয়তা পেয়েছে, সব কটিতেই কিছু না কিছু এক্স ফ্যাক্টর ছিল, ‘ধুম ধাম’-এ সেটা নেই।